শাহরুখ খান। এএফপি
শাহরুখ খান। এএফপি

‘গৌরী চায় না আমি মেয়েদের জড়িয়ে ধরি’

বলিউড তারকা হওয়ার আগেও শাহরুখ খানের জীবন ছিল এক অনিশ্চিত সংগ্রামের গল্প। মুম্বাইয়ের চকমকে দুনিয়ায় নিজের জায়গা করে নেওয়ার আগে তিনি লড়েছেন একা—মায়ের অসুস্থতা, সংসারের টানাপোড়েন আর অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সঙ্গে। সেই সময়টায় পাশে ছিলেন অভিনেতা ও প্রযোজক বিবেক বাসওয়ানি, যাঁর ঘরেই নাকি প্রথম আশ্রয় পেয়েছিলেন শাহরুখ। সম্প্রতি রেডিও নাশার এক সাক্ষাৎকারে বিবেক সেই দিনগুলোর কথা তুলে ধরেন। অভিনেতার জন্মদিন কাল রোববার। জেনে নেওয়া যাক সেই সময়ের গল্প।

‘দুই দিন ধরে কিছু খায়নি’
বিবেক জানান, ‘শাহরুখ তখন আমার বাড়িতেই থাকত। একদিন বলল, ভেজ খেতে ভালো লাগে না, তাই বাইরে গিয়ে কিছু খাই। প্রথম ২০ মিনিট চুপচাপ খেয়ে গেল—কারণ, সে প্রায় দুই দিন ঠিকমতো কিছু খায়নি।’ খাওয়া শেষে শাহরুখ তাঁকে বলেছিল, ‘তুমি জানো, বিবেক? আমার মা মারা যাচ্ছেন।’

বিবেক বলেন, ‘আমি হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম। এরপর ও মায়ের অসুখ, বোন শেহনাজ আর গৌরীর কথা বলতে শুরু করল। সেদিন রাতভর কথা বলেছিলাম, সময় কেটে গেল কফির কাপের পর কাপে।’

শাহরুখ খান ও গৌরী। ইনস্টাগ্রাম থেকে

‘গৌরী চায় না আমি মেয়েদের জড়িয়ে ধরি’
সে সময় শাহরুখের মা হাসপাতালে, আর গৌরীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কও তখন টালমাটাল। সিনেমা করার আগ্রহও ছিল না তাঁর। বিবেকের ভাষায়, ‘প্রযোজক বিক্রম মালহোত্রা তখন ওকে এক সিনেমার প্রস্তাব দেন, কিন্তু শাহরুখ স্পষ্ট জানায়—গৌরী চায় না আমি পর্দায় মেয়েদের জড়িয়ে ধরি। তাই সিনেমা নয়, শুধু টেলিভিশনেই থাকবে।’
তবুও বিবেক তাঁকে রাজি করান তিন দিনের শুটিংয়ে শিমলায় যেতে। সেই ছবিই ছিল ‘মায়া মেমসাব’—কেতন মেহতার পরিচালনায় একটি শিল্পধর্মী সিনেমা, যা শাহরুখের টিভি-অভিনয়ের মতোই গাঢ় ও সংবেদনশীল ছিল। এই ছবি তাঁর মা মারা যাওয়ার আগেই শেষ হয়।

মায়ের মৃত্যু, তারপর মুম্বাইয়ে ফেরা
মায়ের মৃত্যুর খবরের পর শাহরুখ সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েন। ১০ দিন পর এক ভোরে বিবেকের দরজায় ঘণ্টা বাজে। দরজা খুলে বিবেক দেখেন, শাহরুখ দাঁড়িয়ে, হাতে বিশাল ব্যাগ। শুধু বলেছিলেন, ‘তুমি কি আমার সঙ্গে একটা সিনেমা করবে?’
বিবেক স্মরণ করেন, ‘আমি বললাম, তুমি তো সিনেমা করতে চাও না! ও উত্তর দিল, “এখন চাই। এটা আমার মায়ের স্বপ্ন ছিল—আমি যেন সুপারস্টার হই। সেই স্বপ্ন পূরণ করতেই ফিরে এসেছি।”’
সেই রাতেই প্রেসিডেন্ট হোটেলে বসে কফির টেবিলে জন্ম নেয় এক নতুন পরিকল্পনা—‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’।

এক বন্ধুত্ব থেকে শুরু এক কিংবদন্তি
যদিও শাহরুখের প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ছিল ‘দিওয়ানা’ (১৯৯২), এরপর আসে ‘চমত্কার’। তবে ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’-ই তাঁকে বলিউডের সামনের সারিতে তুলে আনে। ছবিটি সেই বছর অন্যতম হিট হয়, আর শাহরুখের নাম ছড়িয়ে পড়ে ভারতজুড়ে।

‘রাজু বান গেয়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় শাহরুখ খান। আইএমডিবি

বছর তিনেক আগে যখন শাহরুখ তাঁর প্রথম জাতীয় পুরস্কার পান, বিবেক বাসওয়ানি তাঁকে অভিনন্দন জানালে অভিনেতা উত্তর দেন, ‘সবকিছু শুরু হয়েছিল তোমার কাছ থেকে, বিবেক। রাজু অবশেষে জেন্টলম্যান হয়ে গেল।’
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস অবলম্বনে