প্রিয় এইচএসসি পরীক্ষার্থী, লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ের ব্যবহারিক পরীক্ষা বাকি রয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ব্যবহারিক পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করবে কয়েক দিনের মধ্যেই। তোমার ব্যবহারিক পরীক্ষা এ সময়ের মধ্যে যেকোনো দিন নির্ধারণ করা হবে। ব্যবহারিক পরীক্ষায় ভালো করতে হলে তোমাকে অবশ্যই কিছু নিয়মকানুন মানতে হবে।
যেমন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, উচ্চতর গণিত, কৃষিশিক্ষা, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান, ভূগোল, পরিসংখ্যান, মনোবিজ্ঞান, মৃত্তিকাবিজ্ঞান ইত্যাদি। লিখিত পরীক্ষার পাশাপাশি ব্যবহারিক পরীক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই ব্যবহারিক পরীক্ষাকে কোনোভাবেই অবহেলা করা যাবে না।
এইচএসসি লিখিত পরীক্ষা শেষের দিন থেকে তোমরা ব্যবহারিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেবে। বিভাগ অনুযায়ী ব্যবহারিক পরীক্ষার বিষয় আলাদা। বিষয়ভিত্তিক পরীক্ষার প্রস্তুতির ধরন ও আলাদা।
প্রিয় শিক্ষার্থীরা
তোমাদের জন্য ব্যবহারিক পরীক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তুমি যদি ব্যবহারিক পরীক্ষা ভালো নম্বর না পাও তবে তোমার জন্য ওই বিষয়ে জিপিএ–৫ পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে। যদি তুমি ব্যবহারিক পরীক্ষায় পূর্ণ নম্বর অর্জন করতে পারো তবে জিপিএ–৫ পাওয়া তোমার জন্য অনেকটা সহজ হয়ে যাবে। অনেক সময় দেখা যায়, ১ নম্বরের জন্য জিপিএ-৫ পাওয়া হয়ে ওঠে না। তাই ব্যবহারিক পরীক্ষাকে অবহেলার সঙ্গে না নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। তোমাদের সহায়তা করার জন্য ব্যবহারিক পরীক্ষার কতগুলো নিয়ম ও প্রস্তুতির জন্য করণীয় কী, সে সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
১. সব ব্যবহারিক পরীক্ষার জন্য ব্যবহারিক খাতা তৈরি করতে হয়। ব্যবহারিক খাতা অবশ্যই সঠিক প্রক্রিয়ায় লিখতে হবে ও শিক্ষককে দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে নিতে হবে।
২. ব্যবহারিক খাতা কোনোভাবেই অন্যকে দিয়ে লেখানো যাবে না। নিজেকেই ব্যবহারিক খাতা তৈরি করতে হবে।
৩. বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত দিনে যে বিষয়ে পরীক্ষা হবে ওই বিষয়ের ব্যবহারিক খাতা অবশ্যই নিয়ে যেতে হবে। পরীক্ষককে অবশ্যই ব্যবহারিক খাতা প্রদর্শন করতে হবে। পরীক্ষক কর্তৃক নির্ধারিত পরীক্ষণ সম্পাদন করে তা বোর্ড কর্তৃক দেওয়া খাতায় লিখতে হবে।
৪. ব্যবহারিক পরীক্ষার দিন যা লাগবে—
ব্যবহারিক পরীক্ষার দিনও তোমার এইচএসসির প্রবেশপত্র, রেজিস্ট্রেশন কার্ড, দু-তিনটি কলম, জ্যামিতি বক্স, স্কেল, ক্যালকুলেটর, ব্যবহারিক খাতা, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ডিসেকটিং বক্স ইত্যাদি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পরীক্ষাকেন্দ্রে নিতে হবে।
৫. ব্যবহারিক পরীক্ষার খাতায় যা লিখতে হবে—
ব্যবহারিক খাতার ওপরের মলাটে রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর নির্ভুলভাবে লিখতে হবে। ব্যবহারিক পরীক্ষার জন্য যে উত্তরপত্র সরবরাহ করা হয়, তাতে ধারাবাহিকভাবে পরীক্ষণের প্রয়োজনীয় অংশ লিখতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যাতে কোনো অংশ বাদ না পড়ে। এই উত্তরপত্রও পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি।
৬. শিক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষণ নির্ধারণ—
প্রশ্নে উল্লেখিত পরীক্ষণ থেকে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে সাধারণত লটারির মাধ্যমে বা পরীক্ষকের ইচ্ছা অনুযায়ী পরীক্ষণ নির্ধারিত হবে।
৭. মৌখিক পরীক্ষা—
ব্যবহারিক পরীক্ষার একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ মৌখিক পরীক্ষা। মৌখিক পরীক্ষায় সাধারণত পরীক্ষণ–সম্পর্কিত সংশ্লিষ্ট বিষয়বস্তু, পাঠ্যবইয়ে দেওয়া সংজ্ঞা, সূত্র ইত্যাদি জানতে চাওয়া হয়।
৮. হাতে-কলমে কাজ—
ব্যবহারিক পরীক্ষণে হাতে-কলমে কাজ করার মাধ্যমে উত্তরপত্রে লিখতে হয়। প্রতিটি পরীক্ষণের জন্য আলাদা অংশে আলাদা নম্বর বরাদ্দ থাকে। সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। কোনো অংশের নম্বর যেন বাদ না পড়ে।
৯. নম্বর বণ্টন—
গণিত ব্যবহারিক পরীক্ষায় মোট নম্বর থাকে ২৫। এই ২৫ নম্বর আবার বিভিন্ন অংশে ভাগ হয়ে যায়। তাই পূর্ণ নম্বর পেতে হলে সব অংশের প্রতি সতর্ক থাকতে হবে।
১০. পরীক্ষার কক্ষে আচরণ—
ব্যবহারিক পরীক্ষার সময় তোমার আচরণে যেন পরীক্ষক বিরক্ত না হন, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এটা মৌখিক পরীক্ষায় পূর্ণ নম্বর পেতে অতি জরুরি।
বিষয় আলাদা। নিচে কয়েকটি বিষয়ের ব্যবহারিক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
১. তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি—
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহারিক ক্লাস বা হাতে-কলমে শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কম্পিউটার ল্যাবে হাতে–কলমে শিখতে হবে। ল্যাব ওয়ার্ক শেষে রিপোর্ট ব্যবহারিক খাতায় লিখে শিক্ষকের কাছে জমা দিতে হবে। মৌখিক পরীক্ষার জন্য বিষয়বস্তু ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে।
২. পদার্থবিজ্ঞান—
পদার্থবিজ্ঞানে একটি পরীক্ষণ সম্পন্ন করতে হয়। এর মান ১৫। তত্ত্ব, উপকরণ বা যন্ত্রপাতি, ছক, হিসাব, ফলাফল, সতর্কতা ইত্যাদি প্রতিটি অংশের জন্য আলাদা নম্বর মিলেই ১৫ নম্বর হয়ে থাকে। মৌখিক পরীক্ষার জন্য ৫ ও ব্যবহারিক খাতার জন্য ৫ নম্বর বরাদ্দ থাকে। তবে কোনো কোনো বছর নম্বর বিভাজনে একটু পরিবর্তন হতে দেখা যায়।
তাই ব্যবহারিক খাতা সঠিকভাবে লিখতে হবে। কয়েকটি পরীক্ষণ হাতে–কলমে শিখতে হবে। পরিমাপ পদ্ধতি ও পরিমাপ করার যন্ত্রের সঠিক ব্যবহার শিখতে হবে। পরীক্ষার নাম, তত্ত্ব, ব্যবহারিক উপকরণ, পরীক্ষা পদ্ধতি, হিসাব, ফলাফল, সতর্কতা ভালোভাবে শিখতে হবে। মৌখিক পরীক্ষার জন্য পরীক্ষণ সংশ্লিষ্ট সংজ্ঞা, সূত্র শিখতে হবে।
৩. রসায়ন—
রসায়নেও একটি পরীক্ষণ সম্পন্ন করতে হয়। এর মান ১৫। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক দ্রব্যাদির নাম ও তত্ত্ব উল্লেখকরণ, যন্ত্রপাতি সাজানো, যথাযথ ব্যবহার ও কার্যপ্রণালি, ধর্মসমূহ পরীক্ষা, অর্থাৎ পরীক্ষণ, পর্যবেক্ষণ ও সিদ্ধান্ত এবং ফলাফল লিখন ইত্যাদি প্রতিটি অংশের জন্য আলাদা নম্বর মিলেই ১৫ নম্বর হয়ে থাকে। মৌখিক পরীক্ষার জন্য ৫ ও ব্যবহারিক নোটবুকের জন্য ৫ নম্বর বরাদ্দ থাকে। তবে কখনো কখনো নম্বর বিভাজনে একটু পরিবর্তন হতে পারে।
কয়েকটি ব্যবহারিক পরীক্ষণ ভালোভাবে হাতে–কলমে শিখতে হবে। রাসায়নিক পদার্থগুলো সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে। রাসায়নিক পদার্থগুলোর নাম ও ধর্ম ভালোভাবে জানতে হবে। পরিমাপ করার নির্ভুল পদ্ধতি শিখে নিতে হবে।
ব্যবহারিক খাতা নির্ভুলভাবে লিখতে হবে।
মৌখিক পরীক্ষার জন্য পরীক্ষণ সংশ্লিষ্ট বিষয়বস্তু, পরীক্ষাপদ্ধতি, রাসায়নিক পদার্থগুলোর নাম, সূত্র, সংজ্ঞা ইত্যাদি শিখতে হবে।
৪. জীববিজ্ঞান—
জীববিজ্ঞানে পরীক্ষণের নাম, উপকরণ বা যন্ত্রপাতি, কার্যপদ্ধতি ও প্রদর্শন, চিত্রাঙ্কন, চিত্র চিহ্নিতকরণ, পর্যবেক্ষণ, সিদ্ধান্ত, সতর্কতা ইত্যাদি প্রতিটি অংশের জন্য আলাদা নম্বর থাকে। তবে কোনো কোনো বছর নম্বর বিভাজনে একটু পরিবর্তন হতে দেখা যায়।
তাই ব্যবহারিক খাতায় পরিচ্ছন্ন চিহ্নিত চিত্র আঁকতে হবে। চিত্রের বর্ণনা ভালো করে শিখতে হবে। ৫. পরিসংখ্যান: পরিসংখ্যান ব্যবহারিক পরীক্ষায় সাধারণত তিনটি সমস্যার সমাধান করতে হয়। এর জন্য ১৮ নম্বর ব্যবহারিক খাতা ২ নম্বর ও মৌখিক পরীক্ষার জন্য ৫ নম্বর বরাদ্দ থাকে।
এই নম্বর বিভাজন পরিবর্তন হতে পারে। ব্যবহারিক পরিসংখ্যানের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো হলো ডাটা সংগ্রহ, ডাটা বিশ্লেষণ, পরিসংখ্যানিক পদ্ধতি প্রয়োগ, অনুমান ও পূর্বাভাস তৈরি সিদ্ধান্ত গ্রহণ ইত্যাদি। পরিসংখ্যান ব্যবহারিক পরীক্ষায় যে সমস্যাগুলোকে সমাধান করতে হয়, তা নির্ভুলভাবে করতে হবে। এর জন্য পরিসংখ্যান ব্যবহারিক বই রয়েছে। তোমরা বইগুলো দেখতে পারো।
৬. ভূগোল—
ভূগোল ব্যবহারিক পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন বিষয়, যেমন মান চিত্রাঙ্কন, ডেটা বিশ্লেষণ, সমীক্ষা ইত্যাদি। ভূগোল ব্যবহারিক পরীক্ষার জন্য নির্ভুলভাবে ব্যবহারিক খাতা তৈরি করতে হবে। ভূগোল বিষয়ের জন্য চিত্রাঙ্কন ও গ্রাফ তৈরি করার পদ্ধতি ভালোভাবে শিখে নেবে।
৭. সংগীত—
সংগীত ব্যবহারিক প্রশ্ন সাধারণত দুটি অংশে বিভক্ত।
ক. গান গাওয়া—
# একটি গান নির্বাচন করে গাইতে হবে।
# নির্দিষ্ট রাগ ও তালের গান নির্বাচন করা হতে পারে।
# গানের কথা, সুর, তাল, লয় ও উপস্থাপন সংগীত ব্যবহারিক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তাই ব্যবহারিক পরীক্ষার সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত গানগুলো ভালো করে শিখে নিতে হবে।
খ. বাদ্যযন্ত্র বাজানো: সংগীত ব্যবহারিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীকে বাদ্যযন্ত্র নিজেকেই বাঁচাতে হবে।
তাই বাদ্যযন্ত্রগুলো ভালোভাবে বাজানোর জন্য ভালোভাবে প্রশিক্ষণ নিতে হবে।
৮. গার্হস্থ্য বিজ্ঞান—
গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ব্যবহারিক পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক কাজ করতে হয়, যেমন খাদ্য প্রস্তুত করা, ঘর সাজানো, পোশাক তৈরি করা ইত্যাদি। ব্যবহারিক পরীক্ষার জন্য একটি নোটবুক বা ব্যবহারিক খাতা জমা দিতে হয়।
গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ব্যবহারিক পরীক্ষায় পূর্ণ নম্বর পেতে যে বিষয়ে নজর দিতে হবে—
ক. পরিকল্পনা প্রণয়ন
খ. সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ
গ. উপকরণ সংগ্রহ ও সঠিকভাবে ব্যবহার
ঘ. ফলাফল উপস্থাপন।
লেখক: এ এস এম আসাদুজ্জামান, প্রভাষক, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ, ঢাকা।