অচলা সচদেব। আইএমডিবি
অচলা সচদেব। আইএমডিবি

১৩০টি সিনেমায় অভিনয় করা এই অভিনেত্রীর নিঃসঙ্গ মৃত্যু হয়

‘আয়ে মেরি জোহরা জাবিন…’, যশ চোপড়ার ‘ওয়াক্ত’-এর এই গানে যাঁর ওপর দৃশ্যায়িত হয়েছিল রোমান্টিক মুহূর্তটি, তিনি অচলা সচদেব। শুধু ‘ওয়াক্ত’ নয়, তিনি ছিলেন ‘কাভি খুশি কাভি গম’-এ শাহরুখ খান ও হৃতিক রোশনের দাদি, আবার ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে’-এ কাজলের দাদিও হয়েছিলেন তিনি। ১৩০টির বেশি সিনেমায় আলোচিত চরিত্র করার পরও শেষ জীবনটা নিঃসঙ্গ কেটেছে অভিনেত্রীর। মৃত্যুর পর তাঁর শেষকৃত্যে দেখা যায়নি কোনো বলিউড তারকাকেও।

ক্যারিয়ারের শুরু
১৯২০ সালের ৩ মে, পেশোয়ারে জন্ম নেন অচলা সচদেব। মাত্র ছয় বছর বয়সে বাবাকে হারান। মা একাই বড় করেন তিন মেয়েকে। ছোটবেলা থেকেই অচলার প্রতিজ্ঞা ছিল, নিজের পায়ে দাঁড়ানো ছাড়া বিয়ে নয়। সেই প্রতিজ্ঞা রেখেছিলেন তিনি। কর্মজীবনের শুরু অল ইন্ডিয়া রেডিও, লাহোরে। দেশভাগের পর চলে আসেন দিল্লি। সেখানেও রেডিও নাটকে নিয়মিত অংশ নিতেন।

‘মা’ চরিত্রেই আটকে গেলেন
২০ বছর বয়সে প্রথম অভিনয় ‘ফ্যাশনেবল ওয়াইফ’ ছবিতে। মায়ের চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসা পেলেও এরপর দীর্ঘ সময় ধরে বলিউড তাঁকে শুধুই ‘মা’ চরিত্রে আটকে রাখে। এরপর ‘সঙ্গম’, ‘মেরা নাম জোকার’, ‘আন্দাজ’, ‘দাগ’, ‘চাঁদনি’—সব ছবিতেই তাঁকে দেখা গেছে বড় মাপের শিল্পীদের পাশে শক্তিশালী পার্শ্বচরিত্রে।

অচলা সচদেব। আইএমডিবি

জনপ্রিয়তার শীর্ষে
যশ চোপড়ার ১৯৬৫ সালের ছবি ‘ওয়াক্ত’-এ বালরাজ সাহনির স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয়ই ছিল তাঁর ক্যারিয়ারের মোড় ঘোরানো মুহূর্ত। সেই ছবিতেই তাঁর ওপর চিত্রায়িত হয় কালজয়ী গান ‘আয়ে মেরি জোহরা জাবিন’ দিয়েই দর্শকের কাছে ব্যাপক পরিচিতি পান তিনি।

ব্যক্তিগত জীবন ও নিঃসঙ্গতা
চলচ্চিত্র পরিচালক জ্ঞান সচদেবকে বিয়ে করেছিলেন অচলা। তাঁদের একটি ছেলে হয়, জ্যোতিন। তবে বিয়ে টেকেনি, বিচ্ছেদ হয়। এরপর ছেলে বিদেশে চলে যায়, আর অচলা একা পড়ে যান। পরবর্তী সময় তিনি বিয়ে করেন ব্রিটিশ নাগরিক ক্লিফোর্ড ডগলাস পিটার্সকে এবং চলে যান পুনে। ২০০২ সালে স্বামীর মৃত্যু তাঁকে আরও একা করে দেয়। একাকিত্ব ও হতাশায় ভেঙে পড়েন অভিনেত্রী।

মৃত্যুর আগে দীর্ঘ অসুস্থতা
২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে রান্নাঘরে পড়ে গিয়ে ঊরুর হাড় ভেঙে যায় তাঁর। হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও পরবর্তী সময় মস্তিষ্কে একাধিক ব্লকেজ ধরা পড়ে। এ কারণে তিনি পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হন, দৃষ্টিশক্তিও হারান। সাত মাস ধরে পুনের একটি হাসপাতালে শয্যাশায়ী ছিলেন। ২০১২ সালের ৩০ এপ্রিল, ৯১ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়।

কেউ এল না...
বলিউডের একাধিক তারকার সঙ্গে কাজ করেছিলেন অচলা সচদেব। রাজ কাপুর থেকে শুরু করে করণ জোহর পর্যন্ত পরিচালকের ছবিতে ছিলেন তিনি। অথচ তাঁর মৃত্যুর সময় বলিউডের কেউই এসে শেষ শ্রদ্ধা জানাননি।