প্রিয় ক্যাডেট কলেজ ভর্তি–ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা, শুভেচ্ছা রইল। গণিত ১০০, ইংরেজি ১০০, বাংলা ৬০ ও সাধারণ জ্ঞান ৪০; মোট ৩০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে, তা তোমরা প্রবেশপত্র মারফত জানতে পেরেছ। তোমাদের প্রবেশপত্রে পরীক্ষাকেন্দ্রের নাম লেখা আছে।
প্রশ্নের ধরন
তোমরা বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও সাধারণ জ্ঞানে প্রচুর পড়াশোনা করেছ। ৩০০ নম্বরের পরীক্ষার জন্য মোট সময় ৩ ঘণ্টা। অর্থাৎ ১ নম্বরের জন্য তুমি ১ মিনিট সময়ও পাবে না। প্রশ্নপত্রে অবজেকটিভ বা নৈর্ব্যক্তিক, শূন্যস্থান পূরণ, এককথায় উত্তর ও কিছু রচনামূলক প্রশ্ন দেওয়া থাকবে। বাংলা ও ইংরেজিতে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ রচনামূলক প্রশ্ন, অনুচ্ছেদ রচনা, যৌক্তিক অনুচ্ছেদ ও গল্প থাকবে। পরীক্ষায় তোমার জ্ঞান, অনুধাবন ও সৃজনশীলতার পরিচয় দিতে হবে। বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ের রচনামূলক অংশ খুবই গুরুত্ব বহন করে এবং তা ডিসাইডিং ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করবে। সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর করার পর ব্রেন স্ট্রর্মিং ও মাইন্ড ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে বিষয়টি ভালোভাবে চিন্তা করে লেখা শুরু করবে।
ভয়কে করো জয়
প্রশ্ন যে ধরনেরই হোক না কেন, ভয় পাওয়ার বা আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। প্রশ্ন শুধু তোমার একার জন্যই সহজ বা কঠিন হবে না—সবার জন্যই হবে। তাই সহজ হলেও যা, কঠিন হলেও তা। মাথা ঠান্ডা রাখবে। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় যারা সবচেয়ে বেশি নম্বর পাবে, তারাই ভালো করবে। তোমার চেষ্টা থাকবে যত বেশি পারো দ্রুতগতিতে উত্তর করা, পরীক্ষার হলে কোনোভাবেই মনঃসংযোগে যেন ব্যাঘাত না ঘটে, তা নিশ্চিত করা। একটি কথা মনে রাখবে, পরীক্ষায় ভালো করতে হলে দ্রুত লেখা, নির্ভুল লেখা ও সুন্দর হস্তাক্ষরের কোনো বিকল্প নেই।
পরীক্ষার আগের রাতের প্রস্তুতি
পরীক্ষার আগের রাতে রাত ১০টার মধ্যে ঘুমাতে যাবে। অনেকেই পরীক্ষার আগের রাতে অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকে। তা করা ঠিক নয়। শোয়ার আগে ক্যাডেট কলেজের প্রবেশপত্র, জ্যামিতি বক্স, কলম–পেনসিল নির্ধারিত স্থানে রাখবে, সকালে উঠে যেন খোঁজাখুঁজি করতে না হয়।
কেন্দ্রের উদ্দেশে যাত্রা
সকালে কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করে নাশতা খেয়ে কেন্দ্রের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়বে, যাতে অবশ্যই নির্ধারিত কেন্দ্রে আটটার মধ্যে পৌঁছে যেতে পারো। কেন্দ্রে গিয়ে পরিচিত বন্ধুবান্ধব পেয়ে উল্লসিত হয়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু কোরো না; বরং চুপচাপ থাকবে। তোমাদের লাইনে দাঁড়াতে হবে। সারিবদ্ধভাবে পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকবে। কেন্দ্রের অবস্থান যদি অভিভাবকদের জানা না থাকে, তাহলে পরীক্ষার আগের দিন গিয়ে দেখে আসা ভালো।
হতে হবে কৌশলী
প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অনেক কৌশলী হতে হয়। আইনস্টাইন বলেছিলেন, ‘জ্ঞানের চেয়ে কল্পনা বেশি প্রয়োজন।’ বইয়ে সবকিছু লেখা থাকে না; উপস্থিত বুদ্ধি খাটিয়ে কাজ করতে হয়।
কাজে লাগাও সময়
৩০০ নম্বরের পরীক্ষার জন্য সময় ১৮০ মিনিট। অর্থাৎ প্রতি ১ নম্বরের জন্য সময় মাত্র ৩৬ সেকেন্ড। ওই পরীক্ষায় ভালো করার জন্য সবচেয়ে কার্যকর পরামর্শ হলো প্রশ্ন পড়ো এবং সঠিক উত্তরে টিকচিহ্ন দাও বা উত্তর লিখে ফেলো। কঠিন মনে হলে বাদ দাও এবং সামনে এগিয়ে যাও। এমনকি প্রশ্নটা সাইজে বড় হলে বা অপরিচিত মনে হলেও বাদ দিয়ে এগিয়ে যাও। এভাবে যদি প্রশ্নের উত্তর করতে পারো, তবে তোমার টেনশনও অনেক কমে যাবে। রচনামূলক প্রশ্নের উত্তরের জন্য যথেষ্ট সময় পাবে। এভাবে এগিয়ে গেলে অবশ্যই সফল হবে।
গুরুত্ব দিতে হবে সব বিষয়ে
শুধু এক বিষয় নিয়ে সময় নষ্ট করলে হবে না, তোমাকে সব বিষয়ে কমপক্ষে ৪০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে। তুমি ইংরেজি বা গণিতে ৯০ শতাংশ নম্বর পেলেও কাজ হবে না, যদি তুমি সাধারণ জ্ঞানে বা বাংলায় ৪০ শতাংশের কম নম্বর পাও। তাই প্রতিটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে উত্তর লিখতে হবে। প্রতিটি বিষয়ে স্বতন্ত্রভাবে পাস করলে এবং মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে তোমার অবস্থান যদি ছেলেদের মধ্যে প্রথম ৯০০ জন ও মেয়েদের
প্রথম ৩০০ জনের মধ্যে থাকে, তবেই তোমাকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত করা হবে। পরীক্ষায় পাস–ফেল বড় কথা নয়, অংশগ্রহণই আসল কথা। সবচেয়ে বড় কথা, ক্যাডেট কলেজের ভর্তি পরীক্ষার জন্য তুমি যে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছ, তা তোমার ভবিষ্যতের শিক্ষাজীবনকে সুগম করবে।
মো. আফলাতুন
অধ্যক্ষ
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সরকারি কলেজ, গাজীপুর