Thank you for trying Sticky AMP!!

বিশ্ববিদ্যালয়ের আগেই কলেজে ভর্তি নিয়ে প্রশ্ন

দেশের উচ্চশিক্ষায় ভর্তিতে সাধারণত শিক্ষার্থীদের প্রথম পছন্দ থাকে মেডিকেল, বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। আসনসংকটের কারণে পছন্দ অনুযায়ী ভর্তি হতে না পারলে ভর্তি–ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা সাধারণত কলেজসহ অন্যান্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির চিন্তা করেন।

কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের অধীন কলেজগুলোতে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তির আগেই স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি শেষ করে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ নিয়ে ভর্তি–ইচ্ছুক শিক্ষার্থী ও কলেজশিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তাঁরা বলছেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে শিক্ষার্থী ও কলেজ উভয়ই সমস্যায় পড়বে। এর মধ্যে শিক্ষার্থীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এ ছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোতে ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াই শুধু এসএসসি, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে ভর্তি করায় মান নিয়েও প্রশ্ন আছে।

অবশ্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অধ্যাপক মো. নাসির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেছেন, কলেজগুলোতে আগেভাগে ভর্তি কার্যক্রমের কারণে শিক্ষার্থীদের সমস্যা হবে না। কারণ, মেধাতালিকায় থাকলে একাধিক ধাপে ভর্তির সুযোগ রাখা হয়েছে। আর যে সময় রাখা হয়েছে, সেই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তির কাজও প্রায় শেষ হয়ে যাবে। এ ছাড়া কোনো শিক্ষার্থী অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলে যেতে চাইলে সহজে ছাড়পত্র দিতে কলেজগুলোতে বলা হচ্ছে।

 জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আগামী ১ অক্টোবর থেকে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোতে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার আগে ১ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনলাইনে ভর্তির আবেদন গ্রহণ করা হবে। এরপর ভর্তির কাজটি হবে।

অথচ এই সময়ে অন্যান্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা চলবে। যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে ১৩ সেপ্টেম্বর; শেষ হবে ২৮ সেপ্টেম্বর। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা হবে আগামী ২০, ২১ ও ২২ অক্টোবর। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৪ আগস্ট ঠিক করবে, কবে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা হবে। এমনকি কৃষিবিষয়ক ৭ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা হবে আগামী ৩০ নভেম্বর। ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মো. আখতার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আগামী ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত অনলাইনে এই ৭টিতে ভর্তি পরীক্ষার জন্য আবেদন নেওয়া হবে।

>

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আগেভাগে ভর্তির উদ্যোগ
ভর্তি-ইচ্ছুক ও কলেজশিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ
শিক্ষার্থী ও কলেজ উভয়ই সমস্যায় পড়বে
শিক্ষার্থীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন

দেশে স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে ৪৯টি। এর মধ্যে ৪৪টিতে শিক্ষা কার্যক্রম চালু আছে। আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ৮৫৭টি কলেজে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে আসন আছে ৪ লাখ ২০ হাজার। যদিও গতবার ভর্তি হয়েছিল ৩ লাখ ৯৬ হাজার।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির অধীন সরকারি কলেজের শিক্ষকদের অনেকেই ক্ষোভ জানিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক প্রথম আলোকে তাঁদের ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনা করে মন্তব্য করছেন। তাঁরা বলছেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আর্থিকভাবে লাভবান হতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে শিক্ষার্থীরা আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়বেন। যেমন একজন ভর্তি–ইচ্ছুক শিক্ষার্থীকে ২৫০ টাকা ফি দিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। তারপর এসএসসি, এইচএসসি ও সমমানের ফলের ভিত্তিতে কোনো কলেজে ভর্তির জন্য সুযোগ পেলে শুধু ৪৮০ টাকা নিবন্ধন ফি দিয়ে ভর্তি হতে হবে। এরপর দেখা গেল, ওই শিক্ষার্থী তাঁর পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেন। তখন আবেদন ফির খরচ তো যাবেই, কলেজের ভর্তি বাতিল করে সেই টাকা পাওয়া কঠিন হয়। কেউ পায় না, কেউবা আংশিক পায়। আবার ওই ছাত্রটি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যাবেন তখন কলেজে তাঁর আসনটি ফাঁকা হয়ে যায়। এতে কলেজ কর্তৃপক্ষ সমস্যায় পড়বে।

এ বিষয়ে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এটা আসলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের টাকা আয়ের একটি কৌশল। বাস্তবতা হলো, প্রথমে ভর্তির কাজটি করা হলে আবেদনকারীদের একটি বড় অংশই পরে বুয়েট, মেডিকেলসহ বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবে। কিন্তু আগে ভর্তি হওয়ায় শিক্ষার্থীদের আবেদন ও ভর্তির ফি জমা দিতে হবে। তাঁর মতে, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করেই কলেজে ভর্তির কাজটি হওয়া উচিত।