দাউদ ইব্রাহিমের নাম হিন্দি সিনেমার দর্শকদের কাছে অজানা নয়। ‘নাম’ বললে বরং ভুল হয়। বরং এ ক্ষেত্রে মগনলাল মেঘরাজের উক্তি ‘নাম কী বদনাম বলুন’ বেশি জুতসই। দাউদের সঙ্গে বলিউডের যোগ বিশেষ করে হিন্দি সিনেমার নায়িকা মমতা কুলকার্নির সম্পর্ক নিয়ে অনেক খবর হয়েছে। তবে সেই মমতা এবার বললেন, দাউদ ইব্রাহিম নাকি সন্ত্রাসী নন!
বলিউডের সাবেক অভিনেত্রী ও বর্তমানে ধর্মগুরু মমতা কুলকার্নিকে ঘিরে নতুন বিতর্কে সরগরম ভারতজুড়ে সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। গোরখপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেছিলেন, ‘দাউদ ইব্রাহিম সন্ত্রাসী নন, তিনিই মুম্বাই বিস্ফোরণের মূল হোতা নন।’ এই মন্তব্য ছড়িয়ে পড়তেই দেশজুড়ে শুরু হয় ব্যাপক সমালোচনা।
‘দাউদ সন্ত্রাসী নন’ মন্তব্যে ক্ষোভ
তিন দিনের এক আধ্যাত্মিক সফরে গোরখপুরে গিয়েছিলেন মমতা কুলকার্নি। গত মঙ্গলবার সেখানে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘দাউদ ইব্রাহিম মুম্বাই বিস্ফোরণ ঘটাননি। তিনি কোনো সন্ত্রাসী নন।’ এই বক্তব্যেই শুরু হয় বিতর্কের ঝড়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিন্দার বন্যা বইতে থাকে। অনেকেই অভিযোগ তোলেন, ভারতে সবচেয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার দায় যাঁর ঘাড়ে, সেই দাউদ ইব্রাহিমকে নির্দোষ বলছেন।
উল্লেখ্য, ১৯৯৩ সালের মুম্বাই বিস্ফোরণে ২৫৭ জন নিহত ও ১ হাজারের বেশি মানুষ আহত হন। ওই ঘটনায় দাউদ ইব্রাহিমকে প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছিল তদন্ত সংস্থা। দাউদ ৮০-এর দশকের শেষদিকে ভারত ছেড়ে পালিয়ে দুবাই ও পরবর্তী সময় করাচিতে বসবাস করছেন বলে ভারতীয় গোয়েন্দাদের দাবি।
চাপে পড়ে ব্যাখ্যা দিলেন মমতা
প্রবল প্রতিক্রিয়ার মুখে গতকাল বৃহস্পতিবার আবারও সংবাদমাধ্যমের সামনে আসেন মমতা। এবার তিনি বলেন, ‘আমার বক্তব্য ভুলভাবে প্রচার করা হয়েছে। আমি দাউদের নয়, বিকি গোস্বামী সম্পর্কে বলেছিলাম। দাউদ অবশ্যই একজন সন্ত্রাসী।’
মমতা আরও জানান, ‘আমি দাউদ ইব্রাহিমকে কখনো দেখিনি, তাঁর সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্কও নেই। আমি রাজনীতি বা চলচ্চিত্রের সঙ্গে এখন আর জড়িত নই। আমি সম্পূর্ণভাবে আধ্যাত্মিকতায় নিয়োজিত। একজন কঠোর সনাতন ধর্মাবলম্বী হিসেবে, কোনোভাবেই দেশবিরোধী শক্তির সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা সম্ভব নয়।’
কে এই বিকি গোস্বামী
বিকি গোস্বামী, যাঁর নাম মমতা উল্লেখ করেছেন, একজন আন্তর্জাতিক মাদক ব্যবসায়ী, যিনি বহু বছর জেল খেটেছেন। ৯০-এর দশকে মমতার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের গুঞ্জন ছড়িয়েছিল। ২০১৬ সালে থানে পুলিশের তদন্তে ২০০০ কোটি রুপির এক আন্তর্জাতিক মাদক চক্রে মমতার নামও উঠে আসে।
চলচ্চিত্র থেকে সন্ন্যাসজীবন
মমতা নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি বলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী ছিলেন। তাঁর অভিনীত হিট ছবির মধ্যে রয়েছে ‘করণ অর্জুন’, ‘ক্রান্তিবীর’, ‘চায়না গেট’ ইত্যাদি। ২০০২ সালে তিনি চলচ্চিত্রজগৎ থেকে সরে দাঁড়ান।
কয়েক বছর ধরে মমতা কুলকার্নি উত্তর ভারতের বিভিন্ন আশ্রমে আধ্যাত্মিক জীবন যাপন করছেন। নিজেকে তিনি পরিচয় দেন এক ‘সন্ন্যাসিনী’ হিসেবে। ধর্মীয় আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন, যোগ ও ধ্যান শেখাচ্ছেন।
হিন্দুস্তান টাইমস অবলম্বনে