যুক্তরাজ্যে পড়াশোনার স্বপ্ন অনেকেরই থাকতে পারে। নানা কারণে বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে যুক্তরাজ্য এখন বেশ জনপ্রিয়। আর এই দেশ বিদেশি শিক্ষার্থীদের নানা সুযোগ-সুবিধাও দিয়ে থাকে। স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদি কোর্স, বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়, সাশ্রয়ী বাসস্থান, বৃত্তি এবং ভিসা সুবিধার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের পর যুক্তরাজ্য এখন শিক্ষার্থীদের অন্যতম পছন্দের গন্তব্য হয়ে উঠেছে।
কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিং ২০২৬ অনুযায়ী, শীর্ষ ১০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৪টি যুক্তরাজ্যের। এর মধ্যে রয়েছে ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন (২য়), অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় (৪র্থ), কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় (৬ষ্ঠ) এবং ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন (৯ম)। শুধু পড়াশোনা নয়, এখানে শিক্ষার্থীরা বহুসাংস্কৃতিক পরিবেশে শেখার সুযোগ পান, তৈরি হয় বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক এবং পড়াশোনা শেষে সুযোগ পান ভালো ক্যারিয়ার গড়ার।
ব্রিটিশ কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী যুক্তরাজ্যে পড়াশোনার পাঁচটি প্রধান দিক তুলে ধরা হলো:
১. দ্রুততম সময়ে ডিগ্রি সম্পন্ন করার সুযোগ
যুক্তরাজ্যে অধিকাংশ স্নাতক কোর্সের মেয়াদ মাত্র তিন বছর এবং অনেক স্নাতকোত্তর কোর্স এক বছরেই শেষ হয়। এতে সময় এবং খরচ দুটোই সাশ্রয় হয়, তবে শিক্ষার মানে কোনো ছাড় দেওয়া হয় না। যুক্তরাজ্যের ডিগ্রি মিউচুয়াল রিকগনিশন অব কোয়ালিফিকেশনস (MRQ) চুক্তির অধীনে বৈশ্বিকভাবে স্বীকৃত। পাশাপাশি গ্র্যাজুয়েট রুট ভিসা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা শেষে যুক্তরাজ্য থেকে কাজ করার সুযোগ দেয়।
ইউনিভার্সিটি অব এসেক্সের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ভারতের ইয়াশোধরা বলেন, ‘গ্র্যাজুয়েট রুট ভিসার কারণে আমার নিয়োগকর্তাকে স্পনসরশিপ নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হয়নি।’
২. স্বাধীনভাবে শেখার সুযোগ
যুক্তরাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা মুখস্থনির্ভর শিক্ষার চেয়ে সমালোচনামূলক চিন্তা ও সৃজনশীলতাকে গুরুত্ব দেয়। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের প্রাক্তন শিক্ষার্থী রাঘব বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে আপনাকে ব্যক্তি হিসেবে বিকশিত হতে এবং আপনার জীবন ও ক্যারিয়ার নিয়ে ভিন্নভাবে ভাবতে উৎসাহিত করা হয়।’
৩. শ্রেণিকক্ষের বাইরেও শিক্ষাজীবন
লন্ডনের থিয়েটার নাইট থেকে শুরু করে খেলাধুলা, সংগীত বা আলোকচিত্রের মতো বিভিন্ন ক্লাব যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে পড়াশোনা ছাড়াও সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ডের অবারিত সুযোগ দেয়। এর মাধ্যমে শিক্ষাজীবন আরও প্রাণবন্ত ও সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে।
৪. প্রকৃত বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা
বিশ্বের নানা প্রান্তের শিক্ষার্থীরা যুক্তরাজ্যে পড়তে আসেন। এখানে তৈরি হয় সাংস্কৃতিক বিনিময়ের সুযোগ, সহযোগিতা এবং বিস্তৃত নেটওয়ার্ক। ব্রিটিশ কাউন্সিলের অ্যালামনাই ইউকে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরাও যুক্ত থাকতে পারেন।
৫. স্বাস্থ্য ও মানসিক সহায়তা সুবিধা
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা ইমিগ্রেশন হেলথ সারচার্জের (IHS) মাধ্যমে বিশ্বের অন্যতম সেরা স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা এনএইচএসের সুবিধা পান। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কাউন্সেলিং, সহপাঠী সহায়তা নেটওয়ার্ক এবং কল্যাণ কর্মকর্তা নিয়োগের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মানসিক ও সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করে।
সঠিক পরিকল্পনা, সুযোগের সদ্ব্যবহার এবং লক্ষ্যভিত্তিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা শুধু একাডেমিক সাফল্যই নয়, ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে বড় ধরনের অগ্রগতির দ্বারও খুলে দিতে পারে।