
প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফলে ভুলভ্রান্তির কারণে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে প্রকাশ করা ফলাফল সন্ধ্যায় স্থগিত করা হয়। ‘কোডিং’-সংক্রান্ত ভুলের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে।
ফলাফল স্থগিতের কারণ হিসেবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় গতকাল রাত আটটায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, কারিগরি ত্রুটির জন্য প্রকাশিত ফলাফল পুনর্যাচাইয়ের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করায় ফলাফল আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। আজ বুধবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে ফলাফল প্রকাশ করা হবে।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা নিয়ে শুরু থেকে ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত চরম গাফিলতি ও খামখেয়ালির পরিচয় দিল সরকারের প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ। শিক্ষাবিদদের পরামর্শ উপেক্ষা করে গত বছরের শেষ সময়ে আকস্মিক ঘোষণা দিয়ে এ পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। আর গতকাল দুপুরে ঘটা করে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর সন্ধ্যায় তা স্থগিত করা হয়।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এ রকম দায়িত্বহীন কর্মকাণ্ডে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক ও অভিভাবকেরা। ফলাফল ঘোষণার মাত্র ছয় ঘণ্টার মধ্যে তা স্থগিত করায় অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বোধ হয় পরেরবার বৃত্তি পরীক্ষায় ট্রান্সলেশন থাকবে—মিষ্টি খাইবার পর ফল বদলাইয়া গেল।’
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক হাসিম আহমেদ বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ঘোষিত ফল যাদের উৎফুল্ল করেছে, সংশোধিত ফলে কেউ যদি ঝরে যায়, তার মনের অবস্থাটা কী হবে, কর্তৃপক্ষ কি এটা ভেবে দেখেছে?’
তবে ঘোষিত ফলাফলে যেসব শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছিল, তাদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি হয়েছে। কারণ, অনেক অভিভাবক সন্তানদের বৃত্তি পাওয়ার খবর শোনার পর তা উদ্যাপন করেছেন। স্বজন-প্রতিবেশীদের মিষ্টিমুখ করিয়েছেন। ফেসবুকে এ অর্জনের খবর প্রচার করেছেন। কিন্তু ফলাফল স্থগিতের ঘোষণার পর তাঁদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
যেনতেনভাবে ফলাফল ঘোষণা করায় পরীক্ষা না দিয়েও কেউ কেউ বৃত্তি পেয়েছে। বগুড়া থেকে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, জেলার গাবতলী উপজেলার পাঁচপাইকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছিল এক শিক্ষার্থী। কিন্তু সে পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। কিন্তু তাকেও বৃত্তি (সাধারণ কোটা) পাওয়ার তালিকায় রাখা হয়েছে।
পাঁচপাইকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করেও বৃত্তির তালিকায় এক শিক্ষার্থীর নাম দেখে তিনি হতবাক হন। পরে মুঠোফোনে বিষয়টি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানান তিনি।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সূত্র বলছে, ফলাফলে ‘কোডিং’-সংক্রান্ত ভুলের কারণে কিছু সমস্যা হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে, যার বৃত্তি পাওয়ার কথা সে পায়নি, আবার যার পাওয়ার কথা নয় সে বৃত্তি পেয়েছে—এ রকম কিছু ঘটনা ঘটেছে।
এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ সিস্টেম অ্যানালিস্ট অনুজ কুমার রায় গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, কিছু ভুল হয়েছিল। সংশোধন করা হচ্ছে।
গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২২ সালের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় মোট ৮২ হাজার ৩৮৩ শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছে। এর মধ্যে মেধা কোটায় (ট্যালেন্টপুল) বৃত্তি পেয়েছে ৩৩ হাজার শিক্ষার্থী ও সাধারণ কোটায় পেয়েছে ৪৯ হাজার ৩৮৩ জন।
প্রাথমিক বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীরা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতি মাসে নির্ধারিত পরিমাণে টাকা পায়। এর মধ্যে মেধা কোটায় বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থী মাসে ৩০০ টাকা এবং সাধারণ কোটায় বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীরা মাসে ২২৫ টাকা করে পাবে। এ ছাড়া বৃত্তি পাওয়া সব শিক্ষার্থী বছরে এককালীন ২২৫ টাকা করে পায়।