ইংরেজি ভোকাবুলারি: স্টক ভালো থাকার সুবিধা ও দুর্বল থাকার অসুবিধা

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় ইংরেজি একটি অপরিহার্য বিষয়। তবু দেখা যায়, অনেক শিক্ষার্থী পরীক্ষায় ভালো ফল করলেও বাস্তবে ইংরেজির ব্যবহার ঠিকমতো করতে পারে না। যা–ও কেউ কেউ পারে, তারা ইংরেজি ব্যবহার করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ে। এর প্রধান কারণ হলো দুর্বল ভোকাবুলারি বা সীমিত শব্দভান্ডার।

ভোকাবুলারি বা শব্দভান্ডার হলো ইংরেজি শেখার প্রথম ও প্রধান ভিত্তি। যেমন একটি বাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে শক্ত বা মজবুত ভিত্তির ওপর, তেমনি ইংরেজি শেখার ভিত্তি হলো ভোকাবুলারি। ভোকাবুলারি সমৃদ্ধ থাকলে ইংরেজি শেখা সহজ ও আনন্দের হয়। আর দুর্বল থাকলে শেখা হয় কষ্টকর ও বিরক্তিকর।

সমৃদ্ধ ভোকাবুলারির সবচেয়ে বড় সুবিধা, পাঠ্যবই বোঝা সহজ হয়। প্রতিটি শ্রেণির ইংরেজি গল্প, কবিতা বা প্রবন্ধ তখন আর কঠিন মনে হয় না। পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তর লিখতেও শিক্ষার্থীরা সঠিক শব্দ খুঁজে পায়। ফলে তাদের উত্তর হয় সাবলীল ও মানসম্মত। শুধু তা–ই নয়, শব্দভান্ডার ভালো থাকলে লেখার মানও উন্নত হয়, যা ভালো ফলের জন্য অপরিহার্য।

ভোকাবুলারিতে দক্ষতা শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। মৌখিক পরীক্ষা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা বা ক্লাসে উপস্থাপনায় যারা সমৃদ্ধ শব্দভান্ডার ব্যবহার করতে পারে, তারা সহজেই অন্যদের থেকে আলাদা হয়ে যায়। তাদের কথা স্পষ্ট ও প্রাঞ্জল শোনায়, ফলে সবাই সহজে বুঝতে পারে। এই আত্মবিশ্বাস ভবিষ্যতের শিক্ষাজীবন ও কর্মজীবনেও খুব কাজে লাগে।

আজকের যুগে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা, যেমন আইএলটিএস, টোয়েফল বা জিআরইতে ভোকাবুলারির গুরুত্ব অনেক বেশি। বিদেশে পড়াশোনা করতে চাইলে বা গবেষণামূলক কাজে যুক্ত হতে চাইলে ‘ভোকাবুলারি দক্ষতা’ অপরিহার্য। শুধু একাডেমিক জীবন নয়, বাস্তব জীবনেও এর গুরুত্ব সমান। বিদেশি ওয়েবসাইট ব্যবহার, নতুন জ্ঞান অর্জন কিংবা আধুনিক প্রযুক্তি শেখার ক্ষেত্রেও সমৃদ্ধ ভোকাবুলারি বড় ভূমিকা রাখে।

লেখক

চাকরি ও কর্মক্ষেত্রেও ভোকাবুলারির প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজকের প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে শুধু মেধাবী হওয়া যথেষ্ট নয়, দক্ষতার সঙ্গে ইংরেজি ব্যবহার জানাও জরুরি। অফিস মিটিং, রিপোর্ট লেখা, ই–মেইল করা কিংবা বিদেশি সহকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ—সব জায়গায় ইংরেজি ব্যবহৃত হয়। ভোকাবুলারি সমৃদ্ধ না হলে এই কাজগুলোয় সঠিকভাবে নিজেকে প্রকাশ করা সম্ভব হয় না। ফলে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অনেকে পিছিয়ে পড়ে।

অন্যদিকে ভোকাবুলারি দুর্বল হলে নানা অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবই পড়তে গিয়ে জটিল শব্দে আটকে যায়। পরীক্ষায় উত্তর লিখতে গিয়ে সঠিক শব্দ খুঁজে না পাওয়ায় উত্তর অসম্পূর্ণ থেকে যায়। মৌখিক পরীক্ষায় তোতলানো বা থেমে থেমে কথা বলার প্রবণতা দেখা দেয়। বিতর্ক বা উপস্থাপনায় অংশ নিতে তারা সংকোচ বোধ করে। এতে তাদের আত্মবিশ্বাস ভেঙে যায়।

শুধু একাডেমিক জীবন নয়, কর্মজীবনেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ বা বৃত্তি অনেক সময় হাতছাড়া হয়। চাকরির সাক্ষাৎকারেও দুর্বল ভোকাবুলারি প্রার্থীর যোগ্যতাকে আড়াল করে ফেলে। একজন মেধাবী প্রার্থী শুধু শব্দভান্ডারের ঘাটতির কারণে কাঙ্ক্ষিত পদ পায় না।

তবে ভোকাবুলারি সমৃদ্ধ করা খুব কঠিন কাজ নয়। নিয়মিত ইংরেজি অভিধান, ইংরেজি পত্রিকা এবং ইংরেজি বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। নতুন শব্দ পেলে তা নোটবুকে লিখে রাখা উচিত। অভিধান ব্যবহার করা এবং প্রতিদিন অন্তত একটি নতুন শব্দ শেখার অভ্যাস তৈরি করলে ধীরে ধীরে শব্দভান্ডার সমৃদ্ধ হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো শেখা শব্দগুলো বাস্তবে প্রয়োগ করা। বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলা, ডায়েরি লেখা বা ক্লাসে ব্যবহার করার মাধ্যমে নতুন শব্দ স্থায়ীভাবে মনে রাখা সম্ভব।

শেষে বলা যায়, ইংরেজি ভোকাবুলারি শক্তিশালী করা প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য অনেক জরুরি। এটি ভালো থাকলে তারা শুধু পরীক্ষায় নয়, বাস্তব জীবন, উচ্চশিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রেও সফল হতে পারবে। আর দুর্বল থাকলে জীবনের অনেক সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাবে। তাই এখন থেকেই শিক্ষার্থীদের উচিত নিজের ‘ভোকাবুলারি’ সমৃদ্ধ করার দিকে মনোযোগী হওয়া।

লেখক: ইকবাল খান, প্রভাষক, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ, ঢাকা