২০২৫ সালে বিনোদন অঙ্গনের অনেক তারকারই মৃত্যু হয়েছে
২০২৫ সালে বিনোদন অঙ্গনের অনেক তারকারই মৃত্যু হয়েছে

২০২৫ সালে যাঁদের হারিয়েছি

২০২৫ সালে বিনোদন অঙ্গনের অনেক তারকারই মৃত্যু হয়েছে। কেউ দীর্ঘদিন রোগশোকে ভুগে, কেউ আবার হঠাৎ অসুস্থতা বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় মারা গেছেন। চলচ্চিত্র, সংগীত, নাটক ও সামগ্রিক সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে তাঁদের প্রত্যেকেরই ছিল নিজস্ব অবদান ও পরিচিতি। নায়ক–নায়িকা, সংগীতশিল্পী, গবেষক কিংবা নির্মাতা—ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকায় তাঁরা বাংলা সংস্কৃতিকে করেছেন সমৃদ্ধ ও বহুমাত্রিক। এ বছর প্রয়াত সেসব গুণী মানুষের স্মৃতিতেই এই প্রতিবেদন।

অঞ্জনা রহমান

তিন সপ্তাহ ধরে অসুস্থ থাকার পর এ বছরের ৪ জানুয়ারি মারা যান চলচ্চিত্র অভিনেত্রী অঞ্জনা রহমান। নৃত্যশিল্পী থেকে হয়েছেন চিত্রনায়িকা। অভিনয় করেছেন যৌথ প্রযোজনারসহ বিদেশি ভাষার সিনেমায়ও। বাংলাদেশ ছাড়াও তিনি অভিনয় করেছেন ৯টি দেশের ১৩টি ভাষার সিনেমায়। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, আন্তর্জাতিক পুরস্কার, একাধিক জাতীয় স্বর্ণপদক ও বাচসাস পুরস্কার পেয়েছেন কয়েকবার।

অঞ্জনা রহমান

অঞ্জনার অভিনয়জীবন শুরু হয় ১৯৭৬ সালে। বাবুল চৌধুরী পরিচালিত ‘সেতু’ চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন তিনি। তবে অঞ্জনা অভিনীত ও একই বছর মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র ‘দস্যু বনহুর’। ছবিতে তাঁর নায়ক ছিলেন সোহেল রানা। এ ছবির পর তাঁকে আর ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতে হয়নি। ১৯৭৬ সালের এই সিনেমার পর টানা কাজ করেছেন অঞ্জনা। একে একে অভিনয় করেন ‘মাটির মায়া’, ‘অশিক্ষিত’, ‘চোখের মণি’, ‘সুখের সংসার’, ‘জিঞ্জির’, ‘অংশীদার’,‘আনারকলি’, ‘বিচারপতি’, ‘আলাদীন আলীবাবা সিন্দাবাদ’, ‘অভিযান’, ‘মহান’ ও ‘রাজার রাজা’, ‘বিস্ফোরণ’, ‘ফুলেশ্বরী’, ‘রাম রহিম জন’, ‘নাগিনা’, ‘পরিণীতা’ ইত্যাদি বাণিজ্যসফল সিনেমায়।

প্রবীর মিত্র

৮১ বছর বয়সী প্রবীর মিত্র বেশ কয়েকটি শারীরিক জটিলতা নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা যান। ৫ জানুয়ারি রাতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। রুপালি পর্দার কিংবদন্তি এই অভিনেতা ১৯৪১ সালের ১৮ আগস্ট চাঁদপুরের নতুনবাজারের গুয়াখোলায় মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পুরো নাম প্রবীর কুমার মিত্র। পুরান ঢাকায় বড় হওয়া প্রবীর মিত্র স্কুলজীবন থেকেই নাট্যচর্চার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। স্কুলজীবনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে অভিনয় করেছিলেন তিনি।

অভিনেতা প্রবীর মিত্র

১৯৬৯ সালে প্রয়াত এইচ আকবরের ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রথম প্রবীর মিত্র ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান। যদিও চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় ১৯৭১ সালের ১ জানুয়ারি। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে প্রবীর মিত্র ‘নায়ক’ হিসেবে কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। পরে চরিত্রাভিনেতা হিসেবে কাজ করেও তিনি দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছেন। ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘জীবন তৃষ্ণা’, ‘সেয়ানা’, ‘জালিয়াত’, ‘ফরিয়াদ’, ‘রক্ত শপথ’, ‘চরিত্রহীন’, ‘জয়–পরাজয়’, ‘অঙ্গার’, ‘মিন্টু আমার নাম’, ‘ফকির মজনু শাহ’, ‘মধুমিতা’, ‘অশান্ত ঢেউ’, ‘অলংকার’, ‘অনুরাগ’, ‘প্রতিজ্ঞা’, ‘তরুলতা’, ‘গাঁয়ের ছেলে’, ‘পুত্রবধূ’সহ চার শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।

সন্‌জীদা খাতুন

আজীবন দেশের সংস্কৃতির ভুবন আলোকিত করার গুরুদায়িত্ব পালন করে এ বছরের ২৫ মার্চ ৯১ বছর বয়সে মারা যান অগ্রগণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সন্‌জীদা খাতুন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস, নিউমোনিয়া এবং কিডনি রোগে ভুগছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে দীর্ঘকাল অধ্যাপনা করেছেন তিনি। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের শুরু থেকেই সন্‌জীদা খাতুন সক্রিয় হয়ে উঠেছিলেন।

সন্‌জীদা খাতুন

সন্‌জীদা খাতুনের কীর্তির ধারা বিচিত্র। তিনি ছিলেন একাধারে শিক্ষক, গবেষক, শিল্পী, সংগীতজ্ঞ, সংগঠক ও সক্রিয় সাংস্কৃতিক নেত্রী। ছিলেন ছায়ানট ও রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের সভাপতি। ব্যতিক্রমী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নালন্দার প্রতিষ্ঠাতা। জনসাধারণের সাংস্কৃতিক বোধের উন্নয়ন এবং মুক্ত–উদার মানবিক সমাজ নির্মাণের অবিরাম প্রচেষ্টাই ছিল তাঁর জীবনের ব্রত।

গুলশান আরা আহমেদ

দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর ব্যাচেলর পয়েন্ট ধারাবাহিক নাটক দিয়ে আলোচিত অভিনেত্রী গুলশান আরা আহমেদ মারা যান চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল। হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক করলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। এরপর লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।

গুলশান আরা আহমেদ

‘হৃদয়ের কথা’, ‘ডাক্তার বাড়ি’, ‘ভালোবাসা আজকাল’, ‘লাল শাড়ি’সহ বেশ কিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন এই অভিনেত্রী। তিনি কাজল আরেফিন অমির জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’-এ কাবিলার (জিয়াউল পলাশ) মা ‘পলি চেয়ারম্যান’ চরিত্রে অভিনয় করে বর্তমান প্রজন্মের কাছে পরিচিতি পান। সর্বশেষ সিয়াম আহমেদের ‘জংলি’ সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি।

মুস্তাফা জামান আব্বাসী

বরেণ্য সংগীতশিল্পী, গবেষক ও লেখক মুস্তাফা জামান আব্বাসী  ১০ মে ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান। ৮৭ বছর বয়সী এই গুণী শিল্পী বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে লোকসংগীত নিয়ে গবেষণা করেছেন তিনি। তিনি ২৫টির বেশি দেশে ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, নজরুলগীতি পরিবেশন করে বাংলাদেশের সংগীতকে পৌঁছে দিয়েছেন বিশ্বদরবারে।

মুস্তাফা জামান আব্বাসী

বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী মুস্তাফা জামান আব্বাসী উপমহাদেশের খ্যাতনামা সংগীত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর বাবা আব্বাসউদ্দীন আহমদ ছিলেন পল্লিগীতির অগ্রপথিক। এ দেশের পল্লিসংগীতকে তিনিই বিশ্বের দেশে দেশে প্রথম জনপ্রিয় করেছেন। চাচা আবদুল করিম ছিলেন পল্লিগীতি ও ভাওয়াইয়া-ভাটিয়ালির জনপ্রিয় শিল্পী। মুস্তাফা জামান আব্বাসীর বড় ভাই মোস্তফা কামাল ছিলেন প্রধান বিচারপতি। বোন ফেরদৌসী রহমান ও ভাতিজি নাশিদ কামালও সংগীতাঙ্গনে সুপ্রতিষ্ঠিত। তাঁর স্ত্রী আসমা আব্বাসী একজন প্রথিতযশা শিক্ষক ও লেখিকা। ১৯৩৬ সালের ৮ ডিসেম্বর ভারতের কোচবিহারের বলরামপুর গ্রামে জন্ম নেওয়া আব্বাসী শৈশব কাটিয়েছেন কলকাতায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ ও এমএ ডিগ্রি অর্জনের পর হার্ভার্ড গ্রুপ থেকে মার্কেটিং বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নেন। দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। দৈনিক প্রথম আলোয় মুস্তাফা জামান আব্বাসীর ‘গোধূলির ছায়াপথে’ কলামটি বেশ পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করে।

খল অভিনেতা সাঙ্কু পাঞ্জা

সাঙ্কু পাঞ্জা

ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে ঢাকাই চলচ্চিত্রের খল অভিনেতা সাঙ্কু পাঞ্জা এ বছরের ২৯ মে বাংলাদেশে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। বহু চলচ্চিত্রে খল চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি চলচ্চিত্রাঙ্গনে নিজের একটি স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরি করেছিলেন। জন্মসূত্রে সাঙ্কু পাঞ্জার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরে। তাঁর দুই মেয়ে রয়েছে। তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সদস্য ছিলেন। ‘প্রেম কয়েদি’, ‘মনের জ্বালা’, ‘দুর্ধর্ষ’, ‘ধর মাস্তান’সহ অনেক জনপ্রিয় সিনেমায় অভিনয় করেছেন এই খল অভিনেতা।

তানিন সুবহা

২ জুন বুকে ব্যথা নিয়ে তানিন সুবহাকে বনশ্রীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে আইসিইউতে রাখা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। ১০ জুন চিকিৎসকেরা জানান, সুবহার হৃদ্‌যন্ত্র কিছুটা সচল থাকলেও তাঁর মস্তিষ্ক আর কাজ করছিল না। ফলে তাঁকে ক্লিনিক্যালি ডেথ ঘোষণা করা হয়।

তানিন সুবহা

তানিন সুবহার জন্ম মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার মোল্লারহাটে। তবে তাঁর শৈশব কাটে বরিশালে নানাবাড়িতে। বাবার চাকরির সূত্রে পরিবারের সঙ্গে সৌদি আরবও থেকেছেন কয়েক বছর। ২০১২ সালে ‘ক্লোজআপ ওয়ান’ ও ‘ম্যাঙ্গোলি নাচো বাংলাদেশ নাচো’ প্রতিযোগিতায় নাম লেখান। বেশি দূর যেতে না পারলেও শোবিজে কাজ করার আগ্রহ জন্মায় তাঁর। এরপর বিজ্ঞাপনচিত্র দিয়ে শোবিজে নাম লেখান তিনি। অভিনয় করেন নাটক ও সিনেমায়। ‘মাটির পরী’ সিনেমা দিয়ে বড় পর্দায় তাঁর অভিষেক হয়, এরপর নাম লেখান বেশ কিছু সিনেমায়। বর্তমানে এই নায়িকার বেশ কয়েকটি সিনেমা মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে।

জীনাত রেহানা

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কালজয়ী গান হিসেবে বিবেচিত ‘সাগরের তীর থেকে’, এই গানের শিল্পী জীনাত রেহানা এ বছরের ২ জুলাই মারা যান। জীনাত রেহানা ১৯৬৪ সালে বাংলাদেশ বেতারে তালিকাভুক্ত শিল্পী হিসেবে যাত্রা শুরু করেন। ১৯৬৮ সালে তাঁর গাওয়া ‘সাগরের তীর থেকে’ গানটি বেতারে জনপ্রিয়তা পায়। গানটির গীতিকার ছিলেন জেবুন নেসা জামাল, গানটির সুরকার ছিলেন করীম সাহাবুদ্দীন।

জীনাত রেহানা

১৯৬৫ সাল থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের নিয়মিত শিল্পী ছিলেন তিনি। তবে পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকায় গান থেকে খানিকটা দূরে চলে যান। তাঁর গাওয়া দর্শকপ্রিয় গানের তালিকায় রয়েছে, ‘একটি ফুল আর একটি পাখি বলত কী নামে তোমায় ডাকি’, ‘আমি কাঁকন দিয়ে ডেকেছিলাম মুখে লজ্জা ছিল বলে’, ‘কপালে তো টিকলি পরব না’, ‘আমি যার কথা ভাবছি মনে আনমনে’, ‘আমায় যদি ডাকো কাছে’, ‘কণ্ঠবীণা’, ‘মনে রেখো স্মৃতি থেকে’। তিনি ছিলেন প্রয়াত টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব মোস্তফা কামাল সৈয়দের সহধর্মিণী।

এ কে রাতুল

রক ব্যান্ড ‘ওন্ড’–এর ভোকালিস্ট, বেজিস্ট ও শব্দপ্রকৌশলী এ কে রাতুল এ বছরের ২৭ জুলাই মারা যান। এদিন ঢাকার উত্তরার একটি জিমে হঠাৎ হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হন রাতুল। পরে তাঁকে কাছের একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে আরেকটি হাসপাতালে নেওয়া হলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। শ্রোতাদের মধ্যে ওন্ড ব্যান্ডের আলাদা পরিচিতি রয়েছে।

এ কে রাতুল

২০১৪ সালে ব্যান্ডটির প্রথম অ্যালবাম ‘ওয়ান’ ও ২০১৭ সালে দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘টু’ প্রকাশিত হয়। ২০২১ সালে প্রকাশিত হয়েছে ইপি ‘এইটিন’। রাতুল অন্য ব্যান্ডেও কাজ করেন। তিনি অর্থহীনের ফিনিক্সের ডায়েরি-১–এর সাউন্ডের কাজ করেছেন। রাতুল প্রয়াত চিত্রনায়ক জসীমের মেজ ছেলে। দুই ভাইয়ের মধ্যে এ কে রাহুল সংগীতশিল্পী হিসেবে পরিচিত। তিনি ‘ট্রেনরেক’ ও ‘পরাহো’ ব্যান্ডের সঙ্গে ছিলেন। আরেক ভাই এ কে সামী একজন ড্রামার।

জাহানারা ভূঁইয়া

দীর্ঘদিন রোগে ভোগার পর মারা যান চলচ্চিত্র অভিনেত্রী জাহানারা। ২৫ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটার একটি হাসপাতালে ৬৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। ডায়াবেটিসের কারণে তাঁর দুটি কিডনিই অচল হয়ে যায়। সত্তর ও আশির দশকে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি জাহানারা ভূঁইয়া গীতিকার, নির্মাতা এবং প্রযোজক হিসেবেও পরিচিত ছিলেন।

অভিনেত্রী জাহানারা ভূঁইয়া

চলচ্চিত্রে তাঁর যাত্রা শুরু হয় গীতিকার হিসেবে। মুক্তিযোদ্ধা ও চলচ্চিত্র পরিচালক স্বামী সিরাজুল ইসলাম ভূঁইয়ার ‘নিমাই সন্ন্যাসী’ ছবিতে প্রথম গান লেখেন তিনি। আশির দশকে ‘সৎমা’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে চরিত্রাভিনেত্রী হিসেবে পরিচিতি পান। এরপর তিনি শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেন। পরিচালনা করেছেন কয়েকটি চলচ্চিত্রও। ‘সিঁদুর নিও না মুছে’ তাঁর পরিচালিত উল্লেখযোগ্য ছবি। অভিনেত্রী হিসেবে সাফল্যের পাশাপাশি তিনি নির্মাণ ও গান লেখায়ও রেখেছেন অবদান।

ফরিদা পারভীন

লোকসংগীতের বরেণ্য শিল্পী ফরিদা পারভীন ১৩ সেপ্টেম্বর মারা যান। দীর্ঘদিন ধরে কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। ১৯৫৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর নাটোরের সিংড়া থানায় জন্ম নেওয়া ফরিদা পারভীন গানে গানে কাটিয়েছেন ৫৫ বছর। ১৪ বছর বয়সে ১৯৬৮ সালে ফরিদা পারভীনের পেশাদার সংগীতজীবন শুরু হয়। এরপর পার হতে হয় অনেক চড়াই-উতরাই। পারিবারিক সূত্রেই গানের ভুবনে আসা। গানের প্রতি বাবার টান ছিল বেশি। দাদিও গান করতেন। বাবার চাকরির সুবাদে বিভিন্ন জেলায় যেতে হয়েছে তাঁকে।

ফরিদা পারভীন

শৈশবে যখন মাগুরায় ছিলেন, তখন ওস্তাদ কমল চক্রবর্তীর কাছে সংগীতের হাতেখড়ি হয় তাঁর। এরপর নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও তালিম থেকে দূরে থাকেননি তিনি। নানা ধরনের গান করলেও শিল্পীজীবনে পরিচিতি, জনপ্রিয়তা, অগণিত মানুষের ভালোবাসা মূলত লালন সাঁইয়ের গান গেয়ে। যখন থেকে লালনের গান গাওয়া শুরু হয়েছিল, তারপর থেকে আর থেমে থাকেননি।  গানে গানে কাটিয়েছেন ৫৫ বছর। ক্যারিয়ারের শুরুতে দেশাত্মবোধক গান গাইলেও তাঁর পরিচয় গড়ে ওঠে লালনকন্যা হিসেবে। তাঁর কণ্ঠে ‘মিলন হবে কত দিনে’, ‘অচিন পাখি’ গানগুলো আজও বাঙালির চেতনার অংশ হয়ে আছে। লালনগীতিকে বিশ্বদরবারে পৌঁছে দিতে তাঁর ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য।

শেখ নজরুল ইসলাম

৮১ বছর বয়সে মারা যান চলচ্চিত্র নির্মাতা শেখ নজরুল ইসলাম। ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। শেখ নজরুল ইসলাম একই সঙ্গে ছিলেন নির্মাতা, কাহিনিকার, সংলাপ রচয়িতা, চিত্রনাট্যকার, গীতিকার ও অভিনেতা। খান আতাউর রহমান ও জহির রায়হানের সহকারী পরিচালক হিসেবে চলচ্চিত্রে পথচলা শুরু তাঁর।

শেখ নজরুল ইসলাম

পরে একক নির্মাতা হিসেবে শেখ নজরুল ইসলাম নির্মাণ করেন ‘চাবুক’, ‘চাঁদ’, ‘এতিম’, ‘নাগিন’, ‘মাসুম’, ‘ঈদ মোবারক’, ‘আশা’, ‘পরিবর্তন’, ‘নতুন পৃথিবী’, ‘দিদার’, ‘সালমা’, ‘বউ–শাশুড়ি’, ‘কসম’, ‘বিধাতা’, ‘স্ত্রীর পাওনা’, ‘চাঁদের আলো’, ‘চাঁদের হাসি’, ‘চক্রান্ত’, ‘সিংহ পুরুষ’, ‘সব খতম’, ‘দমন’, ‘জোছনার প্রেম’, ‘মা বড় না বউ বড়’ ইত্যাদি চলচ্চিত্র। ষাটের দশকে শেখ নজরুল ইসলাম ‘সাত ভাই চম্পা’ ছবিতে অভিনয় করেন। এরপর তাঁকে দেখা যায় বেশ কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করতে। জহির রায়হানের অসমাপ্ত ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ ছবিতে তাঁর সহকারী হিসেবে কাজ করেন; একটি চরিত্রে অভিনয়ও করেন তিনি।

সেলিম হায়দার

ক্যানসার রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন দেশের নন্দিত গিটারিস্ট সেলিম হায়দার। ২৭ নভেম্বর রাতে তিনি ঢাকার মগবাজারের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ফিডব্যক ব্যান্ডের এই প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর।

সেলিম হায়দার

সেলিম হায়দারের ৬৯ বছরের জীবনের ৫১ বছর কেটেছে গিটারের সঙ্গে। দেশের প্রখ্যাত বেশির ভাগ শিল্পীর সঙ্গে বাজিয়েছেন তিনি। মৃত্যুর মাসখানেক আগে সেলিম হায়দার প্রোস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত হন। এরপর চিকিৎসকের নিয়মিত তত্ত্বাবধানে ছিলেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৭ নভেম্বর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

জেনস সুমন

২৮ নভেম্বর রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে মারা যান জেনস সুমন। ‘একটি চাদর হবে’ এই একটি গানই তাঁকে দেশের ঘরে ঘরে পরিচিত করে তোলে। ১৯৯৭ সালে প্রথম একক অ্যালবাম ‘আশীর্বাদ’ প্রকাশের পর একের পর এক শ্রোতাপ্রিয় অ্যালবাম উপহার দেন সুমন।

জেনস সুমন

২০০২ সালে বিটিভির একটি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে প্রচারের পর সাড়া ফেলে ‘একটা চাদর হবে’ গানটি। রাতারাতি আলোচনায় চলে আসেন গানটির গায়ক জেনস সুমন। তারপর আরও কিছু গান করেছেন। এরপর দীর্ঘ বিরতি। জেনস সুমনের প্রথম একক অ্যালবাম ‘আশীর্বাদ’ প্রকাশিত হয় ১৯৯৭ সালে। তারপর একে একে আসে ‘আকাশ কেঁদেছে’, ‘অতিথি’, ‘আশবাদী’, ‘একটা চাদর হবে’, ‘আয় তোরা আয়’, ‘চেরি’ ইত্যাদি। ২০০৮ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর সর্বশেষ অ্যালবাম ‘মন চলো রূপের নগরে’। এরপর কিছুটা অনিয়মিত হয়ে পড়েন। ১৬ বছরের বিরতি ভেঙে ২০২৪ সালে প্রকাশ পায় তাঁর গান ‘আসমান জমিন’। জি-সিরিজের ইউটিউব চ্যানেলে গানটি মুক্তি পায়।