
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬৫ হাজার ৫৬৯টি। শিক্ষার্থী এক কোটির বেশি।
সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে পৌনে ৭০০। শিক্ষার্থী পৌনে পাঁচ লাখ।
সরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষকদের আন্দোলনে চলমান বার্ষিক পরীক্ষা গতকাল মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মতো বেশির ভাগ বিদ্যালয়ে হয়নি। বিভিন্ন দাবিতে শিক্ষকদের কর্মবিরতির কারণে দেশের শিক্ষাকাঠামোর সবচেয়ে বড় দুটি স্তর সংকটে পড়েছে। এতে ক্ষুব্ধ অনেক অভিভাবক। তাঁরা বলছেন, বার্ষিক পরীক্ষার সময় এমন আন্দোলন ঠিক হয়নি। ক্ষতির মুখে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা।
তবে গতকাল রাত পৌনে ১০টার দিকে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, তাদের কর্মবিরতি সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে আজ থেকে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যদিও প্রাথমিকের শিক্ষকেরা কর্মবিরতি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন।
অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির গতকাল মঙ্গলবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, পরীক্ষার এ মৌসুমে শিক্ষকদের কর্মবিরতির কারণে শিক্ষার্থীদের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এমনিতেই করোনার দীর্ঘ বন্ধের কারণে শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি হয়েছিল, তা এখনো পূরণ হয়নি। শিক্ষকেরা শ্রদ্ধার পাত্র। তাঁরা তাঁদের দাবি জানাতেই পারেন। কিন্তু বার্ষিক পরীক্ষার সময় তা কাম্য হতে পারে না।
মাধ্যমিকের শিক্ষকদের দাবি—১. সহকারী শিক্ষক পদকে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারভুক্ত করে নবম গ্রেডসহ পদসোপান ও মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গেজেট প্রকাশ। ২. বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখায় কর্মরত শিক্ষকদের বিভিন্ন শূন্য পদে নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন দ্রুত কার্যকর করা। ৩. সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আলোকে বকেয়া টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের মঞ্জুরি আদেশ দেওয়া। ৪. ২০১৫ সালের আগের মতো সহকারী শিক্ষকদের ২ থেকে ৩টি ইনক্রিমেন্টসহ অগ্রিম বর্ধিত বেতন-সুবিধা বহাল করে গেজেট প্রকাশ।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের একাংশ বেতন বৃদ্ধিসহ তিন দফা দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছে। এতে গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো দেশের অনেক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা হয়নি।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকেরা পাঠদান করান। সারা দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ৬৫ হাজার ৫৬৯টি। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক কোটির বেশি। শিক্ষক রয়েছেন পৌনে চার লাখের বেশি। সহকারী শিক্ষকের অনুমোদিত পদ ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২১৬টি, বর্তমানে কর্মরত ৩ লাখ ৫২ হাজার ২০৮ জন।
গত ২৭ নভেম্বর থেকে তিন দফা দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করে ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’। গত সোমবার তারা বার্ষিক পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচিও শুরু করে। তারা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে গতকাল কর্মবিরতির পাশাপাশি জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ চেয়ে স্মারকলিপি জমা দিয়েছে।
এই পরিষদের একজন আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা এবার বিদ্যালয়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। আজ বুধবার তাঁরা হাজিরা দেবেন নিজ নিজ উপজেলা শিক্ষা অফিসের সামনে।
দুই দিন কর্মবিরতির পর গতকাল রাতে মাধ্যমিকের শিক্ষকদের কর্মসূচি স্থগিত। প্রাথমিকে কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা।
প্রায় একই দাবিতে সহকারী শিক্ষকদের আরেকটি সংগঠন ‘সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের’ ব্যানারে ২৩ থেকে ২৭ নভেম্বর কর্মবিরতি পালন করেছিল। গতকাল সংগঠনটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আজ বুধবারের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে ৪ ডিসেম্বর বিদ্যালয়ে ‘তালাবদ্ধ’ কর্মসূচি শুরু হবে।
প্রাথমিক শিক্ষকদের তিন দফা দাবি হলো সহকারী শিক্ষকদের জাতীয় বেতন স্কেলে আপাতত ১১তম গ্রেড দেওয়া, চাকরির ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেডপ্রাপ্তির জটিলতার নিরসন এবং সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি দেওয়া। বর্তমানে সহকারী শিক্ষকেরা ১৩তম গ্রেডে আছেন (শুরুর মূল বেতন ১১ হাজার টাকা)।
আর্থিক সুবিধা, পদোন্নতিসহ চার দফা দাবিতে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা আন্দোলন করছেন। সোমবার থেকে বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির ব্যানারে এ কর্মসূচি শুরু হয়। ফলে ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ বিদ্যালয়ে আগের দিনের মতো গতকালও বার্ষিক পরীক্ষা হয়নি।
দুপুরের পর রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় অবস্থিত গবর্নমেন্ট সায়েন্স হাইস্কুলে গিয়ে জানা যায়, মাধ্যমিকের বিভিন্ন শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা হয়নি।
দেশে বর্তমানে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে পৌনে ৭০০-এর মতো। এর মধ্যে নতুন করে জাতীয়করণ হওয়া তিন শতাধিক বিদ্যালয়ও রয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রমতে, মূলত পুরোনো সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে পরীক্ষা হয়নি।
বার্ষিক পরীক্ষার মধ্যে কর্মবিরতির কারণে অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
তবে গতকাল রাতে সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, পরীক্ষার অনিশ্চয়তায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা যে মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন, তা অনুধাবন করে দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। তাই ৩ ডিসেম্বর বার্ষিক পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে তাঁদের ন্যায্য দাবিদাওয়া সমাধানের পথে এগিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ চেয়েছে সমিতি।
মাধ্যমিকের শিক্ষকদের দাবিগুলো হলো: এক. সহকারী শিক্ষক পদকে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারভুক্ত করে নবম গ্রেডসহ পদসোপান ও মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গেজেট প্রকাশ। দুই. বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখায় কর্মরত শিক্ষকদের বিভিন্ন শূন্য পদে নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন দ্রুত কার্যকর করা। তিন. সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আলোকে বকেয়া টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের মঞ্জুরি আদেশ দেওয়া। চার. ২০১৫ সালের আগের মতো সহকারী শিক্ষকদের ২ থেকে ৩টি ইনক্রিমেন্টসহ অগ্রিম বর্ধিত বেতন-সুবিধা বহাল করে গেজেট প্রকাশ।