Thank you for trying Sticky AMP!!

সুচিত্রা সেনের একঝলক চমক

সুচিত্রা সেন

আজ শুক্রবার সকালে কলকাতার যে বেলভিউ হাসপাতালে সুচিত্রা সেন শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন, ৩৪ বছর আগে ১৯৮০ সালে একই হাসপাতালে একইভাবে হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন সুচিত্রার দীর্ঘদিনের স্বজন, বন্ধু ও জুটি উত্তম কুমার।

উত্তমের মৃত্যুর পর আকস্মিকভাবেই চলচ্চিত্র জগৎ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন সুচিত্রা সেন। তিনি নিজেকে বাড়ির চার দেয়ালে বন্দী করে ফেলেন। সুচিত্রা সেন মৃত্যুর আগমুহূর্ত পর্যন্ত লোকচক্ষুর অন্তরালেই ছিলেন। সুচিত্রা সেনের স্মৃতিকে উৎসর্গ করে তাঁর সম্পর্কে চমকপ্রদ কিছু তথ্যের কথা জানানো হয় টাইমস অব ইন্ডিয়ার অনলাইন সংস্করণে।
আলোর মুখ দেখেনি প্রথম ছবি
১৯৫২ সালে ‘শেষ কোথায়’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে পা রেখেছিলেন সুচিত্রা সেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মুক্তি পায়নি সুচিত্রা অভিনীত প্রথম ছবিটি।

সত্যজিৎ ও রাজ কাপুরকে ‘না’

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘দেবী চৌধুরানী’ উপন্যাস অবলম্বনে ছবি বানাতে চেয়েছিলেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্রনির্মাতা সত্যজিৎ রায়। ছবিটিতে সুচিত্রা সেনকে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু শিডিউল জটিলতার কারণে প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে হয়েছিল সুচিত্রাকে। সুচিত্রা সেনকে না পাওয়ায় পরবর্তী সময়ে আর কখনোই ‘দেবী চৌধুরানী’ ছবিটি তৈরি করেননি সত্যজিৎ রায়। ১৯৭৪ সালে ‘দেবী চৌধুরানী’ ছবিটি নির্মাণ করেন দীনেন গুপ্তা। ছবিটিতে প্রফুল্লমুখী চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সুচিত্রা সেন।

‘মেরে নাম জোকার’খ্যাত হিন্দি চলচ্চিত্রের গুণী অভিনেতা, প্রযোজক ও নির্মাতা রাজ কাপুরের ছবিতে কাজের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন সুচিত্রা সেন। সে সময় আর কে ফিল্মসের ব্যানারের ছবিতে অভিনয়ের জন্য মুখিয়ে থাকতেন প্রায় সব অভিনয়শিল্পী। এ ক্ষেত্রে রাজ কাপুরের মতো নির্মাতার ছবিতে অভিনয় না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিরল নজিরই গড়েছিলেন সুচিত্রা।

দাদাসাহেব ফালকে প্রত্যাখ্যান

হিন্দি চলচ্চিত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে প্রতিবছর সম্মাননা প্রদান করে ভারত সরকার। চলচ্চিত্রের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ এ সম্মাননা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন সুচিত্রা সেন। ২০০৫ সালে দাদাসাহেব সম্মাননা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তিনি। সম্মাননা নিতে কলকাতা থেকে দিল্লি যেতে চাননি বলেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি।

আন্তর্জাতিক পুরস্কার

সুচিত্রা সেনই বাংলা চলচ্চিত্রের প্রথম অভিনেত্রী, যিনি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব থেকে পুরস্কৃত হয়েছিলেন। ‘সাত পাকে বাঁধা’ ছবিতে অনবদ্য অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৬৩ সালে মস্কো চলচ্চিত্র উৎসব থেকে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পান তিনি।      

উত্তম কুমারের আগে নিজের নাম

‘মহানায়ক’ উত্তম কুমারের সঙ্গে জুটি বেঁধে বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম জনপ্রিয় জুটি হিসেবে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন উত্তম-সুচিত্রা। চলচ্চিত্র প্রযোজকদের সুচিত্রা বলেছিলেন, ছবির পোস্টারে উত্তম কুমারের আগে তাঁর নামটাই যাওয়া উচিত।

বলিউডেও মজবুত আসন

অসাধারণ অভিনয়শৈলী আর সাবলীল অভিনয় উপহার দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রে একচেটিয়া সাফল্য পাওয়ার পাশাপাশি বলিউডেও মজবুত আসন গেড়েছিলেন সুচিত্রা সেন। ‘দেবদাস’, ‘আঁধি’ এবং ‘মমতা’র মতো ছবিতে সুচিত্রার অভিনয় প্রতিভা দেখে মুগ্ধ হয়েছেন অগণিত দর্শক। শরৎচন্দ্রের ‘দেবদাস’ উপন্যাস নিয়ে বাংলা ও হিন্দি ভাষায় একাধিক চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। হিন্দি ভাষায় নির্মিত ‘দেবদাস’ ছবির প্রথম পার্বতী হয়েছিলেন সুচিত্রা। বিমল রায় পরিচালিত ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৫৫ সালে। ছবিটিতে দিলীপ কুমারের বিপরীতে অভিনয় করেন সুচিত্রা।

স্বাধীন ও দৃঢ়চেতা

ব্যক্তিজীবনে স্বাধীনচেতা সত্তার পরিচয় দিয়েছেন সুচিত্রা সেন। দৃঢ় মনোবলের অধিকারী নারী হিসেবেও চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন তিনি। তাঁর মেয়ে মুনমুন সেন এবং দুই নাতনি রাইমা ও রিয়া সেনও অভিনয়জগতে সাফল্য পেয়েছেন। বাংলা ও হিন্দি ছবিতে পরিচিত নাম মুনমুন, রাইমা ও রিয়া।