আজ ২৪ জানুয়ারি বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস ২০২৫ ’। ২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের ৭৩/২৫ নম্বর প্রস্তাব অনুযায়ী দিনটি পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় এবং বৈশ্বিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় শিক্ষার ভূমিকা তুলে ধরতে দিনটি পালনের সিদ্ধান্ত নেয় জাতিসংঘ। এতে খুব গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হয়েছে ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-২০৩০ ’। ২০১৫ সালে ঘোষিত এ লক্ষ্যমাত্রার ৪ নম্বর অনুচ্ছেদে সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং জীবনব্যাপী শিক্ষা লাভের সুযোগ সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে।
২০১৯ সাল থেকে শিক্ষা দিবস পালিত হচ্ছে। এবারের প্রতিপাদ্য ‘এআই ও শিক্ষা: স্বয়ংক্রিয় বিশ্বে মানুষের সুরক্ষা’। আমাদের চোখের সামনেই ক্রমাগত বদলে যাচ্ছে পৃথিবীর পটভূমি। তথ্যপ্রযুক্তির দখলে চলে যাচ্ছে সবকিছু। বিশেষত, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ছড়ি ঘোরাতে শুরু করেছে প্রবলভাবে। এর বহুমাত্রিক ব্যবহারের নৈতিক ভিত্তি নিয়ে অন্তহীন তর্ক করা যেতে পারে, কিন্তু একে অস্বীকার করা যায় না। আশঙ্কা আছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অদূরে মানুষের বুদ্ধিমত্তাকে টেক্কা দিতে পারে। সন্দেহ নেই, এতে বহুমুখী ঝুঁকি আছে। আছে সভ্যতার অস্তিত্ব-সুরক্ষার মৌলিক প্রশ্ন। কিন্তু একে যথাযথ ব্যবহার করতে পারলে যে মানবসভ্যতা পৌঁছে যেতে পারে সর্বোৎকৃষ্ট পর্যায়ে, আছে সেই অপার সম্ভাবনাও। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে যেমন স্পষ্ট ধারণা থাকা জরুরি, তেমনই জরুরি এটি ব্যবহারের দক্ষতাজ্ঞান।
অন্য সব ক্ষেত্রের মতো শিক্ষাক্ষেত্রেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অকল্পনীয় প্রভাব ফেলেছে। শ্রেণিকক্ষের পাঠ্যবই থেকে জটিল গবেষণা—সব ক্ষেত্রেই এআইয়ের সগৌরব উপস্থিতি। তাই স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষাক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও প্রযুক্তির প্রভাবকে কেন্দ্র করে নির্ধারিত হয়েছে এবারের শিক্ষা দিবসের প্রতিপাদ্য। বস্তুত এর মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থাকে এমনভাবে গড়ে তোলার ব্যাপারে জোরারোপ করা হচ্ছে, যাতে মানুষ প্রযুক্তির এই ত্বরিত পরিবর্তনগুলো সহজে বুঝতে পারে, এর সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে এবং এটিকে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারে।
এ প্রসঙ্গে আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জাতিসংঘের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইউনেসকো বলেছে, যেহেতু কম্পিউটার ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর পদ্ধতি ক্রমে উন্নত হচ্ছে, মনুষ্য ইচ্ছা ও যন্ত্রচালিত ক্রিয়াকলাপের মধ্যকার সীমানাপ্রাচীর প্রায়ই ঝাপসা হয়ে আসছে; তাই স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন বেশ বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে মানুষের সামনে। তা হলো, তীব্র প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার এই যুগে মানুষ কীভাবে তার সক্ষমতাকে সুরক্ষিত করবে, সক্ষমতার নবতর সংজ্ঞা তৈরি করবে এবং অত্যাবশ্যকীয়ভাবে এর উন্নতি ঘটাবে। এ অবস্থায় প্রযুক্তিগত অগ্রগতি যেন মানুষের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে শিক্ষা হতে পারে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক।