Thank you for trying Sticky AMP!!

'নজরুল ও বঙ্গবন্ধু উভয়েই শোষিতের পক্ষে ছিলেন'

ত্রিশালে জাতীয় পর্যায়ে নজরুল জয়ন্তীর উদ্‌যাপন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্য দেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। ছবি: সংগৃহীত

শিক্ষা মন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হলে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে। বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা ও কাজী নজরুলের স্বপ্ন এক সুতোয় গাঁথা। তাঁরা সবাই অসাম্প্রদায়িক, স্বাধীন ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন। নজরুল ও বঙ্গবন্ধু উভয়েই শোষিতের পক্ষে ছিলেন।

মন্ত্রী আজ শনিবার বিকেলে কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত ময়মনসিংহের ত্রিশালের দরিরামপুরের নজরুল মঞ্চে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২০ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন। দীপু মনি বলেন, নজরুল তাঁর লেখনীতে যে সাম্যের বার্তা দিয়েছেন তা স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, মানবতা এবং সুবিচারের বিবেচনায় সুতীক্ষ্ণ ও উজ্জ্বল। তাঁর কল্পনা কখনো ধর্মীয় উদারতা, কখনো স্বাধীনতা, কখনো মানবতা আবার কখনো নৈরাজ্যকে স্পর্শ করেছে। সমাজবিধানের অসংগতি, স্ববিরোধিতা, জাতিবৈষম্য, শ্রেণি বৈষম্যের প্রতি তাঁর কণ্ঠ সব সময়ই সোচ্চার ছিল। এ সকল কিছুর মূল ছিল মানবমুক্তি ও মানব কল্যাণ।’

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. হাফেজ রুহুল আমিন মাদানী, ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। স্মারক বক্তৃতা দেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিশ্বজিৎ ঘোষ। স্বাগত বক্তব্য দেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল।

সভাপতির বক্তব্যে সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সংগীত, সাহিত্য ও রাজনৈতিক দর্শন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আন্দোলন, সংগ্রাম ও মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় জুগিয়েছে অনাবিল অনুপ্রেরণা। জাতির পিতা ছিলেন এ মহান কবির একান্ত অনুরক্ত।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, সাধারণ মানুষের ন্যায় নজরুলের জীবনেও সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, হতাশা-বিষাদ ছিল। নজরুলের বিদ্রোহী কবি হয়ে ওঠার পেছনের কারণ ও দিক উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, নজরুল তাঁর দ্বিতীয় পুত্র বুলবুলকে হারিয়ে বিদ্রোহী সত্তা হতে অধ্যাত্মবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েন।

অধ্যাপক বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বলেন, কবি নজরুল দুই বাংলাকে আলাদা করে দেখতেন না।

আজকের এ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ত্রিশালে জাতীয় কবির ১২০ তম জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী জাতীয় পর্যায়ের কর্মসূচি। এবারের নজরুল জন্মবার্ষিকীর স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে ‘নজরুল চেতনায়-বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’।

জানা গেছে, নজরুল জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে কবির স্মৃতিবিজড়িত ময়মনসিংহের এ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ত্রিশালে বইছে উৎসবের আমেজ। তিন দিনব্যাপী উৎসব উপলক্ষে নতুন করে সেজেছে কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, কাজীর শিমলা গ্রামের দারোগা রফিজ উল্লাহর বাড়ি, নামাপাড়ার বিচুতিয়া বেপারীবাড়ি, বটতলা ও দরিরামপুর একাডেমি মাঠ। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল জাকির বলেন, ‘নজরুল জন্মজয়ন্তী এখানকার মানুষের কাছে একটি উৎসব। প্রতিবছর এই উৎসব ঘিরে নানা আয়োজন হয়ে থাকে।’ উদ্‌যাপন পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক আমীর আহাম্মদ চৌধুরী রতন বলেন, ‘নজরুলের আদর্শ এবং বার্তাকে মানুষের মাঝে পৌঁছে দেওয়াই হচ্ছে এ অনুষ্ঠানের মূল লক্ষ্য।’

ত্রিশালের কাজির শিমলা গ্রামের দারোগা রফিজ উল্লাহ নিজ বাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন কিশোর নজরুলকে। এখান থেকে নজরুল পড়তেন ত্রিশালের দরিরামপুর একাডেমি স্কুলে। বর্ষাকালে যাতায়াতে সুবিধার জন্য নজরুলকে জায়গির দেওয়া হয় ত্রিশালের নামাপাড়া গ্রামের বিচুতিয়া বেপারি বাড়িতে। কাজির শিমলা ও নামাপাড়া গ্রামে সরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে কবি নজরুল স্মৃতি কেন্দ্র। নামাপাড়া গ্রামের বটতলায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়।