এআই যেভাবে ২০২৬ সালে ৮৯% চাকরিতে প্রভাব ফেলবে

বিশ্বজুড়ে কর্মক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে। এটি শুধু যন্ত্র বা সফটওয়্যারের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নয়, মানুষের কাজের ধরন, নেতৃত্ব, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং নতুন দক্ষতা শেখার পদ্ধতিতেও বড় ধরনের পরিবর্তন আনছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সিএনবিসির শীর্ষ মানবসম্পদ কর্মকর্তাদের জরিপে দেখা গেছে, আগামী বছরে প্রায় ৮৯ শতাংশ চাকরিতে এআইয়ের প্রভাব পড়বে।

চাকরিতে এআইয়ের উত্থান

জরিপে অংশ নেওয়া কর্মকর্তাদের মতে, এআই চাকরির অর্ধেকের বেশি ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে। তবে অনেক সংস্থা এখনো এআইয়ের সম্পূর্ণ ব্যবহার শুরু করেনি। শীর্ষ কর্মকর্তাদের একাংশ বলছেন, এখনো পুরোপুরি বলা সম্ভব নয়, কতটা চাকরিতে প্রকৃত প্রভাব পড়বে। তবে চাকরির ধরন ও কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসার এ আশঙ্কা রয়েছে। সংস্থাগুলো বিভিন্ন বিভাগের কর্মীদের কাজের ধরন পুনর্বিন্যাস করতে শুরু করেছে। উদাহরণস্বরূপ, যেসব কাজ পুনরাবৃত্তিমূলক, তা এখন এআই দ্বারা সম্পন্ন হচ্ছে এবং কর্মীরা বেশি সৃজনশীল ও কৌশলগত কাজে মনোনিবেশ করতে পারছেন।

দক্ষতার ভিত্তিতে নতুন নিয়োগ

চাকরিক্ষেত্রে নিয়োগের প্রক্রিয়া বদলাচ্ছে। অতীতের মতো শুধু শিক্ষাগত যোগ্যতা বা ডিগ্রির ওপর নির্ভর করা হবে না। জরিপে অংশ নেওয়া এক কর্মকর্তা বলেন, ভবিষ্যতে চাকরি প্রাপ্তি শুধু ডিগ্রি বা শিক্ষাগত যোগ্যতার ওপর নির্ভর করবে না। এআই-সহায়ক দক্ষতা অনুযায়ী নিয়োগ আরও বৃদ্ধি পাবে। বিশ্বজুড়ে এআইয়ের মাধ্যমে কর্মীদের সৃজনশীলতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি শুধু সময় বাঁচায় না, বরং নতুন ধরনের উদ্ভাবন বাস্তবায়নের সুযোগ দেয়। তথ্যপ্রযুক্তি, মিডিয়া, ব্যাংকিং, কল সেন্টার ও তৈরি পোশাক খাতগুলোতে এআইয়ের প্রয়োগ আগের তুলনায় দ্রুততর হচ্ছে। প্রতিষ্ঠান যদি সঠিকভাবে এআই ব্যবহার করে, তাহলে কর্মীদের কাজের চাপ কমে এবং সৃজনশীল কাজের জন্য আরও সময় বের করা সম্ভব।

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এআইয়ের প্রভাব

সিএনবিসির গবেষণা অনুযায়ী, এআই ব্যবহার করলে প্রতি সপ্তাহে গড়ে ৭ দশমিক ৫ ঘণ্টা সময় বাঁচানো সম্ভব। অর্থাৎ কাজের মান উন্নত হলেও সময় কমানো যায়। এটি বিশ্বজুড়ে অফিস, কল সেন্টার ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিশেষভাবে কার্যকর হতে পারে। তবে জরিপে দেখা গেছে, আগামী বছর কিছু সংস্থা কর্মী ছাঁটাই করতে পারে। তবে এই ছাঁটাই মূলত সংস্থার খরচ নিয়ন্ত্রণের কারণে হবে, দক্ষতা বৃদ্ধির কারণে নয়। অর্থাৎ এআই দক্ষতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক হলেও এটি সরাসরি চাকরি হ্রাসের কারণ নয়। এ ছাড়া এআই উদ্ভাবন ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সংস্থাগুলোকে আরও কার্যকর করে তুলছে। জরিপে অংশ নেওয়া কর্মকর্তাদের ৬১ শতাংশ মনে করছেন, এআই ব্যবহার সংস্থাকে আরও দক্ষ ও উৎপাদনশীল করেছে। ৭৮ শতাংশ মনে করছেন, এআই তাঁদের সংস্থাকে উদ্ভাবনী ক্ষেত্রে শক্তিশালী করেছে।

বাংলাদেশের প্রস্তুতি ও চ্যালেঞ্জ

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রযুক্তি কেবল প্রতিস্থাপন নয়, বরং মানুষের কাজকে আরও সমৃদ্ধ করার উপায়। বাংলাদেশেও ধীরে ধীরে চাকরির বাজারে এ ধরনের পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে। তবে দেশের চাকরিপ্রার্থী ও প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জ। সরকার ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে নীতি, প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে প্রস্তুতি নিতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, তথ্যপ্রযুক্তি, কল সেন্টার ও তৈরি পোশাক খাতে কর্মীদের এআই ব্যবহার করে দক্ষতা বৃদ্ধি ও উদ্ভাবন শেখানো যেতে পারে। নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি প্রযুক্তি ব্যবহার, সমস্যা সমাধান ও সৃজনশীলতার মানদণ্ডও গুরুত্ব পাবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের প্রস্তুতি কর্মীদের ভবিষ্যৎ কর্মজীবনে স্থায়িত্ব দেবে এবং এআইয়ের পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সাহায্য করবে। ধাপে ধাপে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিশ্বজুড়ে এবং বাংলাদেশে চাকরির মানচিত্রকে বদলাচ্ছে, নতুন দক্ষতা ও উদ্ভাবনের পথ খুলছে। (সিএনবিসি অবলম্বনে)