
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুল আয়োজন করে ‘ইসলামি স্টাডিজ প্রজেক্ট এক্সিবিশন’। যা ইসলামি শিক্ষাকে আধুনিক গবেষণা, বিশ্লেষণ এবং সৃজনশীলতার সঙ্গে যুক্ত করে শিক্ষাক্ষেত্রে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। গত শনিবার রাজধানীর উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে আয়োজিত হয় এই প্রদর্শনী। স্কুলের চারটি ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা এ আয়োজনে অংশ নেয়। এক হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী নিজেদের হাতে তৈরি প্রজেক্ট, থ্রিডি মডেল, পোস্টার, গবেষণাপত্র ও ইন্টারঅ্যাকটিভ উপস্থাপনার মাধ্যমে ইসলামি জ্ঞানের নানা দিক তুলে ধরে।
প্রদর্শনীটির মূল উদ্দেশ্য ছিল ইসলামি শিক্ষাকে গবেষণামূলক ও প্রাসঙ্গিকভাবে শিশুদের চিন্তা, বোধ ও অনুশীলনে রূপান্তর করা। এর মাধ্যমে উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুল তুলে ধরেছে ইসলামিক স্টাডিজ কেবল ধর্মীয় পাঠ নয় বরং এটি হতে পারে অনুসন্ধান, যুক্তি ও সৃজনশীলতার একটি ক্ষেত্র।
বিভিন্ন ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থাপনা
আর্লি স্কুল শাখার শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস–১–এ প্রদর্শন করেছে মহান আল্লাহর মহিমান্বিত সৃষ্টিসমূহ, পবিত্রতার ধাপ (একটি থ্রিডি অজু অ্যাডভেঞ্চার) এবং আমি একজন মুসলিম (আমার বিশ্বাস, আমার পরিচয়)। যেখানে তারা ইসলামি পরিচয় ও পবিত্রতার ধারণাকে রং ও মডেলের মাধ্যমে জীবন্ত করে তোলে।
ক্যাম্পাস–৩–এ আর্লি স্কুল শাখার শিক্ষার্থীরা উপস্থাপন করে রাব্বি জিদনি ইলমা, ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ এবং ঈদ উদ্যাপন ও দোয়ার প্রতিদান। যেখানে ইমান, নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাতের মৌলিক ধারণাগুলো সহজভাবে ব্যাখ্যা করা হয়।
জুনিয়র স্কুল শাখার শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস–১–এ প্রদর্শন করেছে রাব্বি জিদনি ইলমা, ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ এবং ঈদ উদ্যাপন ও দোয়ার প্রতিদান। এই ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা ইসলামের মৌলিক দিক যেমন ঈমান, নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাতকে সহজ ও সৃজনশীল উপায়ে তুলে ধরে।
ক্যাম্পাস–২-এ জুনিয়র স্কুল শাখার শিক্ষার্থীরা প্রদর্শন করেছে কাসাসুল আম্বিয়া (নবীদের গল্পসমূহ), আসহাবে কাহফ (গুহাবাসী সাত যুবক), আল্লাহর নিদর্শন (দুটি সমুদ্র পাশাপাশি প্রবাহিত), বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া: এক আল্লাহ-নির্দেশিত কারখানা, অস্তিত্বের সন্ধ্যা: সময়ের শপথ ও মানবজীবনের ধাপ, উজ্জ্বল হৃদয় বনাম অন্ধকার হৃদয়। আশারায়ে মুবাশশারা (জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশ সাহাবি), আসমাউল হুসনা (আল্লাহর ৯৯টি সুন্দর নাম) এবং বিদায় হজের খুতবা (রাসুলুল্লাহ সা.–এর শেষ উপদেশ)। এখানে শিক্ষার্থীরা ইসলামি নৈতিকতা, আধ্যাত্মিক শুদ্ধি এবং সমাজকল্যাণে জাকাতের ভূমিকা সম্পর্কে চমৎকার উপস্থাপনা করেছে।
সিনিয়র শাখার শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস–১–এ প্রদর্শন করে হজরত মুসা (আ.) ও জাদুকরদের গল্প, সুরা আল-ফিল, নবী মুসা (আ.)-এর জন্ম ও উদ্ধার, জমজম কূপের ইতিহাস, অত্যাচারের মুখে ধৈর্য ও প্রজ্ঞা, লুকমান (আ.)-এর হিকমাহ, এক পিতার অটল ইমান এবং নবী মুসা (আ.) ও খিজির (আ.)-এর গল্প। সিনিয়র শিক্ষার্থীরা পবিত্র কোরআনের ঐতিহাসিক কাহিনিগুলোকে গভীর বিশ্লেষণ, চিত্রায়ণ ও যুক্তিনির্ভর উপস্থাপনার মাধ্যমে জীবন্ত করে তোলে।
প্রদর্শনীটির সার্বিক সমন্বয় করেন উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের জুনিয়র শাখার ভাইস প্রিন্সিপাল সৈয়দা মিরা তাবাসসুম। সহযোগিতায় ছিলেন সিনিয়র শাখার ভাইস প্রিন্সিপাল পারভীন কাদের, আর্লি ইয়ার্স অ্যান্ড জুনিয়র স্কুলের ভাইস প্রিন্সিপাল মহসিনা শারমিন নিশাত, ভাইস প্রিন্সিপাল সাইদা নাঈম এবং ইন-চার্জ শামীমা ইয়াসমিন।
আয়োজনটি সম্পর্কে সৈয়দা মিরা তাবাসসুম বলেন, ‘এই প্রদর্শনীর লক্ষ্য ছিল শিক্ষার্থীদের শেখানো যে ইসলাম কেবল নামাজ, রোজা বা দোয়া নয়, বরং এটি জীবনের প্রতিটি দিকের সঠিক দিকনির্দেশনা। ইসলাম গবেষণার, চিন্তার ও অনুসন্ধানের ধর্ম—যা মানুষকে জ্ঞানের পথে আহ্বান জানায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ইসলাম শিশুদের শেখায় মানবতা, সহানুভূতি ও দায়িত্ববোধ।’
আরবি ও আল-কুরআন কো–অর্ডিনেটর মাওলানা মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা পবিত্র কোরআনের আয়াত ও নবীদের কাহিনি শুধু মুখস্থ করছে না, বরং চিন্তা করছে, প্রশ্ন করছে, ব্যাখ্যা করছে। যা ইসলামি শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য। এই প্রদর্শনীর প্রতিটি প্রকল্পে শিক্ষার্থীদের প্রাণবন্ত কার্যক্রম দেখেছি। কেউ মহান আল্লাহর সৃষ্টিজগৎ নিয়ে গবেষণা করছে, কেউ নবীদের জীবনের কাহিনি চিত্রায়িত করছে, কেউ ইসলামি আদর্শকে আধুনিক বিজ্ঞানের সঙ্গে যুক্ত করছে, কেউ আবার সমাজকল্যাণের দৃষ্টিকোণ থেকে জাকাত, রোজা ও নামাজের প্রভাব তুলে ধরছে।’
উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও হেড অব স্কুল আবদুল্লাহ জামান বলেন, ‘আমরা জানি, ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। যা শুধু ইবাদতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং ন্যায়, শিক্ষা, বিজ্ঞান, নৈতিকতা ও মানবকল্যাণের প্রতিটি ক্ষেত্রে পথনির্দেশনা প্রদান করে। এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সেই চিরন্তন বার্তাকে সবার সামনে তুলে ধরেছে। তাই উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ইসলামি স্টাডিজকে ইংরেজি, গণিত বা বিজ্ঞানের মতো গবেষণাভিত্তিক শিক্ষণ, বিশ্লেষণমূলক কার্যক্রম এবং সৃজনশীল উপস্থাপনার মাধ্যমে পড়ানো হয়। আমাদের পাঠ্যক্রমে ধর্মীয় শিক্ষা ও আধুনিক শিক্ষণপদ্ধতির মেলবন্ধন ঘটানো হয়েছে, যাতে শিক্ষার্থীরা ইসলামকে শুধু মুখস্থ করে না, বরং বুঝে, চিন্তা করে, প্রশ্ন করে এবং তা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে শেখে।’
অভিভাবক, শিক্ষক ও অতিথিদের মতে এ ধরনের প্রদর্শনী শিশুদের চিন্তাশক্তি, নেতৃত্বগুণ, আত্মবিশ্বাস ও আধ্যাত্মিক জাগরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। অভিভাবকদের মতে, শিক্ষাঙ্গণে তাঁদের সন্তানদের এমনভাবে ইসলামি শিক্ষার সঙ্গে জড়িত হওয়ার সুযোগ খুব বেশি হয় না। এ রকম ব্যতিক্রমী উদ্যোগের ফলে তারা এখন বিষয়গুলো বুঝে এবং সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে।