চাকরি আছে, তবু মাসের শেষে টান পড়ে। মুদ্রাস্ফীতি, বাসাভাড়া, সন্তানের টিউশন ফি—সব মিলিয়ে অনেকেরই মূল আয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই অনেক তরুণ-তরুণী, এমনকি চাকরিজীবী মানুষও খুঁজছেন অতিরিক্ত আয়ের পথ। আগে যেটিকে ‘টিউশনি’ বা ‘ছোটখাটো কাজ’ বলা হতো, এখন সেটাই হচ্ছে ‘পার্শ্বআয়’ বা বাড়তি উপার্জনের মাধ্যম। আর এই পথ এখন শুধু সামান্য আয়ে সীমাবদ্ধ নয়, অনেকেই এখান থেকে আয় করছেন মাসে লাখ টাকার বেশি।
লেন্ডিংট্রির সাম্প্রতিক জরিপ বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের ৪০ শতাংশ মানুষের পার্শ্বকাজ রয়েছে এবং ৬১ শতাংশ মনে করেন, এই অতিরিক্ত আয় ছাড়া জীবন চলে না। বাংলাদেশেও একই প্রবণতা বাড়ছে। তবে এখানে ‘অতিরিক্ত আয়’ নয়, বরং ‘অতিরিক্ত নিরাপত্তা ও স্বপ্নপূরণের পথ’ হিসেবেই পার্শ্বকাজকে দেখছেন তরুণেরা।
অনলাইনে লোগো, পোস্টার বা সোশ্যাল মিডিয়ার ডিজাইন বানানো—এসব কাজ করে মাসে ৩০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার বেশি আয় করছেন অনেক ফ্রিল্যান্সার।
কোথায় কাজ মেলে: Fiverr, Upwork—এই সাইটগুলোতে বিদেশি ক্লায়েন্ট থাকে।
অনেকে মোবাইল দিয়েই শুরু করেন, পরে ধীরে ধীরে ল্যাপটপ, ট্যাব কিনে পেশাগতভাবে এগিয়ে যান।
যদি আপনি ইংরেজি শেখাতে পারেন, ভিডিও বানাতে পারেন, কিংবা ফটোগ্রাফি জানেন, তবে নিজের দক্ষতা থেকে কোর্স বা ই-বুক বানিয়ে অনলাইনে বিক্রি করতে পারেন।
মাসিক আয়: ২০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত।
প্ল্যাটফর্ম: Udemy, Gumroad
একবার ভালো কনটেন্ট তৈরি হলে তা থেকে মাসের পর মাস আয় আসে, মানে ‘ঘুমিয়েও টাকা জমে’।
ইউটিউবে ভিডিও বানাচ্ছেন, ফেসবুক পেজ চালাচ্ছেন, কিংবা ব্র্যান্ডের প্রোডাক্ট প্রচার করছেন—এসবই এখন আয় করার পথ।
মাসিক আয়: ২৫ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার বেশি।
অনেকে ভিডিও বানিয়ে বিজ্ঞাপন থেকে আয় করেন, কেউ আবার ব্র্যান্ডের প্রচারণা করে টাকা পান।
মফস্সলের তরুণেরা পর্যন্ত এখন ফোনে ভিডিও বানিয়ে লাখপতি হচ্ছেন।
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট বা অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট জানলে দেশি-বিদেশি ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে কাজ পাওয়া খুব কঠিন নয়।
মাসিক আয়: ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত।
কোথায় কাজ পাওয়া যায়—Upwork, LinkedIn
অনেক ইঞ্জিনিয়ার ও সাধারণ গ্র্যাজুয়েটও ইউটিউব থেকে শিখে এই পথে আয় করছেন।
আপনি যদি টি-শার্ট, মগ বা স্টিকার ডিজাইন করতে পারেন, তাহলে অনলাইনে ডিজাইন আপলোড করলেই বিক্রি হতে পারে।
মাসিক আয়: ১০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
এখন চ্যাটজিপিটির মতো এআই টুল দিয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তৈরি হচ্ছে বইয়ের খসড়া, ভিডিও স্ক্রিপ্ট বা প্রেজেন্টেশন। এআই এখন শুধু সহকারী নয়, অনেকের আয় তৈরির হাতিয়ার। এই বাস্তবতায় পার্শ্ব–আয় হতে পারে আপনার ক্যারিয়ার বদলের পথও। কেউ চাকরির পাশাপাশি শুরু করতে পারেন। শুরুটা হয়তো ছোট, কিন্তু ধারাবাহিকভাবে করলে এই বাড়তি উপার্জনই একদিন হতে পারে আপনার সবচেয়ে বড় শক্তি।