প্রতিবছরের মতো ২০২৫ সালেও বলিউড পেয়েছে একঝাঁক নতুন মুখ। ছোট পর্দা, ওটিটি ও রুপালি পর্দা—সবখানেই নিজ নিজ প্রতিভায় আলো ছড়িয়েছেন তাঁরা। প্রতিষ্ঠিত তারকাদের সঙ্গে সমানতালে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করে জায়গা করে নিয়েছেন দর্শকের হৃদয়ে। সাবলীল অভিনয়, আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতি আর ভরাট ব্যক্তিত্ব—সব মিলিয়ে এই তরুণ তারকারা ভবিষ্যতের বলিউডের ওপরই ভরসা জাগাচ্ছেন।
এ বছর বলিউডে সবচেয়ে বেশি সাড়া ফেলা এমন ৮ তরুণ অভিনয়শিল্পীকে নিয়েই এই প্রতিবেদন।
আহান পান্ডে—জেন–জির নতুন হিরো
২০২৫ সালের সবচেয়ে আলোচিত তরুণ নায়ক বলতে প্রথমেই উঠে আসে আহান পান্ডের নাম। বলিউডের পরিচিত তারকা চাংকি পান্ডের ভাতিজা হলেও আহানের পথচলা একেবারেই সহজ ছিল না। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান যশরাজ ফিল্মসের ব্যানারে নির্মিত মিউজিক্যাল রোমান্টিক ছবি ‘সাইয়ারা’–এর মধ্য দিয়ে বলিউডে তাঁর অভিষেক হয়।
প্রথম ছবিতেই বাজিমাত করেন আহান। অনেক সমালোচকের মতে, দীর্ঘদিন পর বলিউড এমন সুদর্শন ও ‘ম্যাচো’ নায়ক পেল। আত্মবিশ্বাসী অভিনয়, স্ক্রিন–প্রেজেন্স আর একধরনের আলাদা আকর্ষণ—এসব মিলিয়ে তিনি বর্তমানে জেন–জেনারেশনের অন্যতম পোস্টার বয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তাঁর বিপুল ভক্তগোষ্ঠী তৈরি হয়েছে।
অনীত পাড্ডা—সরল সৌন্দর্যে জয়
আহান পান্ডের সঙ্গে সমান গুরুত্ব নিয়ে আলোচনায় এসেছেন তাঁর নায়িকা অনীত পাড্ডা। মোহিত সুরি পরিচালিত ‘সাইয়ারা’–তেই আহান–অনীত জুটি প্রথম বড়পর্দায় একসঙ্গে আসেন। অনীত যদিও এর আগেও অভিনয়ে যুক্ত ছিলেন, তবে ২০২৫–এ তাঁকে চিনতে শুরু করে মূলধারার দর্শক।
অনীতের সরল মুখাবয়ব, গভীর চাহনি আর স্বাভাবিক অভিনয় দ্রুতই তাঁকে আলাদা করে তোলে। সামনে তাঁর হাতে রয়েছে আরও চ্যালেঞ্জিং কাজ—ম্যাড্ডক ফিল্মসের হরর–কমেডি ‘শক্তি শালিনী’, আর কোর্টরুম ড্রামা সিরিজ ‘ন্যায়’–এও দেখা যাবে তাঁকে। বলিউড বিশেষজ্ঞদের ধারণা, অনীত সামনে আরও সুদূর যেতে পারেন।
লক্ষ্য লালওয়ানি—ওয়েব সিরিজে বিশ্বজোড়া জনপ্রিয়তা
ছোট পর্দা দিয়ে অভিনয়যাত্রা শুরু, এরপর ২০২৩ সালে করণ জোহরের অ্যাকশন ছবি ‘কিল’–এ বড়পর্দায় অভিষেক—এভাবেই ধাপে ধাপে উঠে এসেছেন লক্ষ্য লালওয়ানি। তবে তাঁর প্রকৃত উত্থান ঘটে শাহরুখ খানের ছেলে আরিয়ান খানের পরিচালনায় নির্মিত নেটফ্লিক্স সিরিজ ‘দ্য ব্যা***ডস অব বলিউড’–এর মাধ্যমে।
সিরিজটির সফলতার পর লক্ষ্য রাতারাতি হয়ে ওঠেন গ্লোবাল সেনসেশন। অভিনয়ের পরিপক্বতা, স্টাইল, ডায়ালগ ডেলিভারি—সব মিলিয়ে তরুণ দর্শকদের কাছে এখন তিনি অন্যতম প্রিয় মুখ। অনেকেই বলছেন—২০২৫ সালে সবচেয়ে বেশি অনুসন্ধান করা নতুন তারকাদের তালিকায় লক্ষ্য একদম ওপরের দিকে রয়েছেন।
জাহান কাপুর—কাপুর পরিবার থেকে নতুন আশার নাম
বলিউডের ঐতিহ্যবাহী কাপুর পরিবার থেকে উঠে আসা আরেক নতুন মুখ জাহান কাপুর। কিংবদন্তি অভিনেতা শশী কাপুরের নাতি তিনি। তবু আত্মপ্রদর্শনের বদলে বরং নিচু স্বরে নিজের কাজের মাধ্যমে এগোতে চেয়েছেন।
২০২৩ সালে হন্সল মেহতার সত্য ঘটনা–নির্ভর ছবি ‘ফরাজ’–এর মধ্য দিয়ে সিনেমায় পা রাখেন। তখনই তাঁর অভিনয় নজর কাড়ে। তবে নেটফ্লিক্সের ক্রাইম–ড্রামা সিরিজ ‘ব্ল্যাক ওয়ারেন্ট’–ই যেন জাহানের ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। সিরিজটিতে তাঁর অনবদ্য পারফরম্যান্স তাঁকে পৌঁছে দিয়েছে ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তার শিখরে।
রাশা থাডানি—তারকা–কন্যার আত্মপ্রকাশ
বলিউড অভিনেত্রী রাভিনা ট্যান্ডনের কন্যা রাশা থাডানির বড় পর্দায় অভিষেক হয় অভিষেক কাপুর পরিচালিত পিরিয়ড ড্রামা ‘আজাদ’–এর মাধ্যমে। ছবিতে তাঁর সহশিল্পী ছিলেন অজয় দেবগণের মতো সুপারস্টার। যদিও বক্স অফিসে খুব বড় সাফল্য পায়নি ছবি, তবে রাশা রেখে গেছেন দৃশ্যমান ছাপ।
বিশেষ করে ছবির ‘উয়ি আম্মা’ গানে তাঁর নাচ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার ঝড় তোলে। এমনকি বলিউডের ‘ধক ধক গার্ল’ মাধুরী দীক্ষিতও প্রকাশ্যে প্রশংসা করেন রাশার পারফরম্যান্সের, এবং বলেন—নতুনদের মধ্যে ‘এক দো তিন’–এর মতো আইকনিক গান পুনর্নির্মাণ করতে হলে রাশাই পারবে। রাশার ওপর বলিউডের প্রত্যাশা এখন অনেক।
বীর পাহাড়িয়া—আকাশছোঁয়া স্বপ্নের সূচনা
যুদ্ধ–ঘরানার ছবি ‘স্কাই ফোর্স’–এ নজর কাড়েন নবাগত অভিনেতা বীর পাহাড়িয়া। অক্ষয় কুমারের মতো অভিজ্ঞ সহ–অভিনেতার পাশাপাশি নিজেকে সমান উজ্জ্বল রেখেছেন তিনি—এটাই তাঁকে আলাদা করেছে।
ছবিতে ভারতীয় বিমানসেনার পাইলট ট্যাবি চরিত্রে তাঁর উপস্থাপনা তরুণ দর্শকদের কাছে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। আত্মবিশ্বাসী স্ক্রিন–প্রেজেন্স দেখিয়ে বীর বুঝিয়ে দিয়েছেন—বলিউডে তিনি দীর্ঘ পথ চলতে এসেছেন।
ঈশান খট্টর ও বিশাল জেঠওয়া—‘হোম বাউন্ড’-এর নন্দিত জুটি
ঈশান খট্টর বা বিশাল জেঠওয়া—দুজনই বলিউডে নতুন নন। তবে ২০২৫ সালের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে তাঁরা নতুনভাবে উঠে এসেছেন নীরজ ঘেওয়ান পরিচালিত মানবিক চলচ্চিত্র ‘হোম বাউন্ড’–এ অসাধারণ অভিনয়ের সুবাদে।
বন্ধুত্ব, সামাজিক বাঁধন, ভেতরের ভাঙন আর মানুষের টিকে থাকার গল্প—সব মিলিয়ে ‘হোম বাউন্ড’ বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উৎসবে সাফল্য পাওয়ার পাশাপাশি ২০২৬ সালের অস্কারের দৌড়েও রয়েছে ছবিটি। আর এই চলচ্চিত্রের প্রাণভোমরা নিঃসন্দেহে ঈশান ও বিশাল। তাঁদের অভিনয় ভারতীয় নবীন প্রজন্মের মধ্যে অভিনয়ের নতুন মানদণ্ড তৈরি করেছে।
২০২৫ সাল বলিউডে যেন তরুণদের বছর। নতুন মুখের ঝলক, নতুন স্বপ্ন, নতুন সম্ভাবনা—সব মিলিয়ে এই তরুণেরাই ভবিষ্যতের বলিউডকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবেন বলে আশা করছেন নির্মাতা–সমালোচক–দর্শক—সবারই একাংশ।
ওটিটি, বড়পর্দা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—সবমিলিয়ে তাঁদের জনপ্রিয়তা প্রমাণ করে যে বলিউডের আগামী প্রজন্ম ইতিমধ্যেই নিজেদের জায়গা তৈরি করে ফেলেছে।