
যুক্তরাষ্ট্রের নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থী অধ্যাপকের চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করে পাঠদানের অভিযোগ করেছেন। এ অভিযোগ করেই ক্ষান্ত থাকেননি তিনি, ফেরত চেয়েছেন টিউশন ফি।
নিউইয়র্ক টাইমসের খবরের বরাত দিয়ে ফরচুন ডটকমের খবরে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী এল্লা স্ট্যাপ্লেটন অভিযোগ করেছেন, তাঁর অধ্যাপক রিক অ্যারোউড লেকচার নোট ও স্লাইড তৈরিতে চ্যাটজিপিটি, পারপ্লেক্সিটি এআই এবং গামাসহ নানা এআই টুলস ব্যবহার করেছেন। অথচ শিক্ষার্থীদের এআই ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছিল। স্ট্যাপ্লেটন বলেন, লেকচার নোটে ‘ChatGPT’ শব্দের উল্লেখ, বারবার বানান ভুল এবং অতিরিক্ত অঙ্গসহ মানুষের ছবি দেখে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘শিক্ষকেরা আমাদের এআই ব্যবহার করতে নিষেধ করছেন, অথচ নিজেরাই তা ব্যবহার করছেন।’
এ ঘটনায় স্ট্যাপ্লেটন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করেন। তিনি ওই কোর্সের ৮,০০০ ডলারের বেশি টিউশন ফি ফেরত চান। তবে একাধিক বৈঠকের পর বিশ্ববিদ্যালয় তার দাবি নাচক করে দিয়েছে।
অধ্যাপক অ্যারোউড দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেছেন, তিনি বিভিন্ন এআই টুল ব্যবহার করেছেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে চ্যাটজিবিটি, পারপ্লেক্সিটি এআই সার্চ ইঞ্জিন এবং প্রেজেন্টেশন জেনারেটর গামা এআই। তিনি বলেন, ‘পেছন ফিরে তাকালে, আমি চাইতাম বিষয়টি আরও গভীরভাবে বিবেচনা করতে। আমি এখন মনে করি, অধ্যাপকদের উচিত এআই ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করা এবং শিক্ষার্থীদের কাছে স্বচ্ছ থাকা। যদি আমার অভিজ্ঞতা এমন কিছু হতে পারে, যা থেকে মানুষ শিখতে পারে, তাহলে ঠিক আছে, এটি আমার আনন্দের বিষয়।’
নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির কমিউনিকেশনস বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট রেনাটা নিউল ফরচুনকে বলেন, শিক্ষাদান, গবেষণা এবং শিক্ষাকার্যক্রমের সব দিক উন্নত করার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারকে গ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যথাযথ ব্যবহারকে সমর্থন করার জন্য নানা সহায়তাও করে এবং প্রাসঙ্গিক নীতিগুলো হালনাগাদ এবং তা প্রয়োগ করে চলেছে।
আমেরিকার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এআই ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ২০২২ সালের শেষের দিকে চ্যাটজিপিটি আসার পর শিক্ষার্থীরাই ছিলেন এর বেশি ব্যবহারকারী। তাঁরা দ্রুত বুঝে ফেলেন যে এটি ব্যবহার করে কম সময়েই প্রবন্ধ ও অ্যাসাইনমেন্ট শেষ করতে পারছেন। এআইয়ের ব্যাপক ব্যবহারে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের মধ্যে অবিশ্বাস তৈরি হয়। কারণ, অধ্যাপকেরা শিক্ষার্থীদের এআই ব্যবহারের প্রমাণ খুঁজে বের করতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। এখন পরিস্থিতি কিছুটা পাল্টে গেছে। শিক্ষার্থীরা এখন রেট মাই প্রফেসরসসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে গিয়ে শিক্ষকদের এআই ব্যবহারের বা অতিরিক্ত ব্যবহারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন। তাঁরা আরও যুক্তি দিচ্ছেন, এ কাজ তাঁদের টিউশন ফির অবমূল্যায়ন করে, কারণ, তাঁরা তো মানুষের কাছ থেকে শিক্ষা পেতে টাকা দিচ্ছেন, এমন প্রযুক্তি থেকে নয়, যা তাঁরা নিজেরাই বিনা মূল্যে ব্যবহার করতে পারবেন।
নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির এআই নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো ফ্যাকাল্টি বা শিক্ষার্থী যদি কোনো এআই সিস্টেম ব্যবহার করে কোনো বিষয়বস্তু তৈরি করেন, যা কোনো একাডেমিক প্রকাশনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় বা যেকোনো প্রতিষ্ঠান বা প্রকাশনায় জমা দেওয়া হয়, তবে সে ক্ষেত্রে উপযুক্ত স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে। নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, যেসব ব্যক্তি এ প্রযুক্তি ব্যবহার করবেন, তাঁদের অবশ্যই ‘নিয়মিতভাবে এআই সিস্টেমের আউটপুটের যথার্থতা ও প্রাসঙ্গিকতা যাচাই করতে হবে এবং প্রয়োজনে তা সংশোধন বা হালনাগাদ করতে হবে।’