বিয়ের পর সন্তান লালন–পালনের কারণে নারীদের শ্রমবাজার থেকে সরে যাওয়ার প্রবণতা কমছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। দেশটিতে ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে ১৮ বছরের নিচে সন্তান থাকা বিবাহিত নারীদের কর্মসংস্থানের হার সর্বোচ্চ হয়েছে। একই সময়ে ক্যারিয়ারবিরতি (চাকরি ছেড়ে দেওয়া) নেওয়া নারীর সংখ্যাও নেমেছে সর্বনিম্ন পর্যায়ে।
দেশটির জাতীয় ডেটা অফিস ২০ নভেম্বর প্রকাশিত এক জরিপে জানায়, চলতি বছরের প্রথমার্ধে নাবালক সন্তানসহ ১৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সী বিবাহিত নারীদের ক্যারিয়ারবিরতির হার ২১ দশমিক ৩ শতাংশ, যা গত বছরের তুলনায় ১ দশমিক ৪ শতাংশ কম। ২০১৪ সালে এই পরিসংখ্যান অর্থাৎ তথ্য সংগ্রহ শুরুর পর এটি সর্বনিম্ন হার। চাকরি ছাড়ার কারণ হিসেবে বিবাহ, গর্ভধারণ, সন্তান জন্ম, শিশুর যত্নসহ পরিবারকেন্দ্রিক বিষয়গুলো ছিল।
সন্তান থাকুক বা না থাকুক—সব বিবাহিত নারী মিলিয়ে ক্যারিয়ারবিরতিতে থাকা নারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৫ হাজার, যা গত বছরের তুলনায় ১ লাখ কম। এ ক্ষেত্রে হার কমে ১৪ দশমিক ৯ শতাংশে নেমেছে, যা ২০১৪ সালের পর সর্বনিম্ন।
৪০ থেকে ৪৪ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে ক্যারিয়ার থেকে বিরতির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি—৩ লাখ ৫ হাজার। এরপর রয়েছে ৩৫ থেকে ৩৯ বছর বয়সী (২ লাখ ৩৪ হাজার) ও ৪৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সীরা (১ লাখ ৯৬ হাজার)। তবে হার হিসাবে সবচেয়ে বেশি চাকরি থেকে বিরতি দেখা যায়, ৩০ থেকে ৩৪ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে—২১ দশমিক ৮ শতাংশ। এই বয়সে সন্তান জন্ম ও লালন–পালনের চাপ বেশি থাকে।
বিবাহিত নারীদের সামগ্রিক কর্মসংস্থানের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৭ দশমিক ৩ শতাংশ। আর ১৮ বছরের নিচে সন্তান থাকা নারীদের কর্মসংস্থানের হার ৬৪ দশমিক ৩ শতাংশ, যা গত বছরের তুলনায় ১ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি। অর্থাৎ নাবালক সন্তান থাকা ১০ নারীর মধ্যে প্রায় ছয়জনই এখন কর্মজীবী।
শিশুর বয়স যা–ই হোক না কেন, সব শ্রেণিতেই কর্মসংস্থানের হার বেড়েছে। বিশেষ করে ছয় বছর বা তার কম বয়সী সন্তানের মায়েদের কর্মসংস্থানের হার ২ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৫৭ দশমিক ৭ শতাংশ।
৭ থেকে ১২ বছর বয়সী সন্তানের মায়েদের মধ্যে এই হার বেড়েছে ১ দশমিক ৮ শতাংশ, আর ১৩ থেকে ১৭ বছর বয়সী সন্তানের মায়েদের ক্ষেত্রে প্রথমবারের মতো ৭০ শতাংশ অতিক্রম করেছে।
ছয় বছর বা তার কম বয়সী সন্তানের মায়েদের মধ্যে ক্যারিয়ারবিরতির হার সবচেয়ে বেশি—৩১ দশমিক ৬ শতাংশ। ৭ থেকে ১২ বছর বয়সী সন্তানের ক্ষেত্রে এই হার ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ এবং ১৩ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে ১১ দশমিক ৮ শতাংশ।
দক্ষিণ কোরিয়ার ডেটা অফিসের মতে, ‘শিশু ও টডলার বয়সে মায়ের শ্রমবাজার ছাড়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।’
চাকরিতে বিরতি নেওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ এখনো শিশু লালন–পালন, শতাংশের হিসাবে ৪৪ দশমিক ৩ শতাংশ। এরপর রয়েছে বিয়ে (২৪ দশমিক ২ শতাংশ), গর্ভধারণ ও সন্তান জন্ম (২২ দশমিক ১ শতাংশ) ও পরিবারের সদস্যের সেবাযত্ন (৫ দশমিক ১ শতাংশ)। বিশেষত ৩০ থেকে ৩৯ বছর বয়সী নারীদের ক্ষেত্রে শিশুর যত্ন (৪৮ দশমিক ৫ শতাংশ) ও গর্ভধারণ–সন্তান জন্ম (২৭ দশমিক ৫ শতাংশ) প্রধান কারণ হিসেবে পাওয়া গেছে।
এদিকে পিতৃত্বকালীন ছুটিতে পুরুষের অংশগ্রহণও বাড়ছে। কর্মসংস্থান ও শ্রম মন্ত্রণালয় জানায়, জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৫২ হাজার ২৭৯ পুরুষ পিতৃত্বকালীন ভাতা নিয়েছেন, যা মোট ভাতা প্রাপ্তির ৩৬ দশমিক ৮ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নারীর কাজ ধরে রাখার প্রবণতা বাড়লেও পরিবারে যত্নের দায়িত্ব ভারসাম্যপূর্ণ না হওয়া এখনো বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে আছে।
তথ্যসূত্র: বিজনেস কোরিয়া