মনিকা পানওয়ার। অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম থেকে
মনিকা পানওয়ার। অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম থেকে

‘গডফাদার’ বদলে দিল মনিকার জীবনদর্শন

ছেলেবেলায় বলিউডের চাকচিক্যময় দুনিয়া থেকে অনেক দূরে ছিলেন মনিকা পানওয়ার। উত্তরাখন্ডের পাহাড়ে পাহাড়ে কেটেছে শৈশব। চণ্ডীগড়ে স্নাতক করতে গিয়ে বিশ্ব–সিনেমা ও বিশ্বনাটকের সঙ্গে পরিচয়। বদলে যায় মনিকার জীবন। আর হলিউড ছবি ‘গডফাদার’ পাল্টে দেয় তাঁর জীবনদর্শন। তখন থেকেই তাঁকে তাড়া করতে থাকে অভিনেত্রী হওয়ার অদম্য ইচ্ছা। আর এখন তাঁর ঝুলিতে ‘জামতারা’, ‘দুকান’, ‘খওফ’-এর মতো একাধিক সফল প্রকল্প। খুব শিগগির তাঁকে অনুরাগ কশ্যপের ছবি ‘নিশানচি’-তে দেখা যাবে।

হাতে–কলমে শিখে অভিনেত্রী হতে চেয়েছিলেন মনিকা, তাই দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামাতে (এনএসডি) অভিনয় নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন তিনি। হলিউড রিপোর্টার-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মনিকা নিজের জীবনের নানা বিষয় শেয়ার করেন। তাঁর ভাষ্যে, ‘ইরফান খান, নাসিরুদ্দিন শাহ, ওম পুরী, পীযূষ মিশ্র, অনুপম খের, নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকীর মতো কিংবদন্তিরা এনএসডিতে পড়াশোনা করেছেন। আমি একই প্রতিষ্ঠানে পড়েছি বলে বাবা অত্যন্ত রোমাঞ্চিত ছিলেন। আমার জন্য এটা অনেক বড় সম্মানের বিষয়।’

মনিকা পানওয়ার। অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম থেকে

২০১৮ সালে মুম্বাইয়ে আসেন মনিকা। তিনি জানতেন, একজন বহিরাগত হিসেবে এখানে টিকে থাকার প্রধান দুই মূলধন ধৈর্য আর কৌশল। তাই হৃতিক রোশনের ‘সুপার ৩০’ এবং ইমতিয়াজ আলীর ‘লাভ আজকাল’-এ ছোট চরিত্র পেয়েও লুফে নেন এই নবাগত। ভেবেছিলেন, বড় ছবিতে ছোট চরিত্রের মাধ্যমে বলিউড–সাম্রাজ্যের রাজপথের সন্ধান পাবেন। কিন্তু মুম্বাইয়ের ‘অলিগলি’তে ক্রমাগত ঘুরপাক খেতে থাকেন মনিকা। কিছুতেই ঠিক রাজপথে পৌঁছানো হচ্ছিল না। এই দুই ছবিতে অভিনয় করেও তেমন কোনো লাভ হয়নি।

‘হতাশ হয়েছিলাম, মনটা তখন ভেঙে গিয়েছিল। এসব ছবির সেট দুর্দান্ত ছিল। আমার প্রতি সবার আচরণও খুব ভালো ছিল। কিন্তু আমার মনে হয়েছিল, আমি এর জন্য নই। আমার জন্য অনেক বড় কিছু অপেক্ষা করছে। অথচ আমার প্রতিভা দেখানোর সুযোগ পাচ্ছিলাম না। তবে এটাও ভেবেছিলাম যে এটা আমার শুরুমাত্র,’ বললেন মনিকা।

দিন ফিরল। নেটফ্লিক্সের সিরিজ ‘জামতারা’ দিয়ে সবার নজর কাড়েন মনিকা। তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল এই সিরিজ। আমির খান সিরিজটি দেখার পর তাঁকে ফোন করে অভিনন্দন জানান। মনিকা বলেন, ‘আমির খানের কাছ থেকে ফোন পাওয়া আমার জীবনের সেরা প্রাপ্তিগুলোর মধ্যে একটি।’ এরপর ‘চুনা’, ‘মাস্ত মে রাহেনা কা’, ‘দুকান’, ‘খওফ’—একের পর এক উল্লেখযোগ্য প্রকল্প। এখন ক্যারিয়ারে স্থিতিশীলতা খুঁজে পেয়েছেন মনিকা। তবে তাঁর সংগ্রাম এখনো জারি আছে।

মনিকা পানওয়ার। অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম থেকে

মনিকার ভাষায়, ‘চ্যালেঞ্জের বিবর্তন হয়েছেমাত্র, শেষ হয়নি। আগে আর্থিক নিরাপত্তা, সঠিক সুযোগ পাওয়া আর সঠিক মানুষের সঙ্গে সংযোগ—এসব চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যেতে হতো। এখন চ্যালেঞ্জ ভালো চিত্রনাট্যের সন্ধান পাওয়া আর আমার অভিনীত চরিত্রের মাধ্যমে দর্শককে আকৃষ্ট করা। মানুষের ভালোবাসা, সম্মান পাওয়ার পর আপনা থেকেই এক দায়িত্ব চলে আসে। এই দায়িত্ব অজান্তেই চাপ সৃষ্টি করে। কোনোভাবেই দর্শককে নিরাশ করতে চাই না।’

মনিকা পানওয়ার। অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম থেকে

খুব শিগগির বড় পর্দায় আসছেন মনিকা। অনুরাগ কশ্যপের ‘নিশানচি’ ছবিতে তাঁকে দেখা যাবে। এ প্রসঙ্গে মনিকা বলেন, ‘এ কে (অনুরাগ কশ্যপ) স্যারের সঙ্গে কাজ করা আমার অনেক বড় স্বপ্ন পূরণ। এখনো উনি ফোন করলে আনন্দে লাফিয়ে উঠি। ওনার নাম আমার মোবাইলের স্ক্রিনে দেখলেই হৃৎস্পন্দন দ্বিগুণ হয়ে যায়। ওনার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা দারুণ। এখন দেখার বিষয়, দর্শক এ ছবির মাধ্যমে আমাকে কেমনভাবে গ্রহণ করেন। আমি ওনাদের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় আছি।’