
আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে তখন বিকেলের আলো না পড়লেও কৃত্রিম আলোতে উজ্জ্বল বিভিন্ন ভাস্কর্য। ‘মন পবনের নাও’, ‘ইঁদুর দৌড়’, ‘স্বপ্নচারী’, ‘স্বাধীনতা’, ‘ঝড়ের রাত’ শিরোনামের ভাস্কর্যগুলো ঘুরে ঘুরে দেখছেন দর্শনার্থীরা। তাঁদের অধিকাংশই হুইলচেয়ারে বসা।
পক্ষাঘাতগ্রস্ত এ দর্শনার্থীরা শুধু দর্শকই নন, প্রতিটি ভাস্কর্য তৈরিতে আছে তাঁদের অংশগ্রহণ। গতকাল সন্ধ্যায় পক্ষাঘাতগ্রস্ত শিশুরা উদ্বোধন করে শিল্পী আরহাম উল হক চৌধুরীর ১৩তম একক শিল্পপ্রদর্শনী ‘কঠিন অনুভব’।
ভাস্কর্য তৈরিতে শিল্পীর সঙ্গে কাজ করেছেন ময়নাল হোসেন। টাঙ্গাইলের দেলদোয়ার থানার চড়াপাড়া গ্রামে তাঁর বাড়ি। ২০০৯ সালের একদিন সড়ক দুর্ঘটনায় মেরুদণ্ডে আঘাত পান। হারিয়ে ফেলেন হাঁটার শক্তি। চিকিৎসা নেওয়ার পর চলে আসেন পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে (সিআরপি)। সেই থেকে তাঁর সঙ্গী হুইলচেয়ার।
হাঁটতে না পারলে কী হবে, শারীরিক অক্ষমতা দমিয়ে রাখতে পারেনি ময়নালকে। সিআরপিতেই ঝালাইয়ের (ওয়েল্ডিং) কাজে যুক্ত হন। এদিকে সিআরপির সঙ্গে দীর্ঘদিন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন শিল্পী আরহাম। সিআরপিতে হুইলচেয়ার ও ক্র্যাচ তৈরির জন্য কর্মশালা হয়। আরহাম ভাবলেন, সেই কর্মশালার ফেলে দেওয়া ভাঙা লোহালক্কড় দিয়ে ভাস্কর্য তৈরি করবেন। শিল্পীর এই পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিতে ময়নাল তাঁকে সহযোগিতা করেন। এভাবেই এই শিল্পপ্রদর্শনীর সঙ্গে তিনি যুক্ত হয়ে যান।
কেমন করে এ পরিকল্পনা মাথায় এল? এমন প্রশ্নে শিল্পী আরহাম বললেন, শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিরা এ সমাজেরই অংশ। ব্যক্তিকেন্দ্রিক চিন্তা থেকে বের হয়ে সবাইকে নিয়ে চিন্তা করা দরকার। এই প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য সেই চিন্তা-ভাবনাকে অনুপ্রাণিত করা। এই মানুষদের একটু সবার নজরে নিয়ে আসা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকার পরিচালক ব্রুনো প্লাস ও সিআরপির নির্বাহী পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম। আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকা ও আর্টকন যৌথভাবে প্রদর্শনীটির আয়োজন করেছে। চলবে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত। প্রদর্শনীটি দেখা যাবে সোম থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটা থেকে রাত নয়টা এবং শুক্র ও শনিবার সকাল নয়টা থেকে দুপুর ১২টা ও বিকাল পাঁচটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত। আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রদর্শনীতে বিক্রয়লদ্ধ সব অর্থ পক্ষাঘাতগ্রস্তদের সেবায় সিআরপির দাতব্য কল্যাণ তহবিলে দেওয়া হবে।