
মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে মায়ের কবরেই চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন বিশিষ্ট চলচ্চিত্র অভিনেতা আনোয়ার হোসেন।
স্কয়ার হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় গতকাল দিবাগত রাত একটা ৩০ মিনিটে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আনোয়ার হোসেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
এ তথ্য নিশ্চিত করে আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী নাসিমা আনোয়ার প্রথম আলো ডটকমকে জানান, তিন সপ্তাহ ধরে আনোয়ার হোসেন স্কয়ার হাসপাতালে চিকিত্সাধীন ছিলেন। গতকাল সন্ধ্যা থেকে তাঁর অবস্থার অবনতি হতে থাকে। রাত একটা ৩০ মিনিটে কর্তব্যরত চিকিত্সকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
আজ বাদ জুমা বায়তুল মোকাররম মসজিদে জানাজা শেষে আনোয়ার হোসেনের মরদেহ তাঁর দীর্ঘদিনের কর্মস্থল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থায় (বিএফডিসি) নেওয়া হয়। সেখানে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মরদেহ মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। আনোয়ার হোসেনকে তাঁর মায়ের কবরেই সমাহিত করা হয়েছে।
দুঃখজনক হলেও সত্য, এফডিসিতে আনোয়ার হোসেনকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে চলচ্চিত্রের এ প্রজন্মের জনপ্রিয় তারকাদের কেউই উপস্থিত ছিলেন না।
আনোয়ার হোসেনের জন্ম ১৯৩১ সালে জামালপুরের সরুলিয়া গ্রামে। তাঁর পিতা নাজির হোসেন ছিলেন সহকারী নিবন্ধন কর্মকর্তা। ১৯৫১ সালে জামালপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন আনোয়ার হোসেন। পরে আনন্দমোহন কলেজে ভর্তি হয়ে মঞ্চ নাটকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ময়মনসিংহ ছেড়ে একসময় ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকা বেতারের নাটকে প্রথম অভিনয় শুরু করেন ১৯৫৭ সালে। নাটকটির নাম ছিল ‘নওফেল হাতেম’।
আনোয়ার হোসেন অভিনীত প্রথম ছবি ‘তোমার আমার’। মহিউদ্দিন পরিচালিত এ ছবিতে তিনি খলনায়ক চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ১৯৬২ সালে মুক্তি পায় আনোয়ার হোসেন অভিনীত দ্বিতীয় ছবি ‘সূর্যস্নান’। এরপর তিনি অভিনয় করেন ‘জোয়ার এলো’ (১৯৬২), ‘কাচের দেয়াল’ (১৯৬৩), ‘নাচঘর ’ (১৯৬৩), ‘দুই দিগন্ত (১৯৪৬), ‘বন্ধন’ (১৯৬৪), ‘একালের রূপকথা’ (১৯৬৫) প্রভৃতি ছবিতে।
১৯৬৫ সালে উর্দু ছবি ‘সাতরং’-এ ট্রাকড্রাইভার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন আনোয়ার হোসেন। এরপর উর্দু ছবি ‘উজালা’য় সুলতানা জামানের বিপরীতে নায়ক হিসেবে অভিনয় করেন। ‘উজালা’ মুক্তি পায় ১৯৬৬ সালে। পরের বছর বাংলা ও উর্দু ভাষায় নির্মিত ‘নবাব সিরাজদ্দৌলা’ ছবিতে কাজ করার পর আনোয়ার হোসেনকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ বহু পুরস্কার পেয়েছেন আনোয়ার হোসেন। ‘লাঠিয়াল’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেতা হিসেবে ১৯৭৫ সালে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন তিনি। ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ ছবির জন্য সহ-অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পান ১৯৭৮ সালে। এরও আগে ১৯৬৭ সালে ‘নবাব সিরাজদ্দৌলা’য় অভিনয় করে নিগার পুরস্কার পেয়েছিলেন আনোয়ার হোসেন। অভিনেতাদের মধ্যে তিনিই ১৯৮৮ সালে প্রথম একুশে পদক পান। এ ছাড়া ২০১১ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান আসর থেকে আজীবন সম্মাননা পান গুণী এ শিল্পী।
আনোয়ার হোসেনের চার ছেলে ও এক মেয়ে। চার ছেলের মধ্যে বড় ছেলে বাবু থাকেন সুইডেনে। অন্য তিন ছেলে ইরান, উপল ও ফিরোজ থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে।