
গত দুই দশক রাভিনা ট্যান্ডনকে নিয়ে গল্প তো কম হয়নি। তাঁর ক্যারিয়ার ও ব্যক্তিজীবনে চড়াই–উতরাইয়ের সীমা নেই। সেসব নিয়ে কিন্তু কখনো লুকোছাপা করেননি এই অভিনেত্রী। বড় এক তারকার সঙ্গে বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর মানসিকভাবে ভীষণ ভেঙে পড়েছিলেন। মনটাকে শান্ত করতে দত্তক নিয়েছিলেন দুটি সন্তান। পরে প্রযোজক অনিল থাড়ানিকে বিয়ে করে সংসারি হন। বলিউডের বেশ কিছু সুপারহিট ছবির নায়িকা রাভিনা ট্যান্ডনের আজ ৪৭তম জন্মদিন।
২০০১ সালে ‘আকস’ ছবিতে অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন রাভিনা। ‘খিলাড়িয়োঁ কা খিলাড়ি’, ‘শুল’, ‘দামান’, ‘আন্দাজ আপনা আপনা’, ‘জিদ্দি’সহ বেশ কিছু ছবি আছে, যেগুলো তাঁর ক্যারিয়ারকে করেছিল আলোচিত। প্রেমের কারণে একপর্যায়ে সিনেমা ছেড়ে দেন। এক সাক্ষাৎকারে এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘আমার বিয়ে পাকা হয়ে গিয়েছিল। আগেভাগেই তাই ক্যারিয়ার গুটিয়ে ফেলেছিলাম। কারণ, আমরা ঠিক করেছিলাম, বিয়ের দিনই হবে আমার শুটিংয়ের শেষ দিন। আঙ্গীকারের কারণেই আমি এটা করেছিলাম।’
পরে অনিল থাড়ানির মধ্যে প্রেমের সন্ধান পেয়েছিলেন রাভিনা। এত দ্রুত কীভাবে জড়িয়ে গেলেন তাঁরা? রাভিনা বলেন, ‘অনিলের সঙ্গে পরিচয়টা আকস্মিক। বলা যায়, সে নিজেই আগুয়ান হয়েছিল। আমিও সব সময় সাধারণ, সৎ, ভালো একজন মানুষকে চেয়েছি। দেখতে সে এত ভদ্র আর ভালো মানুষ ধরনের যে প্রথম দেখাতেই সে আমার ক্রাশ হয়ে ওঠে।’ রাভিনা জানিয়েছিলেন, ‘সম্পর্কটা এত দ্রুত হয়ে গেল যে আমার পরিবারও বিষয়টি নিয়ে সন্দিহান ছিল। আগস্টে দেখা হলো, অক্টোবরে আংটিবদল, ফেব্রুয়ারিতে বিয়ে। জুনের মধ্যে আমি অন্তঃসত্ত্বা।’
২১ বছর বয়সেই অবশ্য দুটি মেয়েশিশু দত্তক নেন রাভিনা, পূজা আর ছায়া। তাঁর সেই দুই মেয়েও এখন মা। তখনকার স্মৃতিচারণা করে তিনি বলেন, ‘সাপ্তাহিক ছুটিতে আমি মাকে নিয়ে এতিমখানাগুলোতে ঘুরতাম। তখন আমার এক কাজিন দুটি বাচ্চা রেখে মারা গেল। যেভাবে তারা বড় হচ্ছিল, সেটা আমার ভালো লাগেনি। আগপিছ না ভেবেই তাদের নিজের বাড়িতে নিয়ে এলাম। ধরেই নিয়েছিলাম, আমার কাছে আসাই তাদের নিয়তি ছিল। তাদের যে জীবনটা প্রয়োজন, সেভাবেই তাদের গড়ে তুলতে চেষ্টা করলাম। অনেক টাকার মালিক ছিলাম না বটে, কিন্তু নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।’
৪৬ বছর বয়সে সেই রাভিনা এখন নানি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নানি শব্দটা শুনলেই মনে হবে ৭০–৮০ বছরের বৃদ্ধ। আমার বয়স যখন ২১ বছর, তখনই আমার বড় মেয়ের বয়স ১১। আমার সঙ্গে মেয়ের বয়সের ব্যবধান মাত্র ১১ বছর।’
যত দিন কাজ করেছেন, কোনো ছাড় দেননি রাভিনা। যে ছবিগুলোতে কাজ করেছেন, সেসবের গল্পে নায়িকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকত। গুরুগম্ভীর গল্প থেকে হাসির গল্প—দুই ধরনের ছবিতেই রাভিনাকে পাওয়া যেত। সেসব ছবিতে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছিলেন তিনি। কারণ, খুব যাচাই–বাছাই করে ছবির কাজ নিতেন তিনি, এমনকি কোনো অতিথি চরিত্রও যদি হতো। তবে একবার বাধ্য হয়ে তাঁকে একটা অতিথি চরিত্রে অভিনয় করতে হয়েছিল, যেটা করার তাঁর একদমই মত ছিল না। ‘বুড্ডা হোগা তেরে বাপ’ ছবিতে তাঁকে ডাকা হলে শুরুতে তিনি রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘টানা চার বছর কাজ করি না। কেমিও রোল দিয়ে ফিরতে চাইছিলাম না। চরিত্রটাও এমন যে আমাকে গোলাপি জিনস আর হলুদ স্কার্ফ পরতে হবে! আমি বললাম, জোকারের মতো এসব পোশাক আমি পরব না। কিন্তু কী করব, অমিতাভ বচ্চন ফোন করে বললেন, করো। অমিতাভ বচ্চন ফোন করলে রাজি না হয়ে পারি?’