Thank you for trying Sticky AMP!!

প্রতীকী ছবি

ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার আগেই তোমার যেসব দক্ষতা থাকা উচিত

একটা সময় অভিভাবকেরা সন্তানদের কম্পিউটার বা ল্যাপটপ ব্যবহার করতে দিতে চাইতেন না। অনেক অভিভাবকের ধারণা ছিল, কম্পিউটার বা ল্যাপটপ সন্তানদের পড়াশোনার জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু সেই ভুল ধারণা এখন অনেকাংশে কমে গেছে। কারণ, কম্পিউটার ও ডিজিটাল প্রযুক্তি আজকের বিশ্বের অপরিহার্য অংশ। স্কুল, কলেজ, কর্মক্ষেত্র এমনকি আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে প্রতিদিন এর প্রয়োজন রয়েছে।

করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়ার আগে অনলাইনে ক্লাস করা বা পড়াশোনা করা যায় আমরা যেন ভাবতেই পারিনি। মহামারির কারণে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাসায় বসে অনলাইনে শিক্ষা প্রদানের জন্য ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে।  

শুধু শিক্ষার জন্য নয়, ক্যারিয়ারের জন্যও ডিজিটাল দক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগেই কিছু মৌলিক ডিজিটাল দক্ষতা তোমার থাকা উচিত। এসব দক্ষতা তোমার পড়াশোনা ও কর্মজীবনে সফল হতে সাহায্য করবে। ডিজিটাল দক্ষতা অর্জন তোমাকে একটি প্রতিযোগিতামূলক বাজারে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে এবং তোমার কাজের গতি বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে।

শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু ডিজিটাল দক্ষতা হলো—

১. কম্পিউটারের মৌলিক বিষয়

কম্পিউটারের মৌলিক বিষয়গুলো বুঝা যেকোনো ডিজিটাল দক্ষতার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। প্রথমেই শিখতে হবে একটি কম্পিউটার কীভাবে কাজ করে, কীভাবে এটি চালু হয়, বন্ধ হয়, কীভাবে ফাইলগুলো খোলা, সংরক্ষণ বা মুছে ফেলা যায়। তা ছাড়া কীভাবে ডেটা ডাউনলোড, আপলোড, সংরক্ষণ করতে হয় তার ধারণা লাগবে। সেই সঙ্গে কম্পিউটারের মৌলিক কিছু সেটিংস এবং কীভাবে ডিভাইস কার্যকরভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়, সেটাও আমাদের শিখতে হবে।

২. কি–বোর্ডিং

দ্রুত ও সঠিকভাবে কি–বোর্ডিং করতে পারা গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা। এটি তোমার কাজ আরও দক্ষতার সঙ্গে সম্পাদন করতে এবং সময় বাঁচাতে সহায়তা করবে। কি–বোর্ডিং দক্ষতা মানে হলো তোমাকে দ্রুত টাইপিং করা জানতে হবে এবং কি–বোর্ডের শর্টকাটগুলো জানতে হবে। শর্টকাটগুলো জানলে তুমি অল্প সময়ে অনেক বেশি কাজ করতে পারবে। মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের কিছু কমন কি–বোর্ড শর্টকাট হলো—

Ctrl+C (কপি করতে)

Ctrl+F (খুঁজে পেতে)

Ctrl+S (সেভ করতে)

Ctrl+V (পেস্ট করতে)

Ctrl+Z (ফিরে যেতে) ইত্যাদি।

বিভিন্ন সফটওয়্যারের শর্টকাট কিছুটা ভিন্ন হয়। তাই যে সফটওয়্যারেই কাজ করি না কেন, তার কিছু মৌলিক শর্টকাট জেনে নিলে কাজের গতি বাড়বে।

ভার্সিটিতে ভর্তি হলেই কিন্তু তোমাকে বিভিন্ন বিষয়ে অ্যাসাইনমেন্ট করতে হবে। নিয়মিত আবার দিতে হবে প্রেজেন্টেশন। অ্যাসাইনমেন্ট ও প্রেজেন্টেশন সম্পন্ন করতে তোমাকে জানতে হবে ওয়ার্ড ফাইল, এক্সেল ও পাওয়ারপয়েন্টের কাজ। তোমার কি–বোর্ডিং দক্ষতা সেই কাজগুলো অনেক সহজ ও দ্রুত করে তুলবে।

৩. স্প্রেডশিট (গুগল শিট/ এক্সেল ফাইল)  

যখন তোমাকে অসংখ্য তথ্য–উপাত্ত নিয়ে কাজ করতে হবে, তখনই তোমার প্রয়োজন পড়বে স্প্রেডশিট ব্যবহারের। এক্সেল বা গুগল শিটে মৌলিক গাণিতিক ফাংশন থেকে শুরু করে জটিল সব তথ্য গ্রাফ বা চার্টের মাধ্যমে সহজে উপস্থাপন করা যায়।  

ভার্সিটিতে তোমাকে প্রায়ই ডেটা নিয়ে কাজ করতে হবে। ডেটাভিত্তিক নির্ভুল তথ্য বিশ্লেষণ করতে মাইক্রোসফট এক্সেল বা গুগল শিট ব্যবহারের বিকল্প নেই। তুমি যে বিষয়ে পড়াশোনা করো না কেন, এই সফটওয়্যারের ওপর দক্ষতা তোমার পড়াশোনা ও ক্যারিয়ার প্রস্তুতিকে আরও সুদৃঢ় করবে।  

৪. প্রেজেন্টেশন (পাওয়ারপয়েন্ট)

প্রেজেন্টেশনের (উপস্থাপন) দক্ষতা শিক্ষাজীবন ও কর্মজীবনে তোমাকে সফল হতে সাহায্য করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে তোমাদের প্রায়ই কাজ বা রিসার্চ সম্পর্কে প্রেজেন্টেশন দিতে হবে। তা ছাড়া ক্লাস, সেমিনার ও অন্যান্য আয়োজনের বিষয়ে প্রেজেন্টেশন দিতে হতে পারে। কর্মক্ষেত্রেও একজন কর্মীকে প্রায়ই কলিগ বা ক্লায়েন্টদের কাছে প্রেজেন্টেশন দিতে হয়।

মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্টে দক্ষতা থাকলে এ প্রেজেন্টেশনগুলো তুমি খুব চমৎকারভাবে তৈরি ও উপস্থাপন করতে পারবে। কিছু নির্দিষ্ট পাওয়ারপয়েন্ট দক্ষতা রয়েছে, যা তোমাকে ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার আগেই শিখতে হবে যেমন স্লাইড তৈরি করা এবং সেখানে টেক্সট, ছবি, অডিও–ভিডিও যুক্ত করা ইত্যাদি।  

৫. নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার

আমরা প্রতিদিন বিভিন্ন কাজে ইন্টারনেট ব্যবহার করি। তবে অনলাইনে হ্যাকিং, ম্যালওয়্যার, প্রতারণা ইত্যাদির অনেক ঝুঁকি রয়েছে। নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহারের দক্ষতা থাকলে আমরা এসব ঝুঁকি এড়াতে পারি এবং প্ল্যাটফর্মগুলো আরও স্বতঃস্ফূর্তভাবে ব্যবহার করতে পারি।  

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগে নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার শেখার প্রয়োজন। এটি অনলাইনে তোমাকে এবং তোমার অনলাইনে সংরক্ষিত তথ্য রক্ষা করতে সাহায্য করবে। নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য কিছু টিপস—  

  • ইন্টারনেট নিরাপত্তা সম্পর্কে শেখা।  

  • তোমার পাসওয়ার্ড শক্তিশালী ও ইউনিক রাখা।

  • তোমার একান্ত ব্যক্তিগত তথ্য অনলাইনে প্রকাশ না করা।

  • কোনো অপরিচিত লিংকে ক্লিক করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা।

  • অপরিচিত কোনো লিংক থেকে কোনো ফাইল ডাউনলোড না করা।

৬. সোশ্যাল মিডিয়ার সদ্ব্যবহার

সামাজিক মিডিয়া একটি শক্তিশালী ও গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগের মাধ্যম। সামাজিক মিডিয়া ব্যবহারের সময় কিছু শিষ্টাচার মেনে চলা উচিত। তোমার সামাজিক যোগাযোগ প্রোফাইল অনেকাংশে তোমার ব্যক্তিত্ব তুলে ধরে। তুমি যদি ফেসবুক ব্যবহার করো, তবে ফেসবুকের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড তোমার জানা প্রয়োজন। ফেসবুক কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডে স্পষ্ট করে বলা আছে ফেসবুকে কোন ধরনের পোস্ট বা মন্তব্য ফেসবুকের কাছে গ্রহণযোগ্য।

সামাজিক মিডিয়া ব্যবহারের কিছু টিপস—

  • অপরিচিত কাউকে বন্ধুর তালিকায় যুক্ত করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা।

  • সোশ্যাল মিডিয়াতে অপমানজনক বা আপত্তিকর কিছু পোস্ট করা থেকে বিরত থাকা।

  • সাইবার বুলিং সম্পর্কে সতর্ক থাকা। সাইবার বুলিংয়ের কবলে পড়লে প্রয়োজনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাহায্য নেওয়া।

  • কপিরাইট সম্পর্কে সতর্ক থাকা ও প্রয়োজনে নির্ভরযোগ্য সূত্রসহ পোস্ট করা।

  • গুজব থেকে সতর্ক থাকা এবং তথ্যসূত্র না জেনে কোনো পোস্ট শেয়ার না করা।

৭. গ্রাফিক ডিজাইন

গ্রাফিক ডিজাইন একটি সৃজনশীল কাজ । সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট ডিজাইন, ডিজিটাল ব্যানার, কভার ফটো, পোস্টার, বিলবোর্ড ইত্যাদি গ্রাফিক ডিজাইনের কাজের ভেতরে পড়ে। গ্রাফিক ডিজাইন এমন একটি স্কিল, যা অল্প বয়সে শুরু করা যায়। তোমার যদি সৃজনশীল কাজে বেশি আগ্রহ থাকে, তবে তুমি গ্রাফিক ডিজাইন শিখতে পার।

প্রথমে তুমি ক্যানভা শিখে শুরু করতে পার। পরবর্তী সময়ে তুমি অ্যাডোবি ফটোশপ ও অ্যাডোবি ইলাস্ট্রেটর শিখে নিজের দক্ষতা আরও বিস্তৃত করতে পার। গ্রাফিক ডিজাইন শেখার জন্য অনেক অনলাইন টিউটোরিয়াল পাওয়া যায়। ইউটিউব দেখে তোমার লার্নিং শুরু করতে পার।

৮. কম্পিউটার প্রোগ্রামিং

যদি তোমার লক্ষ্য থাকে ভালো প্রোগ্রামার হওয়ার, তবে স্কুলজীবন থেকেই প্রোগামিং শেখার অনুশীলন করতে পার। আমরা কম্পিউটার প্রোগ্রামিং যতটা কঠিন মনে করি, আসলে ততটা কঠিন নয়। ইন্টারনেটে তুমি যে ওয়েবসাইট বা অ্যাপগুলো দেখছ, তার পেছনে রয়েছে প্রোগ্রামারদের দক্ষ হাতের ছোঁয়া।

উন্নত বিশ্বের অনেক দেশ তাদের শিক্ষা কার্যক্রমে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং সংযুক্ত করছে। প্রোগ্রামিং শিখলে বাস্তবিক জীবনে তোমার সমস্যা সমাধানের দক্ষতা উন্নত হবে। তুমি যদি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, ডেটা সায়েন্টিস্ট বা প্রযুক্তি উদ্যোক্তা হতে চাও, তবে তোমার প্রোগ্রামিং শেখা উচিত।

৯. ইন্টারনেট থেকে সমস্যা সমাধান

ইন্টারনেট আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অনেক সমস্যার সমাধানে সাহায্য করতে পারে। ইন্টারনেট একটি বিশাল তথ্যভান্ডার, যা শিক্ষা, যোগাযোগ ও বিনোদনের জন্য আমরা ব্যবহার করি। আমাদের প্রাত্যহিক বিভিন্ন কাজের সমাধান ইন্টারনেটে আছে। ধরো, তুমি গণিত বইয়ের একটা অধ্যায় ভালোভাবে বুঝতে পারছ না। তবে তোমার উচিত ইন্টারনেট থেকে সে অধ্যায়ের ওপর ভালো কিছু টিউটোরিয়াল দেখা। তাহলে তুমি সহজে তোমার সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারবে।

তা ছাড়া ওয়াই–ফাই সংযোগ সমস্যা, ব্রাউজার সমস্যা, ভাইরাস ও ম্যালওয়্যার সংক্রমণ থেকে কম্পিউটার রক্ষা করা, বিভিন্ন সফটওয়্যার–সংক্র্যান্ত সমস্যা ইত্যাদির সম্মুখীন আমরা প্রতিনিয়ত হই। ইন্টারনেটে এসব সমস্যা সমাধানের দক্ষতা থাকলে আমরা নিজেরাই সমাধান করে সময় এবং অর্থ বাঁচাতে পারি।

তুমি যদি নিজেকে ডিজিটাল দক্ষতায় দক্ষ করে তুলতে পার, তবে ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা করতে পারবে। তোমার অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন, প্র্যাকটিক্যাল সবকিছুতে তুমি এগিয়ে থাকবে বহুগুণ।

লেখক: শাহরিয়ার হাসান, ডিজিটাল মার্কেটার। বর্তমানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজিস্ট হিসেবে কর্মরত।