আজ ৬০–এ পা দিলেন বলিউডের সুপারস্টার সালমান খান। তিন দশকের বেশি সময় ধরে পর্দায় রোমান্স আর অ্যাকশনের মাধ্যমে দর্শকদের মন জয় করে চলেছেন এই তারকা। তবে এই দীর্ঘ পথ মোটেও সহজ ছিল না তাঁর জন্য। কখনো আকাশছোঁয়া সফলতা, আবার চরম ব্যর্থতা; প্রেম-বিরহ, বিতর্ক, আইনি জটিলতা আর সাম্প্রতিক প্রাণনাশের হুমকি মিলিয়ে সালমানের জীবন পর্দার নায়কের থেকে কম কিছু নয়। তবে জীবনের সব ঝড়ঝাপটার সামনে অবিচল থেকেছেন তিনি। তাই আজও সালমান অপ্রতিরোধ্য। তরুণীদের কাছেও সমান জনপ্রিয় ৬০ বছরের এই ‘ব্যাচেলর’। ছবি হিট হোক বা ফ্লপ, তা তাঁর তারকাখ্যাতিকে প্রভাবিত করে না। কারণ, তিনি সবার আদরের ‘ভাইজান’।
শুরু থেকে আজ
১৯৮৮ সালে ‘বিবি হো তো অ্যায়সি ছবির মাধ্যমে বলিউডে অভিষেক হয়েছিল সালমান খানের। ঠিক তার পরের বছর ‘ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া’ ছবিতে ‘প্রেম’ রূপে ঝড় তুলেছিলেন তিনি। রোমান্টিক নায়ক হিসেবে রাতারাতি হয়ে উঠেছিলেন তারকা। ‘সাজন’, ‘হাম আপকে হ্যায় কৌন’সহ একাধিক সফলতার কাহিনি লিখেছেন তিনি। মাঝে একের পর এক ফ্লপের ধাক্কায় তাঁর ক্যারিয়ার প্রায় ডুবতে বসেছিল। ২০০৯ সালে ওয়ান্টেড সিনেমায় অ্যাকশন হিরো রূপে ধরা দেন সালমান।
১৯৮৮ সালে ‘বিবি হো তো অ্যায়সি ছবির মাধ্যমে বলিউডে অভিষেক হয়েছিল সালমান খানের। ঠিক তার পরের বছর ‘ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া’ ছবিতে ‘প্রেম’ রূপে ঝড় তুলেছিলেন তিনি।
তাঁর জীবনে নতুন এক অধ্যায় শুরু হয়। এরপর সালমানের ক্যারিয়ারের আবার মোড় ঘুরিয়ে দেয় ‘তেরে নাম’ ছবিটি। এরপর পর্দায় তাঁর উপস্থিতি মানেই বক্স অফিসে ঝড়। কখনো ‘বজরঙ্গি ভাইজান’ হয়ে, কখনো ‘সুলতান’ রূপে, ‘চুলবুল পান্ডে’র ভূমিকায়, আবার ‘টাইগার’ হয়ে সালমান নয় থেকে নব্বই বয়সীর মন জয় করে এসেছেন। ইদানীং অবশ্য তাঁর ছবি বক্স অফিসে সেভাবে সফলতা পাচ্ছে না। কিন্তু আজও সালমানের জনপ্রিয়তা এতটুকু কমেনি।
কখনো ‘বজরঙ্গি ভাইজান’ হয়ে, কখনো ‘সুলতান’ রূপে, ‘চুলবুল পান্ডে’র ভূমিকায়, আবার ‘টাইগার’ হয়ে সালমান নয় থেকে নব্বই বয়সীর মন জয় করে এসেছেন। ইদানীং অবশ্য তাঁর ছবি বক্স অফিসে সেভাবে সফলতা পাচ্ছে না। কিন্তু আজও সালমানের জনপ্রিয়তা এতটুকু কমেনি।
পারিবারিক মূল্যবোধ
১৯৬৫ সালে মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে জন্মগ্রহণ করলেও মুম্বাইতে সালমানের বেড়ে ওঠা। তাঁর বাবা সেলিম খান হিন্দি ছায়াছবির দুনিয়ার খ্যাতনামা চিত্রনাট্যকার। সিনেমার আবহে ভাইজানের বেড়ে ওঠা। তবে সালমানের জীবনে তাঁর পরিবার সবকিছু। সালমানের পারিবারিক মূল্যবোধ গভীর। আজও মঞ্চে বাবার পাশে বসেন না তিনি।
পুরো অনুষ্ঠান চলাকালীন বাবার পেছনে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন। বাবা, মা, দুই ভাই, দুই বোনসহ পরিবারের সবাইকে বুক দিয়ে আগলে রাখেন তিনি। জন্মদিন, ঈদ বা যেকোনো উৎসব পরিবারের সবার সঙ্গে উদ্যাপন করতে ভালোবাসেন এই সুপারস্টার।
বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে সালমান বলে এসেছেন যে পরিবারই তাঁর সবচেয়ে বড় ভরসা। যেকোনো বিতর্ক বা সংকটে পরিবারই তাঁর পাশে শক্তভাবে থেকেছে।
বিতর্কিত প্রেমকাহিনি
দীর্ঘ অভিনয়জীবনে বারবার প্রেমে পড়েছেন সালমান। আর তাঁর সব প্রেমকাহিনিকে ঘিরে জন্ম নিয়েছে হাজারো বিতর্ক। সাবেক বিশ্বসুন্দরী ও অভিনেত্রী ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক বলিউডের প্রেমের ইতিহাসে অন্যতম এক বিতর্কিত অধ্যায়। এরপর অভিনেত্রী ক্যাটরিনা কাইফের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা নিয়ে বলিউডের অলিগলিতে ছিল নানা গুঞ্জন। কিন্তু এই প্রেম বেশি দিন টেকেনি। অভিনেত্রী সোমি আলীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে বহুদিন ফিসফাস ছিল বলিউডে।
তাঁর বাবা সেলিম খান হিন্দি ছায়াছবির দুনিয়ার খ্যাতনামা চিত্রনাট্যকার। সিনেমার আবহে ভাইজানের বেড়ে ওঠা। তবে সালমানের জীবনে তাঁর পরিবার সবকিছু। সালমানের পারিবারিক মূল্যবোধ গভীর। আজও মঞ্চে বাবার পাশে বসেন না তিনি। পুরো অনুষ্ঠান চলাকালীন বাবার পেছনে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন।
তবে এই প্রেমকাহিনিও বেশি দীর্ঘ হয়নি। একসময়ে তাঁদের সম্পর্কের ইতি ঘটে। সোমি আলী একাধিক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন যে সালমান তাঁর ওপর শারীরিক নির্যাতন করতেন। এরই মাঝে মডেল-অভিনেত্রী সঙ্গীতা বিজলানির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ককে ঘিরে উঠেছিল নানা গুঞ্জন। শোনা যায়, তাঁদের সম্পর্ক নাকি বিয়ে পর্যন্ত গড়াতে চলেছিল। কিন্তু ভাগ্য বোধ হয় অন্য কিছু চেয়েছিল। তাই আজও চিরকুমার সালমান। এদিকে রোমানীয় শিল্পী ইউলিয়া ভানতুরকে ঘিরে সালমানের রোমান্সের খবর পেজথ্রিতে উঠে আসত প্রায়ই। বিয়ের প্রসঙ্গ সাধারণত এড়িয়ে চলেন সালমান। অনেক সময় রসিকতা করে এই সুপারস্টার বলেছেন, ‘ভাগ্যই সব ঠিক করে।’
দীর্ঘ অভিনয়জীবনে বারবার প্রেমে পড়েছেন সালমান। আর তাঁর সব প্রেমকাহিনিকে ঘিরে জন্ম নিয়েছে হাজারো বিতর্ক। সাবেক বিশ্বসুন্দরী ও অভিনেত্রী ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক বলিউডের প্রেমের ইতিহাসে অন্যতম এক বিতর্কিত অধ্যায়। এরপর অভিনেত্রী ক্যাটরিনা কাইফের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা নিয়ে বলিউডের অলিগলিতে ছিল নানা গুঞ্জন।
আলো থেকে আঁধার
সালমানের জীবনে কখনো এসেছে আলো, আবার কখনো নিকষ অন্ধকার। বৈভব্যময়, বিলাসবহুল জীবন ছেড়ে জেলের অন্ধকার, স্যাঁতসেঁতে ঘুপচিঘরেও রাত কাটাতে হয়েছে এই বলিউড তারকাকে। সালমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, যোধপুরে ‘হাম সাথ সাথ হ্যায়’ ছবির শুটিংয়ের সময় কৃষ্ণকায় হরিণ হত্যা করেছেন অভিনেতা। দীর্ঘ সময় ধরে এই মামলা চলেছিল। পরে অবশ্য আদালত তাঁকে এই মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন। এরপর আবার আইনি ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছিলেন সালমান। ‘হিট অ্যান্ড রান’ মামলায় জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। অভিযোগ ছিল যে তাঁর গাড়িতে পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন এক ফুটপাতবাসী, চারজন আহত হয়েছেন। মদ্যপ অবস্থায় এবং বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন ধরে এই মামলা চলার পর সালমানকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।
বাইরে থেকে কঠিন মনে হলেও মানসিক দিক থেকে নরম মনের সালমান। তাই কারও বিপদ দেখলে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। প্রায়ই উঠে আসে তাঁর সমাজসেবামূলক কাজের নানা কাহিনি। করোনাকালেও অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন সালমান। বিভিন্ন সময়ে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ত্রাণ পাঠান অভিনেতা।
প্রাণনাশের হুমকি
সালমান খানের জীবনে বিতর্কের পাশাপাশি প্রাণনাশের হুমকির ঘটনাও এসেছে বহুবার। সাম্প্রতিক সময়ে মুম্বাই পুলিশের নম্বরে হুমকিমূলক বার্তা পাঠানো হয়, যেখানে বলা হয় সালমানকে তাঁর বাসায় ঢুকে হত্যা করা হবে এবং তাঁর গাড়ি বোমা দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হবে। এরপর মুম্বাই পুলিশ সালমানের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করে; দেওয়া হয় বুলেটপ্রুফ বিশেষ গাড়ি। পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে, কুখ্যাত গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোই দলের পক্ষ থেকে সালমানকে ক্রমাগত হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এমনকি একবার মুম্বাইয়ের বান্দ্রায় ভাইজানের গ্যালাক্সি অ্যাপার্টমেন্টের বাইরে কয়েক রাউন্ড গুলি চালিয়েছিল অজ্ঞাতনামা কয়েকজন যুবক। লরেন্স বিষ্ণোই দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে কৃষ্ণকায় হরিণ হত্যার অপরাধে সালমানকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। জীবনের অনিশ্চয়তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সালমান বলেছেন, তাঁর ভাগ্যে যা লেখা আছে তা হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে মুম্বাই পুলিশের নম্বরে হুমকিমূলক বার্তা পাঠানো হয়, যেখানে বলা হয় সালমানকে তাঁর বাসায় ঢুকে হত্যা করা হবে এবং তাঁর গাড়ি বোমা দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হবে। এরপর মুম্বাই পুলিশ সালমানের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করে; দেওয়া হয় বুলেটপ্রুফ বিশেষ গাড়ি।
সমাজসেবায় সালমান
বাইরে থেকে কঠিন মনে হলেও মানসিক দিক থেকে নরম মনের সালমান। তাই কারও বিপদ দেখলে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। প্রায়ই উঠে আসে তাঁর সমাজসেবামূলক কাজের নানা কাহিনি। করোনাকালেও অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন সালমান। বিভিন্ন সময়ে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ত্রাণ পাঠান অভিনেতা। সালমান তাঁর নিজস্ব ব্র্যান্ড বিইং হিউম্যানের মাধ্যমে নানা সমাজসেবামূলক কাজ করে থাকেন। তাঁর কাছে কেউ সাহায্য চাইলে কাউকে খালি হাতে ফেরান না সালমান, এ কথা কারও অজানা নেই।
সালমান মানে আবেগ, ভালোবাসা, উন্মত্ততা। আজও তাঁর বাসার বাইরে হাজার হাজার মানুষ অপেক্ষা করেন তাঁকে একঝলক দেখার জন্য। প্রতিবারের মতো এবারও বিশেষ এই দিনে দূর-দূরান্ত থেকে শত শত মানুষ হয়তো ভিড় করেছেন গ্যালাক্সি অ্যাপার্টমেন্টের সামনে। তাঁরা শুধু বলতে চান, ‘শুভ জন্মদিন ভাইজান’।