সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনপ্রিয় মুখ ওরহান অবাত্রামণি। সবাই তাঁকে চেনে ‘ওরি’ নামেই। বলিউড তারকাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা, পার্টিতে নিয়মিত উপস্থিতির কারণে প্রায়ই খবরের শিরোনাম হন। এবার তিনি আলোচনায় এসেছেন ভিন্ন এক কারণে; ২৫২ কোটি রুপির মেফেড্রোন মামলায় তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সমন পাঠিয়েছে মুম্বাই পুলিশের অ্যান্টি-নারকোটিকস সেল (এএনসি)।
গতকাল বৃহস্পতিবার তাঁকে হাজির হতে বলা হয়েছিল; কিন্তু ওরি নিজে হাজির হননি। তাঁর হয়ে উপস্থিত হন আইনজীবী। তাঁর আইনজীবী তদন্ত কর্মকর্তাদের জানান, ‘ওরি বর্তমানে ব্যক্তিগত কারণে হাজির হতে পারছেন না।’ একই সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদের তারিখ ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি। এখন এএনসির সিনিয়র কর্মকর্তারা সেই আবেদন বিবেচনা করছেন।
কীভাবে আলোচনায় এল ওরির নাম
এই হাইপ্রোফাইল মামলার মোড় ঘোরে মূল অভিযুক্ত মোহাম্মদ সেলিম মোহাম্মদ সুহেল শেখ, ওরফে ‘ল্যাভিশ’, তদন্তে নতুন তথ্য দেওয়ার পর। বিলাসী জীবনযাপনের কারণে পরিচিত ল্যাভিশ তদন্তে দাবি করেন, তিনি যে মাদক পার্টিগুলো আয়োজন করতেন, সেখানে মুম্বাইয়ের পরিচিত তারকা, ফ্যাশন দুনিয়ার ব্যক্তিত্ব, প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য এবং আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন দাউদ ইব্রাহিমের এক আত্মীয় নিয়মিত উপস্থিত থাকতেন। সেই তালিকায় ওরির নামও উঠে আসে।এই তথ্যের ভিত্তিতেই এএনসি তাঁকে সমন পাঠায়। যদিও এখনো তাঁর বিরুদ্ধে কোনো সরাসরি অভিযোগ আনা হয়নি।
কেন হাজির হলেন না ওরি
বৃহস্পতিবার এএনসির ঘাটকোপার ইউনিটে তাঁকে হাজির হতে বলা হয়েছিল; কিন্তু ওরি ব্যক্তিগত ব্যস্ততার কথা জানিয়ে সময় বাড়ানোর আবেদন করেন। তাঁর আইনজীবী জানান, ‘ওরি এই মুহূর্তে শহরের বাইরে বা ব্যক্তিগত কিছু কাজে ব্যস্ত, তাই তদন্তে হাজির হওয়া সম্ভব নয়।’ জিজ্ঞাসাবাদ পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন করা হলেও তদন্ত কর্মকর্তারা এখনো সিদ্ধান্ত নেননি। তাঁরা ওরিকে যে কোনো সময় হাজির হতে বলতে পারেন।
কে এই ‘ল্যাভিশ’
মোহাম্মদ সেলিম শেখ, যাকে ‘ল্যাভিশ’ নামে চেনে সবাই, তাঁর জীবনযাপন ছিল সিনেমার কাহিনির মতো । কুখ্যাত গ্যাংস্টার সেলিম ডোলার ঘনিষ্ঠ এই ব্যক্তি মেফেড্রোন তৈরির একটি বড় নেটওয়ার্ক পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ। গত বছর মহারাষ্ট্রের সাংগলিতে একটি গোপন মাদক কারখানা থেকে ২৫২ কোটি রুপির মেফেড্রোন উদ্ধার হওয়ার ঘটনায় তাঁকে প্রথম গ্রেপ্তার করা হয়। পরে এএনসির ঘাটকোপার ইউনিট তাঁকে পুনরায় আটক করে। গত মাসে তাঁকে দুবাই থেকে ভারতে ফিরিয়ে আনা হয়। ল্যাভিশের দেওয়া তথ্যই এখন তদন্তের মূল সূত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মুম্বাইয়ের বিনোদনজগৎ ও মাদক কেলেঙ্কারি
মুম্বাইয়ের বিনোদনজগতের সঙ্গে মাদকযোগের অভিযোগ নতুন নয় । সময়–সময় বিভিন্ন তদন্তে উঠে এসেছে মাদক-রেভ পার্টি, সিন্ডিকেট ও পাচারকারীদের সঙ্গে কয়েকজন তারকার যোগাযোগের বিষয়।
২০১১ সালের ‘ওশিয়ানিয়া’ রেভ পার্টি থেকে শুরু করে ২০২০ সালে সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পর মাদক-তদন্ত পর্যন্ত প্রতিটি ঘটনাই বলিউডকে আলোচনায় এনেছে। এর আগেও একাধিক অভিনেতা, অভিনেত্রী, মডেল ও টিভিশিল্পী মাদক মামলায় ডেকে পাঠানো হয়েছিল। বিনোদন দুনিয়ার এই গ্ল্যামার, পার্টি, পরিচিতি—সবকিছু মিলিয়ে মুম্বাইকে বহুদিন ধরেই মাদক ব্যবসার বড় বাজার হিসেবে চিহ্নিত করে আসছে তদন্ত সংস্থাগুলো। এ কারণেই প্রতিটি বড় মামলাতেই কোনো না কোনো পরিচিত নাম উঠে আসে।
ওরি মূলত বলিউড তারকাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণেই আলোচিত। বিভিন্ন পার্টি, ফ্যাশন ইভেন্ট ও তারকার সন্তানদের সঙ্গে তাঁর নিয়মিত উপস্থিতি তাঁকে আলোচনার কেন্দ্রে রাখে। তাই তাঁর নাম এই মামলায় আসতেই তা দ্রুতই সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
সামনে কী অপেক্ষা করছে ওরির
এএনসি এখনো ওরির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনেনি। তাঁকে কেবল জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সমন পাঠানো হয়েছে। তবে তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, ‘আগামী জিজ্ঞাসাবাদে যদি নতুন তথ্য পাওয়া যায়, তাহলে ওরির জন্য পরিস্থিতি জটিল হতে পারে।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর বিপুল জনপ্রিয়তা এবং বলিউড তারকাদের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা মিলিয়ে বিষয়টি এখনই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। তদন্ত এগোলে আরও অনেক নাম সামনে আসতে পারে।