Thank you for trying Sticky AMP!!

সাধারণ থেকে 'নবাব'

>

আজ বরেণ্য অভিনেতা আনোয়ার হোসেনের মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৩ সালের এই দিনে তিনি না-ফেরার দেশে চলে যান। তাঁকে নিয়ে লিখেছেন চলচ্চিত্র গবেষক ও লেখক সৌমিক হাসান

আনোয়ার হোসেন দীর্ঘ পাঁচ দশক দিন-রাত কাজ করেছেন ছবির পর ছবিতে

৩ এপ্রিল ২০১০ সালে অভিনেতা আনোয়ার হোসেনকে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়। ওই দিন সাংবাদিকেরা জানতে চান তাঁর কোনো দুঃখ-কষ্ট আছে কি না? জবাবে আনোয়ার হোসেন বলেছিলেন, ‘আমার একটাই কষ্ট, শারীরিক অক্ষমতার কারণে অভিনয় করতে পারি না।’ দীর্ঘদিন ধরে শরীরে নানা ধরনের রোগ, বার্ধক্যের ক্রমাগত চাপের কারণে অভিনয় করতে পারেননি আনোয়ার হোসেন। সর্বশেষ কাজ করেছেন ২০০৬ সালে কাজী মোরশেদ পরিচালিত অনেকগুলো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া ঘানি ছবিতে।

আনোয়ার হোসেন দীর্ঘ পাঁচ দশক দিন-রাত কাজ করেছেন ছবির পর ছবিতে

আনোয়ার হোসেন দীর্ঘ পাঁচ দশক দিন-রাত কাজ করেছেন ছবির পর ছবিতে, তাঁর কাজ না করতে পারার দুঃখটা তো থাকবে—এটাই স্বাভাবিক। ২০১৩ সালের ১৮ আগস্ট শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। ১৩ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় ৮২ বছর বয়সে ঢাকার চলচ্চিত্রের ‘নবাব’খ্যাত অভিনেতা আনোয়ার হোসেন মারা যান। আনোয়ার হোসেনের জন্ম ১৯৩১ সালের ৬ নভেম্বর জামালপুর জেলার মুরুলিয়া গ্রামের মিয়াবাড়িতে। বাবা এ কে এম নাজির হোসেন ছিলেন জেলা সাব-রেজিস্ট্রার। ১৯৪০ সালে দেওয়ানগঞ্জ প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হন এবং স্কুলের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হন তিনি। ১৯৫১ সালে জামালপুর হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে ময়মনসিংহ কলেজে ভর্তি হন।

আনোয়ার হোসেন (৬ ডিসম্বর ১৯৩১—১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৩)

কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্রাবস্থায় আসকর ইবনে সাইখের পদক্ষেপ নাটকে অভিনয় করার পর থেকে নাটকের প্রতি দুর্বার আকর্ষণ সৃষ্টি হয়। প্রথম বর্ষের পরীক্ষা দিয়ে বাবার বন্ধু আবদুল্লাহ খানের ‘সেলকন ইঞ্জিনিয়ারিং’ ফার্মে সুপারভাইজারের চাকরি নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে ১৯৫৯ সালে ননী দাসের পরিচালনায় এক টুকরো জমি নাটকে অভিনয় করেন। ঢাকা বেতারে অডিশন দিয়ে নির্বাচিত হয়ে হাতেম তাই নাটকে একটি ছোট চরিত্রে অভিনয় করেন। মঞ্চনাটকে অভিনয় করতে গিয়ে পরিচয় হয় আবদুল জব্বার খান, মোহাম্মদ আনিস, হাবিবুর রহমানের সঙ্গে। ঝিনুক পত্রিকার সম্পাদক আসিরুদ্দিনের সহযোগিতায় মিনার্ভা থিয়েটার গঠন করেন। মিনার্ভা থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হন সৈয়দ হাসান ইমাম, ফতেহ লোহানী, মেহফুজ, সুভাষ দত্ত, চিত্রা সিনহাসহ অনেকেই। ১৯৬১ সালে আনোয়ার হোসেন মহিউদ্দিন পরিচালিত তোমার আমার ছবিতে একটি ভিলেনের চরিত্রে অভিনয় করেন। এরপর সালাহউদ্দিন পরিচালিত সূর্যস্নান ছবিতে নায়কের চরিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৬১ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত ১৮টি ছবিতে কাজ করেন তিনি। ১৯৬৭ সালে নবাব সিরাজউদ্দৌলা ছবিতে নবাবের চরিত্রে অভিনয় করে পান ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও খ্যাতি। সিরাজের দেশপ্রেমের যন্ত্রণা দর্শকদের মনে জাগিয়ে দিতে পেরেছেন বলে ছবিটি প্রশংসিত হয়। আনোয়ার হোসেন ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক, সাহিত্যনির্ভর, শিশুতোষ, লোককাহিনিভিত্তিক, পোশাকি ফ্যান্টাসি, পরিচ্ছন্ন সামাজিক, পারিবারিক মেলোড্রামা, বক্তব্যধর্মী—সব ধরনের ছবিতে অভিনয় করেছেন; বিশেষ করে সালাহউদ্দিন, খান আতাউর রহমান, কাজী জহির, আমজাদ হোসেন, ইবনে মিজান, আলমগীর কবির, কামাল আহমেদ, জহির রায়হান, নারায়ণ ঘোষ মিতা, সুভাষ দত্ত, নজরুল ইসলাম, আজিজুর রহমান, মোস্তফা মেহমুদ, এ জে মিন্টু, চাষী নজরুল ইসলাম, কাজী হায়াৎসহ অনেক নামীদামি পরিচালকের ছবিতে অভিনয় করেছেন। আমাদের দেশে নির্মিত সূর্যস্নান, নবাব সিরাজউদ্দৌলা, জীবন থেকে নেয়া, জয় বাংলা, অরুণোদ্বয়ের অগ্নিস্বাক্ষী, লাঠিয়াল, পালঙ্ক, গোলাপী এখন ট্রেনে, সুন্দরী, সখিনার যুদ্ধ, নাজমা, সূর্যগ্রহণ, সূর্যসংগ্রাম, দায়ী কে, সত্য মিথ্যার মতো ছবিগুলোর অভিনেতা হিসেবে আনোয়ার হোসেন থেকে যাবেন যুগের পর যুগ দর্শকদের হৃদয়মাঝে। দীর্ঘ অভিনয়জীবনে আনোয়ার হোসেন প্রায় সাড়ে তিন শ ছবিতে অভিনয় করেছেন। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন নিগার পুরস্কার। ১৯৮৫ সালে তিনি একুশে পদক ও দুবার বাচসাস পুরস্কার লাভ করেন। ২০১০ সালে বাংলাদেশ সরকার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের পাশাপাশি আনোয়ার হোসেনকে আজীবন সম্মাননা প্রদান করে।