সঞ্জয় মিশ্র। অভিনেতার ফেসবুক থেকে
সঞ্জয় মিশ্র। অভিনেতার ফেসবুক থেকে

২০০ টাকার দিনমজুর থেকে ১৫০ কোটির মালিক তিনি

বলিউডের অভিজ্ঞ অভিনেতা সঞ্জয় মিশ্র জীবনে নানা চড়াই-উতরাই দেখেছেন। কখনো অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেয়ে সিনেমা ছেড়ে ধাবায় কাপ ধোয়ার কাজ করেছেন, আবার আজ তিনি মুম্বাইয়ের ম্যাড আইল্যান্ডে কোটি টাকার বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনেছেন।

শুটিংয়ে সঞ্জয় মিশ্র। অভিনেতার ফেসবুক থেকে

জানা গেছে, ৬১ বছর বয়সী এই অভিনেতা ৪ কোটি ৭৫ লাখ রুপিতে (প্রায় ৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা) সমুদ্রসৈকত-সংলগ্ন একটি অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন। রেজিস্ট্রেশন নথি অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ১১ জুলাই এই চুক্তি সম্পন্ন হয়। ফ্ল্যাটটি রাহেজা এক্সোটিকা সাইপ্রাস টাওয়ারের ১৫ তলায়। এতে রয়েছে ১ হাজার ৭০২ বর্গফুট কার্পেট এলাকা এবং অতিরিক্ত ২০১ বর্গফুটের ডেক—সব মিলিয়ে প্রায় দুই হাজার বর্গফুট জায়গার এই বাড়ি। এ জন্য সঞ্জয়কে ২৮ লাখ ৫০ হাজার রুপি স্ট্যাম্প ডিউটি ও ৩০ হাজার রুপি রেজিস্ট্রেশন চার্জ দিতে হয়েছে।

মুম্বাইয়ের এই অভিজাত এলাকায় ইতিমধ্যেই আর্চনা পুরান সিং, পঙ্কজ ত্রিপাঠি, কার্তিক আরিয়ান, আয়ুষ্মান খুরানা, রোনিত রায়সহ একাধিক তারকা সম্পত্তির মালিক। এমনকি গায়ক জুবিন নটিয়ালও একই টাওয়ারে একটি চার কক্ষের ফ্ল্যাট কিনেছেন।

‘ভুল ভুলাইয়া ৩’ সিনেমার দৃশ্য। আইএমডিবি

ক্যারিয়ারের একঝলক
১৯৯৫ সালে চলচ্চিত্রজগতে শুরুর পর সঞ্জয় মিশ্র এখন পর্যন্ত ২০০টির বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে তাঁকে ‘ভুল ভুলাইয়া ৩’, ‘ভুল চুক মাফ’, ‘সন অব সরদার ২’ ও ‘হির এক্সপ্রেস’ ছবিতে দেখা গেছে। সিনেমার পাশাপাশি তিনি নিয়মিত নাটক ও মঞ্চে অভিনয়ও করেন।

শুরুর গল্প
বিহারে জন্ম নেওয়া সঞ্জয় মিশ্র প্রথম অভিনয়ে আসেন টেলিভিশন ধারাবাহিক চাণক্য আর জনপ্রিয় সিটকম ‘অফিস অফিস’ দিয়ে। তবে বলিউডে তাঁর পরিচিতি আসে রোহিত শেঠির ‘গোলমাল-ফান আনলিমিটেড’ আর ‘ধামাল’ ছবির সাফল্যে। পরের ধাপে ‘অল দ্য বেস্ট: ফান বিগিনস’ আর ‘ফাঁস গ্যায়ে রে ওবামা’তে নজর কাড়েন তিনি। ২০১৪ সালে ‘আঁখোঁ দেখি’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য পান ফিল্মফেয়ার সমালোচক পুরস্কার। সাম্প্রতিক ‘বধ’ ছবিতেও অভিনয় দারুণ প্রশংসিত হয়, আরেকবার হাতে ওঠে সমালোচক পুরস্কার।

অসুস্থতার ধকল
২০০৯ সালে ভয়াবহ অসুস্থতায় পড়েন সঞ্জয়। দিল্লির এক হাসপাতালে দীর্ঘদিন কাটে। চিকিৎসকেরা তাঁর পেট থেকে প্রায় ১৫ লিটার পুঁজ বের করেছিলেন। সেই ধকলের মধ্যেই বাবাকে হারান। এক সাক্ষাৎকারে সেই স্মৃতি মনে করে সঞ্জয় বলেন, ‘একদিন আমি বললাম হাসপাতালের খাবারে আর ভালো লাগছে না। বাবা বললেন, “বাড়ি ফিরলে আমি রান্না করব, একসঙ্গে খাব।” পরের দিনই হার্ট অ্যাটাকে বাবা চলে গেলেন। পৃথিবী তখন ফাঁকা মনে হয়েছিল।’

ঋষিকেশের দিনগুলো
হাসপাতাল থেকে বের হয়ে তিনি সব ছেড়ে চলে যান উত্তরাখন্ডের ঋষিকেশে। গঙ্গার ধারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নদীর ঢেউয়ের ছন্দ দেখতেন। কখনো সন্ন্যাসীদের সঙ্গে আড্ডা, কখনো ছোট্ট ধাবায় চা আর নুডলস বানিয়ে বিক্রি করতেন। পরিবারের লোকেরা গিয়ে তাঁকে ফিরিয়ে আনেন। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ধাবার মালিক বলেছিল দিনে ৫০টা কাপ ধুতে হবে, মজুরি ১৫০ রুপি (প্রায় ২০০ টাকা)। তখন ভেবেছিলাম, বেঁচে থাকার জন্য টাকাটা দরকার।’ পরে পরিচালক রোহিত শেঠির ফোনে তিনি ফেরেন চলচ্চিত্রে—যেটি ছিল ‘অল দ্য বেস্ট’ ছবির প্রস্তাব। ছবির সংলাপ ‘ধোন্ডু…জাস্ট চিল’ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, আর সেখান থেকেই নতুন অধ্যায় শুরু।

সঞ্জয় মিশ্র। অভিনেতার ফেসবুক থেকে

সঞ্জয় মিশ্র এখন
বর্তমানে সঞ্জয় মিশ্রর সম্পদের পরিমাণ ১৫০ কোটি রুপি। তিনি লোনাভালায় একটি অর্গানিক ফার্মহাউস ও শিবমন্দির নির্মাণ করেছেন। এ ছাড়া তাঁর সংগ্রহে আছে টয়োটা ফর্চুনার ও বিএমডব্লিউর মতো বিলাসবহুল গাড়ি। অভিনয়জীবনের শুরুতে ধাবায় কাপ ধোয়া থেকে আজ সমুদ্রসংলগ্ন ফ্ল্যাটের মালিক হওয়া—সঞ্জয় মিশ্রর পথচলাই যেন জীবনের লড়াইয়ে যেন সিনেমার গল্পের মতোই।

জীবনদর্শন
নিজেকে তিনি মনে করেন একধরনের ফকির। তাঁর ভাষ্যে, ‘কখনো কাজ না থাকলে লোনাভালার ফার্মহাউসে চলে যাই। সারা দিন মাঠে বসে ভাবি জীবন নিয়ে। অভিনেতাদের জন্য আত্মবিশ্লেষণ জরুরি। “আঁখোঁ দেখি” করার পর মনে হলো জীবন থেমে গেছে। “বধ” ছবির পর এক মাস বিষণ্নতায় ভুগেছি। পরিবারই আমাকে স্বাভাবিক করে।’ বেনারস তাঁর সবচেয়ে প্রিয় জায়গা। সংকীর্ণ গলি, গঙ্গার ঘাট, রাস্তার খাবার আর সংগীত—সবকিছুতেই নিজেকে খুঁজে পান তিনি। ‘অভিনয় আমার পেশা নয়, আমার জীবন। এখন ষাটের কোঠায় এসে চাই এমন কিছু রেখে যেতে, যেটা মানুষ মনে রাখবে,’ বলেন তিনি। অর্থের গুরুত্ব অস্বীকার করেন না তিনি, তবে বলেন, ‘আমি শুধু চাই ভালো হাসপাতালে নিজের চিকিৎসার মতো সামর্থ্য থাকুক। সকালে ঘুম ভেঙে যেন পরিবেশ ভালো লাগে, পরিবারের সঙ্গে ভালো খাবার খেতে পারি—এটাই আমার সুখ।’
স্ত্রী কিরণ সংসারের আর্থিক দিক সামলান, আর দুই মেয়ে পাল ও লামহার জন্য দিয়েছেন ব্যতিক্রমী নাম, যেন ভিড়ের ভেতর আলাদা হয়ে থাকে।
তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস