দক্ষিণ ভারতের জনপ্রিয় অভিনেতা বিজয় সেতুপতি একদিকে যেমন ‘সুপার ডিলাক্স’, ‘৯৬’, ‘বিক্রম বেধা’ ও ‘মহারাজা’ ছবির জন্য প্রশংসিত, অন্যদিকে বলিউডে শাহরুখ খানের ‘জওয়ান’-এ তাঁর দুর্দান্ত অভিনয় তাঁকে এনে দিয়েছে প্যান-ইন্ডিয়া খ্যাতি। তবে সম্প্রতি এই বহুমুখী ও বিনয়ী অভিনেতাকে ঘিরে একটি বিস্ফোরক অভিযোগ ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে দক্ষিণ ভারতের চলচ্চিত্রশিল্পে কাস্টিং কাউচ ও মাদক–সংস্কৃতির প্রসঙ্গ।
অভিযোগ গুরুতর
সম্প্রতি এক্সে ‘রাম্যা মোহন’ নামের এক নারীর পোস্ট ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। রাম্যার ভাষ্যমতে, তাঁর পরিচিত এক তরুণী, যিনি এখন দক্ষিণি বিনোদনজগতে পরিচিত মুখ, দীর্ঘদিন বিজয় সেতুপতির হাতে ‘মানসিক ও শারীরিক শোষণের’ শিকার হয়েছেন। সেই তরুণী শেষ পর্যন্ত মানসিক বিপর্যয়ের শিকার হয়ে পুনর্বাসনকেন্দ্রে যেতে বাধ্য হন।
রাম্যা অভিযোগ করেন, বিজয় সেতুপতি কলিউডের (তামিল ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি) তথাকথিত ‘গ্ল্যামার–সংস্কৃতি’র আড়ালে অশুভ এক বলয়ের অংশ, যেখানে ‘অডিশন’ কিংবা ‘পেশাগত সুযোগ’–এর নামে নারীদের ওপর অনৈতিক চাপ প্রয়োগ করা হয়। তাঁর ভাষায়, ‘সেতুপতির মতো শিল্পীরা শিল্পের স্বাভাবিক নিয়মের ছদ্মবেশে মেয়েদের কাছে “অনৈতিক সুবিধার” বিনিময়ে অর্থের প্রস্তাব দিতেন।’
ভুক্তভোগীকেই দোষারোপ
রাম্যা আরও লিখেছেন, ‘মানুষ সব সময় ভুক্তভোগীকেই দোষারোপ করে। অভিযুক্ত যদি জনপ্রিয় হয়, তাহলে তো কথাই নেই। আমার সেই পরিচিত তরুণীর পরিবার যখন তাঁর ডায়েরি ও চ্যাট রেকর্ড খুঁজে পায়, তখনই তাদের কাছে সব সত্য স্পষ্ট হয়।’ তবে তিনি পরে বন্ধুর গোপনীয়তা রক্ষার কথা বলে নিজের পোস্ট মুছে ফেলেন।
এখন পর্যন্ত বিজয় সেতুপতি এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেননি। ভুক্তভোগীর পরিচয় প্রকাশিত না হওয়া এবং কোনো আইনি অভিযোগ না থাকায় সোশ্যাল মিডিয়ার এ দাবিগুলো এখনো প্রমাণিত নয়। তবে এরই মধ্যে কাস্টিং কাউচ-বিষয়ক আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে দেখা গেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ কেউ এ অভিযোগকে ‘সাহসী প্রকাশ’ বলে প্রশংসা করেছেন, আবার অনেকে এর ভিত্তি নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন। একজন মন্তব্য করেছেন, ‘এভাবে হতাশ হয়ে চিৎকার করে অভিযোগ করে পরে বলছ, “আমি তার জন্য পোস্ট মুছে ফেলব”, এর মানে কী?’ আরেকজন লিখেছেন, ‘বড় তারকাকে অভিযুক্ত করলে বড় প্রতিক্রিয়া আসবে, সেটা মাথায় রেখেই বলা উচিত।’ কেউ আবার অভিযোগকারীকেই প্রশ্ন করেছেন, ‘তাহলে তুমি কেন ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা নিলে?’ এ বিতর্ক ঘিরে তামিল ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অন্দরমহলের অপ্রকাশিত দিক নিয়ে আবারও আলোচনা শুরু হয়েছে।
চুপ বিজয়, তবু চাপ বাড়ছে
এ প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত বিজয় সেতুপতির তরফ থেকে বিষয়টি নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য আসেনি। তাঁর ভক্তরা যেমন তাঁকে নিঃশর্ত সমর্থন জানাচ্ছেন, তেমনি অনেকেই অপেক্ষা করছেন সত্য উদ্ঘাটনের। এ ঘটনায় আবারও আলোচনায় এসেছে দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্রশিল্পে ‘কাস্টিং কাউচ’–এর বাস্তবতা, শিল্পজগতের ক্ষমতার ভারসাম্য এবং তারকার ‘অপরাধবিমুখ ইমেজ’ ঘিরে আমাদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি।
তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া