রাকিব এবং আরও রাকিব

রাকিবের ক্যারিকেচার করেছেন তিনি নিজেই
ছবি: সুমন ইউসুফ

রাকিব রাজ্জাককে কী বলে পরিচয় করিয়ে দেব? তিনি কার্টুন আঁকেন, ঢাকার ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভের চারুকলা বিভাগে পড়েন, দেশের কে-পপ (কোরিয়ান পপ) কমিউনিটিতে 'ড্যান্সার' হিসেবেও তাঁর সুনাম আছে। সব ছাপিয়ে কার্টুনিস্ট পরিচয়টা বোধ হয় তাঁর সবচেয়ে পছন্দ। অতএব কার্টুনের গল্প দিয়েই শুরু করা যাক।

রাকিব+কার্টুনস = রাকিবটুনজ

কার্টুন আঁকার শুরুটা কীভাবে হলো, জানতে হলে তাঁর স্কুলজীবনের স্মৃতিতে উঁকি মারতে হবে। খাতার পেছনে চলত আঁকাআঁকি। ২০১৫ সালে মাসিক সাময়িকী কিশোর আলোতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যোগ দেওয়ার পর নতুন এক পৃথিবী আবিষ্কার করেন তিনি। ধীরে ধীরে পরিচয় হয় দেশের নামী কার্টুনিস্টদের সঙ্গে। শেখা আর আঁকা—দুটোই চলতে থাকে। ২০১৬ সালে তৈরি হয় কার্টুনিস্টদের একটি দল 'কার্টুন পিপল'। রাকিবও যোগ দেন সেই দলে। নিজের মতো একদল মানুষের সঙ্গ পেয়ে দক্ষতা বাড়ে আরও।

এখন পেশাদার কার্টুনিস্ট হিসেবে কাটে তাঁর ব্যস্ত সময়। কিশোর আলো ও উন্মাদ ম্যাগাজিনের নিয়মিত কার্টুনিস্ট রাকিব দৈনিক পত্রিকায়ও এঁকেছেন বহুবার। পাশাপাশি ইউনিসেফ ও ব্র্যাকের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। আর বইয়ের প্রচ্ছদের কাজ তো আছেই। বইমেলার সময় দম ফেলার ফুরসত হয় না তাঁর। রাকিবের আঁকা কার্টুনে ভরপুর একটা ইনস্টাগ্রাম পেজও আছে, নাম রাকিবটুনজ।

পত্রিকা ও বইয়ের পাতায় বহু কমিকস এঁকেছেন। বিশেষ করে বলতে হয় ২০১৯ সালে মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্র ন ডরাই নিয়ে তৈরি কমিকসের কথা। রাকিবের ইচ্ছা—ভবিষ্যতে বাচ্চাদের জন্য নিজের গল্পে কমিকস আঁকবেন। মাইটিপাঞ্চ স্টুডিওর সঙ্গে বেশ কয়েকটি অ্যানিমেশনের কাজও তিনি করেছেন। সম্প্রতি একটি গেম তৈরির কাজে অ্যানিমেটর হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি।

এলএক্সএস

২০১৯ সালে রাকিব ও তাঁর বন্ধুরা মিলে কে-পপ ড্যান্সারদের একটা দল গড়ে তোলেন। দলের নাম এলএক্সএস। জনপ্রিয় কে-পপ ব্যান্ডগুলোর পারফরম্যান্স কাভার করতে শুরু করেন তাঁরা। দল তৈরির কিছুদিন পরই শুরু হয় করোনা, তাই নিজেদের চেনাতে একটু সময় লেগে গেছে এলএক্সএসের। তবে ঘরে বসে থাকার সময়টায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁদের বেশ কিছু ভিডিও সাড়া ফেলেছে। গত বছর কে-পপ ভক্তদের এক অনুষ্ঠানে এলএক্সএসের অভিষেক হয়। অভিষেকেই পুরস্কার জিতে নেয় রাকিব ও তাঁর দল।

কে–পপ ড্যান্সার হিসেবে রাকিব সবচেয়ে বড় সাফল্য পেয়েছেন এ বছর। প্রতিবছর সারা বিশ্বে আয়োজন করা হয় 'কে-পপ ওয়ার্ল্ড ফেস্টিভ্যাল'। বিভিন্ন দেশে স্থানীয় প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বেছে নেওয়া হয় সেরা ছয়টি দল। বিজয়ীদের নিয়ে হয় আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা। এ বছর বাংলাদেশে অডিশনের আয়োজন করে কোরীয় দূতাবাস। বাংলাদেশে গ্লোবাল অডিশনে ৩০০ দলের মধ্যে চ্যাম্পিয়নের পুরস্কার জিতে নেয় রাকিবের দল এলএক্সএস। করোনার কারণে এ বছর এই প্রতিযোগিতার আন্তর্জাতিক পর্ব অনুষ্ঠিত না হলেও গ্লোবাল অডিশনে চ্যাম্পিয়নের পুরস্কার হিসেবে এলএক্সএস পেয়েছে এক হাজার ইউএস ডলার (প্রায় ৮৫ হাজার টাকা)।

আরও রাকিব

অলরাউন্ডার রাকিবের আরও একটা পরিচয় আছে। বিজ্ঞাপন ও পত্রিকায় মডেল হিসেবে একাধিকবার দেখা গেছে তাঁর মুখ। কিশোর আলোর পাতায় ও প্রচ্ছদে মডেল হিসেবে কাজ করেছেন। বেশ কিছু বিজ্ঞাপনচিত্রেও অভিনয় করেছেন তিনি।

পড়ালেখার পাশাপাশি এত কিছু কীভাবে সামলান? রাকিব রাজ্জাকের সোজা উত্তর, 'পড়ালেখাটা যদি পছন্দের বিষয় নিয়ে করা যায়, তাহলে বাকিটা সহজ হয়ে যায়। আমি স্কুলেও আঁকাআঁকি করেছি, কলেজেও নিয়মিত এঁকেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলাতেই ভর্তি হয়েছি। আমার কাজের ক্ষেত্রটা পড়ালেখাকেন্দ্রিক বলে ভার্সিটির শিক্ষক ও বন্ধুদের থেকেও অনেক সহযোগিতা পাই। তাই পড়ালেখা ও কাজ দুটোই সমানতালে চালিয় যেতে পারছি।'

পড়ালেখা ও ক্যারিয়ারের ভবিষ্যৎ নিয়েও ভেবে রেখেছেন এই তরুণ কার্টুনিস্ট। কার্টুন আর আঁকাআঁকি নিয়েই থাকতে চান তিনি। আগামী বছর স্নাতক শেষ হলে স্নাতকোত্তর করতে দেশের বাইরে যাওয়ার কথা ভাবছেন। কোরিয়া বা জাপান থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পর কাজ করতে চান বিশ্বের বড় কোনো অ্যানিমেশন স্টুডিওতে। মোটকথা, সামনের দিনগুলোও তাঁর আঁকা কার্টুনের মতো রঙিন হোক, এটাই রাকিবের চাওয়া।