
মোট পাঠ্যবই ২১ কোটি ৪৩ লাখ ২৪ হাজার ২৭৪ কপি।
সরবরাহ-পূর্ব পরিদর্শন হয়েছে ৯ কোটি ৯ লাখ ৬০ হাজার ৪০৫ কপি।
সরবরাহ হয়েছে ৭ কোটি ৮ লাখ ৭২ হাজার ২০৭ কপি।
(হিসাব ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত)
সূত্র : এনসিটিবি
দুই সপ্তাহ পর শুরু হচ্ছে নতুন শিক্ষাবর্ষ। তবে মাধ্যমিক স্তরের প্রায় ৬৭ শতাংশ পাঠ্যবই এখনো সরবরাহ করতে পারেনি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এ কারণে নতুন শিক্ষাবর্ষের শুরুতে মাধ্যমিকের সব শিক্ষার্থী সব পাঠ্যবই হাতে পাবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এমন শঙ্কার কথা বলছেন এনসিটিবির কর্মকর্তা ও পাঠ্যবই ছাপার সঙ্গে যুক্ত মুদ্রণকারীরাও। বিশেষ করে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই নিয়ে সংকট বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অন্যদিকে প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই নিয়ে কোনো সংকট নেই। এনসিটিবির কর্মকর্তারা বলছেন, বছরের শুরুতেই প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা সব পাঠ্যবই পাবে।
বিদায়ী বছরেও প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যের পাঠ্যবই পৌঁছে দিতে বেশি দেরি করেছিল এনসিটিবি। শিক্ষাবর্ষ শুরুর প্রায় তিন মাস পর সব শিক্ষার্থীর জন্য সব বিষয়ের পাঠ্যবই সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছিল। এতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ক্ষতি হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনসিটিবির একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক স্তরের প্রায় শতভাগ বই ইতিমধ্যে সরবরাহ হয়ে গেছে। তবে তাঁর ধারণা, জানুয়ারিতেও মাধ্যমিক স্তরের সব বই সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। একই ধরনের আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন একজন মুদ্রণকারী।
এনসিটিবির কর্মকর্তারা বলছেন, বিদায়ী বছরের অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে এবার পাঠ্যবই ছাপার প্রক্রিয়া আগেভাগেই শুরু করা হয়েছিল। নভেম্বরের মধ্যে সব পাঠ্যবই ছাপিয়ে মাঠপর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যও নির্ধারণ করা হয়। এ জন্য দরপত্রের প্রক্রিয়া প্রায় শেষ করে মূল্যায়নের কাজও সম্পন্ন করা হয়েছিল। তবে শেষ সময়ে নভেম্বরে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপার দরপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ফলে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করে এখন বই ছাপানো হচ্ছে। এর পাশাপাশি ছাপার কাজে মন্ত্রণালয় ও ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অনুমোদন পেতেও দেরি হয়েছে। পরে ছাপার কার্যাদেশ ও চুক্তি করতেও সময় লেগেছে। সব মিলিয়ে এবারও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবই ছাপায় দেরি হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনসিটিবির একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক স্তরের প্রায় শতভাগ বই ইতিমধ্যে সরবরাহ হয়ে গেছে। তবে তাঁর ধারণা, জানুয়ারিতেও মাধ্যমিক স্তরের সব বই সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। একই ধরনের আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন একজন মুদ্রণকারী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই মুদ্রণকারী প্রথম আলোকে বলেন, নবম শ্রেণির বই আগেই সরবরাহ করা সম্ভব হবে। তবে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির সব পাঠ্যবই জানুয়ারির মধ্যেও সরবরাহ শেষ হবে না বলে তিনি মনে করছেন।
এনসিটিবির সূত্র জানায়, আগামী বছর বিনা মূল্যে বিতরণের জন্য প্রাথমিক স্তরে মোট পাঠ্যবই ৮ কোটি ৫৯ লাখের বেশি এবং মাধ্যমিক স্তরে ২১ কোটি ৪৩ লাখের বেশি কপি পাঠ্যবই ছাপানো হচ্ছে। বিদায়ী বছরের তুলনায় এবার পাঠ্যবইয়ের সংখ্যা কিছুটা কম।
পাঠ্যবই ছাপানোর গুরুত্বপূর্ণ এই সময়ে এনসিটিবিতে নিয়মিত চেয়ারম্যান নেই। প্রায় সাড়ে সাত মাস ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করার পর গত ৬ নভেম্বর অবসর-উত্তর ছুটিতে যান শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা রবিউল কবীর চৌধুরী। একই সময়ে তিনি প্রতিষ্ঠানটির সদস্য (শিক্ষাক্রম) ও সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম)-এর দায়িত্বও পালন করছিলেন।
বর্তমানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মাহবুবুল হক পাটওয়ারী এনসিটিবির চেয়ারম্যানের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। পাঠ্যবই ছাপার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলার জন্য চেষ্টা করা হলেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এনসিটিবির সূত্র জানায়, আগামী বছর বিনা মূল্যে বিতরণের জন্য প্রাথমিক স্তরে মোট পাঠ্যবই ৮ কোটি ৫৯ লাখের বেশি এবং মাধ্যমিক স্তরে ২১ কোটি ৪৩ লাখের বেশি কপি পাঠ্যবই ছাপানো হচ্ছে। বিদায়ী বছরের তুলনায় এবার পাঠ্যবইয়ের সংখ্যা কিছুটা কম।
মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খানও প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। তবে কাগজের সংকট, চুক্তি করতে দেরিসহ বিভিন্ন কারণে মাধ্যমিক স্তরের সব বই বছরের শুরুতে সরবরাহ করা সম্ভব হবে না বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
এনসিটিবির তথ্য অনুযায়ী, ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাধ্যমিকে ছাপা শেষে বাইন্ডিং সম্পন্ন হয়েছে প্রায় পৌনে ১১ কোটি কপি বই। এর মধ্যে সরবরাহ-পূর্ব পরিদর্শন (পিডিআই) সম্পন্ন হয়েছে ৯ কোটি ৯ লাখ ৬০ হাজারের বেশি কপির। এসবের মধ্যে সরবরাহ করা হয়েছে ৭ কোটি ৮ লাখের বেশি কপি, যা মাধ্যমিকের মোট বইয়ের ৩৩ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। এ ছাড়া আরও সাড়ে ৩২ লাখ কপি বইয়ের পিডিআই প্রক্রিয়া চলমান।
অন্যদিকে একই দিন পর্যন্ত প্রাথমিক স্তরে বাইন্ডিং সম্পন্ন হয়েছে ৮ কোটি ৫৭ লাখ ৮৮ হাজারের বেশি কপি বই। এর মধ্যে প্রায় ৯৯ শতাংশ বইয়ের পিডিআই শেষ হয়েছে এবং ৯৮ শতাংশের বেশি বই সরবরাহ করা হয়েছে। তবে গতকাল মঙ্গলবার এনসিটিবি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, প্রাথমিক স্তরের শতভাগ বইয়ের সরবরাহ শেষ হয়েছে।
মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খানও প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। তবে কাগজের সংকট, চুক্তি করতে দেরিসহ বিভিন্ন কারণে মাধ্যমিক স্তরের সব বই বছরের শুরুতে সরবরাহ করা সম্ভব হবে না বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।