জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা

যার কাজ, তারই করা উচিত

বাংলা: সহপাঠ–হেমাপ্যাথি, এ্যালাপ্যাথি

প্রশ্ন

ক. ‘এই সময়টা ছিল তোরাপ ডাক্তারের মজা’—কথাটি বুঝিয়ে লেখো।

খ. ‘যার কাজ, তারেই সাজে’—মন্তব্যটি ‘হেমাপ্যাথি, এ্যালাপ্যাথি’ গল্পের আলোকে বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: ক

আশ্বিন মাস এলেই গ্রামে ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় তোরাপ ডাক্তারের আয়রোজগার বেড়ে যেত বলে, এ প্রশ্নে উক্তিটি করা হয়েছে।

‘হেমাপ্যাথি, এ্যালাপ্যাথি’ গল্পে তোরাপ ডাক্তার ছিল একজন অ্যালোপ্যাথিক ডাক্তার। গ্রীষ্ম-বর্ষায় গ্রামের সবাই কৃষিকাজে ব্যস্ত থাকায় রোগশোক নিয়ে ভাবত না। তোরাপ ডাক্তারও তখন ডাক্তারি বাদ দিয়ে কৃষিকাজে ব্যস্ত থাকত। শরৎকালে মানুষের ব্যস্ততা কমত। তখন অসুখে পড়ত। সবচেয়ে বেশি হতো ম্যালেরিয়া। তখন তোরাপ ডাক্তারের কাছে ভিড় হতো কদরও বেড়ে যেত। সে কারণেই বলা হয়েছে, ‘এই সময়টা ছিল তোরাপ ডাক্তারের মজা।’

উত্তর: খ

আধুনিক বাংলা কথাসাহিত্যের অপ্রতিদ্বন্দ্বী লেখক হাসান আজিজুল হক একজন সার্থক জীবনশিল্পী। শিল্পীর কালির আঁচড়ে তিনি সার্থকতার সঙ্গে মানুষের যাপিত জীবনের যথাযথ চিত্র তুলে ধরতে পারতেন। তারই বহিঃপ্রকাশ দেখা যায় তাঁর ‘হেমাপ্যাথি, এ্যালাপ্যাথি’ শীর্ষক গল্পে। এ গল্পে লেখক সরস ভাষায় গ্রাম্য দুজন হাতুড়ে ডাক্তারের প্রতিদ্বন্দ্বিতার অন্তরালে না বুঝে অন্যের কাজে নাক গলানোর বিড়ম্বনা তুলে ধরেছেন। ‘হেমাপ্যাথি, এ্যালাপ্যাথি’ গল্পের লেখকের বর্ণনা মতে, তাদের গ্রামে দুজন ডাক্তার ছিলেন। তাঁদের একজন হোমিওপ্যাথ অঘোর ডাক্তার এবং অন্যজন হলেন অ্যালোপ্যাথ তোরাপ ডাক্তার। দুজনের চিকিৎসার ধরন ছিল একই রকম। যে রোগের জন্যই তাঁদের কাছে রোগীরা যেত, বরাবর একই ওষুধ দিতেন তাঁরা। তবে দুজনের মধ্যে তোরাপ ডাক্তারের আয়রোজগার ভালো ছিল। কেননা, ম্যালেরিয়ার প্রকোপের কারণে রোগীরা দলে দলে তাঁর কাছে ভিড় জমাত। এর পাশাপাশি তিনি অত্যন্ত পরিশ্রমী হওয়ায় ফসলের মৌসুমে ডাক্তারি রেখে কৃষিকাজে উঠেপড়ে লেগে যেতেন। অন্যদিকে অঘোর ডাক্তারের রোগী ছিল কম এবং অন্য কোনো আয়ের উৎস না থাকায় তাঁর অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল বেশ দুর্বল। তাই তিনি একদিন গোপনে জেলা শহর থেকে সিরিঞ্জ আর কুইনাইন ইনজেকশন কিনে এনে অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা শুরুর চেষ্টা করেন। ওই সময়ে তা আঁচ করতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে দাঁত দিয়ে সুচটি বের করে আনে। তিনি নিজের ভুল বুঝতে পারেন।

আলোচ্য গল্পে অঘোর ডাক্তার না জেনে কাজ করতে গিয়ে বড় ধরনের বিপদ ডেকে এনেছিলেন। আসলে যার যেটা কাজ, সেটাই করা উচিত, নয়তো দুঃখ ও অপমান বয়ে বেড়াতে হয়। তাই বলা যায় যে ‘যার কাজ, তারেই সাজে’— কথাটি খুবই যথার্থ।

  • মোস্তাফিজুর রহমান, শিক্ষক
    বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ, ঢাকা