অধ্যায়-৫
প্রিয় পরীক্ষার্থী, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ের অধ্যায়-৫ থেকে একটি সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো।
পাশের চিত্রটি দেখে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. বাংলাদেশের ভূখণ্ড কোন দিকে ঢালু?
খ. ভূ-প্রকৃতির গঠন কীভাবে জনসংখ্যার সঙ্গে সম্পর্কিত?
গ. চিত্রে প্রদর্শিত ‘A’ অঞ্চলটি কোন ধরনের প্রাকৃতিক অঞ্চল? বর্ণনা দাও।
ঘ. ‘B’ চিহ্নিত স্থানও কি একই ধরনের ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের? তোমার উত্তরের পক্ষে মতামত দাও।
উত্তর: ক. বাংলাদেশের ভূখণ্ড উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে ক্রমেই ঢালু।
উত্তর: খ. ভূপ্রকৃতির গঠনের সঙ্গে জনসংখ্যার ঘনত্বের একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
যেসব অঞ্চলে মানুষের জীবনযাত্রা সহজ, সাধারণত এসব স্থানে মানুষের জনবসতি বেশি দেখা যায়। তাই ভূপ্রকৃতির গঠন বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী যেসব স্থান মানুষের বসবাসের জন্য কষ্টসাধ্য, সেসব স্থানে জনবসতির ঘনত্ব কম। যেমন: বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি বা সুন্দরবন অঞ্চলে জীবনযাপনের উপকরণগুলো সহজে পাওয়া যায় না বলে এসব স্থানে জনবসতি কম।
উত্তর: গ. প্রদর্শিত বাংলাদেশের আংশিক মানচিত্রে ‘A’ অঞ্চলটি দ্বারা টারশিয়ারি যুগের ভূপ্রাকৃতিক অঞ্চলটিকে নির্দেশ করে।
বাংলাদেশের ভূপ্রাকৃতিক অঞ্চলকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে।
১. টারশিয়ারি যুগের পাহাড়সমূহ
২. প্লাইস্টোসিন কালের সোপানসমূহ
৩. সাম্প্রতিক কালের প্লাবন সমভূমি
বাংলাদেশের মোট ভূখণ্ডের প্রায় ১২ শতাংশ এলাকা নিয়ে টারশিয়ারি যুগের পাহাড়সমূহ গঠিত। হিমালয় পর্বত উত্থিত হওয়ার সময় এসব পাহাড় সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের দেশের এসব পাহাড়ি এলাকাকে দুটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে।
যেমন: ১. দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়সমূহ ২. উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়সমূহ
আংশিক মানচিত্রে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়সমূহের অবস্থান দেখানো হয়েছে। মূলত উক্ত অঞ্চলে রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলার পূর্বাঞ্চল অন্তর্ভুক্ত। এ অঞ্চলের পাহাড়সমূহের গড় উচ্চতা ৬১০ মিটার এবং বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গের অবস্থানও ওই অঞ্চলে। সর্বোচ্চ শৃঙ্গটি হলো তাজিংডং (বিজয়), যার উচ্চতা ১২৩১ মিটার। ওই অঞ্চলের ভূমির উপাদানগুলোর মধ্যে বেলেপাথর, কর্দম ও শেলপাথর অন্যতম।
উত্তর: ঘ. বাংলাদেশের আংশিক মানচিত্রে প্রদর্শিত ‘B’ অঞ্চলটি কুমিল্লার ‘লালমাই’। ‘লালমাই পাহাড়ি’ এলাকা আর টারশিয়ারি যুগের পাহাড়সমূহ একই বৈশিষ্ট্যের নয়।
লালমাই পাহাড়ি এলাকা প্লাইস্টোসিন কালের সোপানসমূহ বা চত্বরভূমি অঞ্চলের। এ ধরনের ভূপ্রাকৃতিক অঞ্চলের বৈশিষ্ট্যও একটু স্বতন্ত্র। আজ থেকে প্রায় ২৫ হাজার বছর আগের সময়কে বলা হয় প্লাইস্টোসিন কাল। ধারণা করা হয়, আন্তবরফগলা পানিতে প্লাবনের সৃষ্টি হয়ে এ সময়ে যে বিশেষ ধরনের ভূমি গঠিত হয়, সেগুলোই আজকের প্লাইস্টোসিন কালের চত্বরভূমি। প্লাইস্টোসিন কালের সোপানসমূহ বাংলাদেশের ৩টি অঞ্চলে অবস্থান করছে।
১. রাজশাহী অঞ্চলের ‘বরেন্দ্রভূমি’
২. ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল অঞ্চলের ‘মধুপুর ও ভাওয়ালের গড়’
৩. কুমিল্লার ‘লালমাই পাহাড়’
এসব অঞ্চলের মাটির সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো লালচে ও ধূসর বর্ণের। কুমিল্লা শহর থেকে প্রায় ৮ কি.মি. পশ্চিমে ৩৪ বর্গকিলোমিটারজুড়ে লালমাই পাহাড়ি অঞ্চল। এখানকার পাহাড়গুলোর গড় উচ্চতা ২১ মিটার। এ অঞ্চলের মাটির রং লালচে এবং মাটি নুড়ি, বালু ও কংকর মিশ্রিত।
বৈশিষ্ট্যগত দিক থেকে টারশিয়ারি যুগের পাহাড়সমূহ এবং প্লাইস্টোসিন কালের সোপানসমূহ একই সময়ের নয়। অন্যদিকে ভূমির গঠনেও রয়েছে বেশ কিছু পার্থক্য। অঞ্চলগুলোর অবস্থান থেকে অনুধাবন করা যায়, উভয়ের বৈশিষ্ট্যগত অমিল রয়েছে। তাই টারশিয়ারি যুগের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে প্লাইস্টোসিন কালের কুমিল্লার লালমাই পাহাড়ি এলাকার বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্য দৃশ্যমান।
শিক্ষক, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল, ঢাকা