
মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে গত দুই বছর অমর একুশে বইমেলা ঐতিহ্যবাহী রীতি অনুসারে ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন শুরু করতে পারেনি বাংলা একাডেমি। তবে এবার পয়লা ফেব্রুয়ারি থেকেই মাসব্যাপী বইমেলা শুরু করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বইমেলাকে কেন্দ্র করে এ সময় দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনে বিশাল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চলে। বিভিন্ন খাতে অনেকের কর্মসংস্থান হয়। মেলায় বিক্রয়কর্মী ও বই সরবরাহকারী ছাড়া অনেক ধরনের মানুষের কাজের সুযোগ হয়। বই বিক্রিতে সহযোগিতার জন্য প্রায় সব স্টল–প্যাভিলিয়ন একাধিক বিক্রয়কর্মী নিয়ে থাকে। পড়াশোনার পাশাপাশি যাঁরা খণ্ডকালীন চাকরি করতে চান, তাঁদের জন্য চাকরির সুযোগ রয়েছে এসব স্টল–প্যাভিলিয়নে।
বইমেলা উপলক্ষে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত বিক্রয়কর্মী ও বই সরবরাহকারী হিসেবে লোক নিয়ে থাকে। ছেলে-মেয়ে উভয় প্রার্থীই নেওয়া হয়। আবেদনের জন্য ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি পাস চাওয়া হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও আবেদন করতে পারেন। ‘বাংলানামা’ প্রকাশনীর প্রধান নির্বাহী কবীর আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, যেহেতু কাজটি খণ্ডকালীন, তাই প্রার্থীদের কাজের আগ্রহ আছে কি না, সেটি আগে যাচাই করা হয়। অনেকে শখের বশে আসেন, কিন্তু পরিশ্রম করতে চান না। তাই যাঁদের পরিশ্রম করার মানসিকতা আছে, তাঁরা এক মাসে কাজ করে ভালো আয় করার এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন।
কয়েকটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিক্রয়কর্মী নিয়োগের জন্য পত্রপত্রিকায় তেমন একটা বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় না। প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বইমেলায় কাজের জন্য প্রার্থীদের কাছ থেকে সিভি চাওয়া হয়। এ ছাড়া ব্যক্তিগত যোগাযোগ ও প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট বইয়ের দোকান থেকেও সিভি নেওয়া হয়।
বইমেলা উপলক্ষে ৩০ জন বিক্রয়কর্মী নেবে প্রথমা প্রকাশন। ইতিমধ্যে সিভি নেওয়া শুরু হয়েছে। প্রথমা প্রকাশনের ব্যবস্থাপক মো. জাকির হোসেন বলেন, প্রথমা প্রকাশনের কারওয়ান বাজার, আজিজ সুপার মার্কেট, বাংলা বাজার ও ইউনাইটেড সিটির শেফস টেবিল কোর্টসাইডের প্রথমা বুক ক্যাফেতে সিভি নেওয়া হচ্ছে। শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি যাঁদের উপস্থিত বুদ্ধি, উপস্থাপনার কৌশল, যোগাযোগের দক্ষতা ও হিসাবজ্ঞান ভালো থাকে, চাকরির ক্ষেত্রে তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
গত বছর বইমেলায় বিক্রয়কর্মী হিসেবে চাকরি করেছেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আরিফুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বইমেলার সময়সূচি অনুযায়ী কাজের সময় নির্ধারিত হয়। মেলা বেলা তিনটা থেকে শুরু হওয়ায় কাজও শুরু হয় বিকেল থেকেই। তবে মেলা শুরুর কিছু সময় আগে বিক্রয়কর্মীদের স্টলে যেতে হয়। কারণ, স্টলের প্রস্তুতি নিতে হয়। মেলা রাতে যতক্ষণ চলে, বিক্রয়কর্মীদেরও ততক্ষণ থাকতে হয়। ছুটির দিনগুলোয় মেলা বেলা ১১টা থেকে শুরু হওয়ায় ডিউটিও শুরু হয় ১১টা থেকে। যেহেতু মেলা টানা এক মাস চলে, তাই সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়াই কাজ করতে হয়।
প্রতিষ্ঠানভেদে বেতন নির্ভর করে। একেক প্রতিষ্ঠানের বেতন একেক রকম। গত বছর বইমেলায় বিক্রয়কর্মী হিসেবে চাকরি করা বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত ১২-১৫ হাজার টাকা বেতন দিয়ে থাকে। তবে যেগুলো বড় প্রতিষ্ঠান, সেগুলোতে বেতন কিছুটা বেশি থাকে।
বেতনের বাইরে খাবার ও টি-শার্ট দেওয়া হয়। ছুটির দিনে মেলা যেহেতু সকাল থেকে শুরু হয়, তাই সকাল, দুপুর ও বিকেলের খাবার দেওয়া হয়। অন্য দিনগুলোয় শুধু বিকেলের নাশতা দেওয়া হয়।
‘বাংলানামা’ প্রকাশনীর প্রধান নির্বাহী কবীর আলমগীর বলেন, ‘বইমেলায় কাজের মাধ্যমে একজন শিক্ষানবিশ তরুণ বা তরুণী নানা বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করে থাকেন। মার্কেটিং ও সৃজনশীলতার চর্চা দুই দিক থেকেই ওই কর্মী লাভবান হওয়ার সুযোগ পান। মোট কথা, প্রকাশনাশিল্প, প্রিন্টিং, বিপণন প্রভৃতি ক্ষেত্রে তাঁর এই দক্ষতা ভবিষ্যতে দারুণ সহায়ক ভূমিকা পালন করে।’