
এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় প্রকৃত নম্বর প্রদানের নীতি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার। তিনি বলেছেন, যোগ্যতার সঠিক মূল্যায়ন ছাড়া শিক্ষার মানোন্নয়ন অসম্ভব। তাই নম্বর বাড়ানোর সংস্কৃতি কখনোই ফিরে আসবে না। গতকাল শনিবার (২৯ নভেম্বর ২০২৫) ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদের উদ্যোগে ফরিদপুর সদর উপজেলা মিলনায়তনে বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চলের শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষা-অংশীজনদের নিয়ে সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপদেষ্টা এ কথা বলেন। ফরিদপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ ও পার্শ্ববর্তী এলাকার শতাধিক শিক্ষক এতে অংশ নেন।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘শিক্ষকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকার দেশব্যাপী অংশীজনদের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ পরিচালনা করছে। আজকের আলোচনায় উত্থাপিত প্রস্তাব ও উদ্বেগ আমাদের নীতি প্রণয়নে মূল্যবান দিকনির্দেশনা দেবে।’ তিনি জানান, অতীতে শিক্ষক কল্যাণ তহবিল ও অবসরকালীন সুবিধা পরিচালনায় মারাত্মক অব্যবস্থাপনার কারণে উদ্বেগজনক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘ডায়ালিসিস, ক্যানসারসহ গুরুতর রোগে আক্রান্ত শিক্ষক বছরের পর বছর তাঁদের প্রাপ্য অর্থ না পাওয়া অমানবিক। আমরা এর দ্রুত সমাধানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিচ্ছি।’ এই সমস্যা সমাধানে ইতিমধ্যে অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ, হিসাবপত্র হালনাগাদ ও সরকারের অতিরিক্ত বরাদ্দ নিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, অল্প সময়ের মধ্যেই বকেয়া অর্থের নিষ্পত্তি শুরু হবে।
কলেজ পর্যায়ে ১ হাজার ৮০০-এর বেশি শিক্ষককে প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে প্রমোশনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়েছে। এটি কোনো অনুগ্রহ নয়; এটি শিক্ষকদের ন্যায্য অধিকার।শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার
গুণগত শিক্ষার জন্য সামগ্রিক সংস্কারের ঘোষণা দিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘শিক্ষকতার মর্যাদা ও পেশাগত উন্নয়নে নতুন উদ্যোগ চলছে। জাল সনদ, নোটবই নির্ভরতা, প্রাইভেট টিউশনসহ দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধানে বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পাঠাগার পুনরুজ্জীবন, ছাত্র মূল্যায়নব্যবস্থার পুনর্গঠন এবং শিক্ষকদের উপস্থিতি নিশ্চিতকরণে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
পাবলিক ও প্রাইভেট শিক্ষার মানের বৈষম্য কমাতে সরকার কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে শিক্ষা উপদেষ্টা আশাবাদ ব্যক্ত করেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশকে দলীয় রাজনীতি থেকে মুক্ত রাখতে হবে। যাঁরা রাজনীতি করতে চান, তাঁরা রাজনীতিতেই যুক্ত হোন; কিন্তু শ্রেণিকক্ষের নিরপেক্ষতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। শিক্ষা ও রাজনীতির অনাকাঙ্ক্ষিত সংমিশ্রণ বহু প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।’
গত সপ্তাহে কলেজ পর্যায়ে ১ হাজার ৮০০-এর বেশি শিক্ষককে প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে প্রমোশনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হওয়ার কথা উল্লেখ করে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘এটি কোনো অনুগ্রহ নয়; এটি শিক্ষকদের ন্যায্য অধিকার। ভবিষ্যতেও প্রমোশনের স্থবিরতা দূর করা হবে।’ এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় প্রকৃত নম্বর প্রদানের নীতি অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, ‘যোগ্যতার সঠিক মূল্যায়ন ছাড়া শিক্ষার মানোন্নয়ন অসম্ভব। তাই নম্বর বাড়ানোর সংস্কৃতি কখনোই ফিরে আসবে না।’ দেশের বর্তমান সংবেদনশীল পটভূমি উল্লেখ করে সি আর আবরার বলেন, ‘আমরা ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি। বিচার, সংস্কার ও স্বচ্ছ নির্বাচন—এই তিন অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। নাগরিকের অধিকার ও প্রজাতন্ত্রের মর্যাদা পুনঃস্থাপনই নতুন বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য।’
শিক্ষা উপদেষ্টা উপস্থিত সব শিক্ষক ও অংশীজনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, লিখিত মতামত আগামী তিন দিনের মধ্যে জমা দিলে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তা অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এই আলোচনাকে আমরা নীতিগত সিদ্ধান্তে রূপ দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ফরিদপুর নিজের জন্মভূমি উল্লেখ করে তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে বিশেষ আবেগ অনুভব করেন এবং সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
সেমিনারে সম্মানিত অতিথি হিসেবে ছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন, বিশেষ অতিথি ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক বি এম আবদুল হান্নান, সভাপতিত্ব করেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান মোল্যা। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সম্মানিত শিক্ষকেরা, অতিথিরা ও বিশিষ্ট নাগরিক। তথ্যসূত্র: শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পোস্ট