ইচ্ছামৃত্যুর মিছিলে হলিউডের তারকারা

মেরিলিন মনরো, কার্ট কোবেইন, অ্যানা নিকোল স্মিথ, লুসি গর্ডন
মেরিলিন মনরো, কার্ট কোবেইন, অ্যানা নিকোল স্মিথ, লুসি গর্ডন

পেশাজীবনে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য না পাওয়ার হতাশা, সৃষ্টিশীল কাজে উত্সাহ হারিয়ে ফেলায় এক ধরনের শূন্যতার অনুভূতি কিংবা মনের মানুষের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় এখন পর্যন্ত বিশ্বের অনেক তারকাই আত্মহত্যার মতো কঠিন পথ বেছে নিয়েছেন।
বিনোদনজগতের চাকচিক্য আর তারকাখ্যাতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো কাজের প্রচণ্ড ব্যস্ততা আর অতিরিক্ত মানসিক চাপ। প্রায় সব তারকাই জনপ্রিয়তা অর্জনের পর খ্যাতি ধরে রাখার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। জনপ্রিয়তার এ ইঁদুরদৌড়ে হাঁপিয়ে উঠে কিংবা পিছিয়ে পড়ে বিষণ্নতায় আক্রান্ত হন তাঁদের কেউ কেউ। হতাশার জালে আটকে বিপর্যস্ত মানসিক অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে কখনো কখনো নিজের জীবনকেও তুচ্ছজ্ঞান করেন তাঁরা। নিজেকে সঁপে দেন ইচ্ছামৃত্যুর কোলে। বিশ্বের অনেক নামীদামি তারকার মধ্যে হলিউডের বেশ কয়েকজন তারকাও ইচ্ছামৃত্যুর এ মিছিলে যোগ দিয়েছেন।

মেরিলিন মনরোর রহস্যময় মৃত্যু
হলিউডের বহুল আলোচিত অভিনেত্রী মেরিলিন মনরোর মৃত্যুরহস্য আজও অমীমাংসিত। ১৯৬২ সালের ৫ আগস্ট সকালে লস অ্যাঞ্জেলেসে নিজের বাসায় মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল মনরোকে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৩৬ বছর। হলিউডের একাধিক জনপ্রিয় তারকার মতো তাঁর মৃত্যুর জন্যও দায়ী করা হয় অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ সেবনকে। বারবিচুরেট বিষক্রিয়ায় মনরোর মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হয় তাঁর ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে। মনরোর মৃত্যুকে ‘সম্ভাব্য আত্মহত্যা’ বলেও উল্লেখ করা হয়েছিল। তবে মনরোর এ অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুকে নিছক আত্মহত্যা মানতে নারাজ তাঁর ভক্তরা। তাঁরা বিশ্বাস করেন, অতিরিক্ত ঘুমের বড়ি সেবনের ফলে দুর্ঘটনাবশত মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হয়েছিল তাঁদের প্রিয় তারকাকে। আবার কেউ কেউ এ মৃত্যুকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলেও মনে করেন।

কার্ট কোবেইন

জনপ্রিয় মার্কিন রক ব্যান্ড নির্ভানার মূল গায়ক কার্ট কোবেইন প্রথম আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ১৯৯৪ সালের ৪ মার্চ। সেদিন সকালে তাঁকে অচেতন অবস্থায় দেখতে পান তাঁর স্ত্রী কার্টনি লাভ। দ্রুত কোবেইনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। শ্যাম্পেনের সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে রোহিফনল নামের এক ধরনের মাদক মিশিয়ে খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছিলেন এ তারকা সংগীতশিল্পী। পরবর্তী কয়েকটি দিন তিনি অচেতন অবস্থায় ছিলেন। পাঁচ দিন চিকিত্সা নেওয়ার পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও মাত্র দুই সপ্তাহ পর আবার আত্মহত্যা করতে উদ্যত হন কোবেইন। ১৮ মার্চ তাঁর স্ত্রী কার্টনি সিয়াটল পুলিশে খবর দেন। তিনি জানান, আগ্নেয়াস্ত্রসহ ঘরের ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে রেখেছেন কোবেইন। পুলিশ গিয়ে কোবেইনের কাছ থেকে কয়েকটি আগ্নেয়াস্ত্র ও বোতল ভর্তি ঘুমের ওষুধ উদ্ধার করে। তবে আত্মহত্যার চেষ্টা করছিলেন না বলেই দাবি করেন কোবেইন। স্ত্রী কার্টনির কাছ থেকে লুকোনোর জন্যই নাকি তিনি ঘরের দরজা বন্ধ করেছিলেন।

এপ্রিল মাসের শুরুর দিকে লাপাত্তা হয়ে যান কোবেইন। তাঁকে খুঁজে বের করতে টম গ্র্যান্ট নামের একজন ভাড়াটে গোয়েন্দা নিয়োগ দেন কার্টনি। কিন্তু কোথাও কোবেইনের হদিস মেলে না। অবশেষে ৮ এপ্রিল লেক ওয়াশিংটনের বাড়ি থেকে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি গ্যারি স্মিথ ওই বাড়িতে ঢুকে কোবেইনকে শোয়া অবস্থায় দেখতে পান। স্মিথ ভেবেছিলেন, ঘুমিয়ে আছেন কোবেইন। পরে তিনি খেয়াল করেন, কোবেইনের থুতনির কাছে একটি শটগান তাক করা আছে। মৃতদেহের পাশে একটি চিরকুট পাওয়া যায়। চিরকুটে শৈশবের কাল্পনিক বন্ধু বুদ্ধাকে উদ্দেশ করে কোবেইন লিখেছিলেন, ‘সংগীত সৃষ্টি বা শোনার সময় আগে যে টানটান উত্তেজনা অনুভব করতাম, অনেক দিন থেকে তা আর পাচ্ছি না। এমনকি লেখার আগ্রহও হারিয়ে ফেলেছি আমি। বছরের পর বছর ধরে শূন্যতার অনুভূতি আমাকে কুরে কুরে খাচ্ছে।’

কোবেইনের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে বলা হয়, তাঁর রক্তে মাত্রাতিরিক্ত হেরোইন ও ডায়াজিপামের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। তাঁর মৃত্যুর সম্ভাব্য তারিখ হিসেবে উল্লেখ করা হয় ৫ এপ্রিল। মৃত্যুর পর কয়েক দিন তাঁর মৃতদেহ একই জায়গায় পড়ে ছিল বলেও জানানো হয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে। দীর্ঘদিন হেরোইনে আসক্তির পাশাপাশি তীব্র হতাশায় ভুগে মাত্র ২৭ বছর বয়সে ইচ্ছমৃত্যুর মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন কার্ট কোবেইন। জিম মরিসন, জিমি হেনড্রিক্সের মতো ক্ষণজন্মা শিল্পীদের মতো কোবেইনও ক্লাব টোয়েন্টি সেভেনের অন্যতম সদস্য, যাঁরা সবাই মাত্র ২৭ বছর বয়সে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে গেছেন।

অ্যানা নিকোল স্মিথ

মার্কিন মুলুকের জনপ্রিয় মডেল, অভিনেত্রী ও টিভি ব্যক্তিত্ব অ্যানা নিকোল স্মিথকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় ২০০৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। ফ্লোরিডার একটি হোটেলকক্ষ থেকে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৩৯ বছর। মাত্রাতিরিক্ত ঘুমের বড়ি সেবনে তাঁর মৃত্যু ঘটেছিল। তাঁর রক্তে অবৈধ কোনো মাদকের অস্তিত্ব ধরা পড়েনি বলেই জানানো হয়েছে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে। তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন কি না, তা নিশ্চিত হওয়া না গেলেও তাঁর মৃত্যুকে অস্বাভাবিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

লুসি গর্ডন

২০০৭ সালে মুক্তি পাওয়া ‘স্পাইডারম্যান ৩’ ছবিতে সাংবাদিক জেনিফার ডুগান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ব্রিটিশ অভিনেত্রী লুসি গর্ডন। তাঁর জন্ম হয়েছিল ১৯৮০ সালের ২২ মে। ২০০৯ সালে নিজের ২৯তম জন্মদিনের মাত্র দুই দিন আগে আত্মহত্যা করেন লুসি। তিনি দুটি সুইসাইড নোটও লিখে গিয়েছিলেন। প্রেমিক চিত্রগ্রাহক আলমিরাসের সঙ্গে প্যারিসে একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন লুসি। সেখানেই গলায় ফাঁস লাগিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন। রাতে প্রেমিকের সঙ্গে লুসির ঝগড়া হয়েছিল। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে লুসির ঝুলন্ত লাশ দেখে ভয়ে শিউরে ওঠেন প্রেমিক আলমিরাস।