কাজ করেছেন বিচিত্র পেশায়। কখনো হোটেলের ওয়েটার, কখনো পারিবারিক দোকানে কাজ করেছেন। আবার কাজ করেছেন আলোকচিত্রী হিসেবেও। পর্দায় অভিনয় করেছেন বহুমাত্রিক চরিত্রে, ইদানীং শুরু করেছেন পরিচালনাও। তিনি আর কেউ নন, বোমান ইরানি। আজ ২ ডিসেম্বর অভিনেতার জন্মদিন। এ উপলক্ষে আলো ফেলা যাক তাঁর জীবন ও ক্যারিয়ারে।
শুরুর গল্প
মুম্বাইয়ের ইরানি পরিবারে জন্ম নেওয়া বোমানের জীবনই যেন কোনো প্রেরণামূলক সিনেমার চিত্রনাট্য। জন্মের আগে বাবার অকালমৃত্যু হয়, শৈশবে ডিসলেক্সিয়াও বেশ ভুগিয়েছে। মায়ের ছিল বেকারির দোকান। ছোট থেকেই দোকানে বসতেন। বেকারির কাজ তাঁকে শৃঙ্খলা, দায়িত্ববোধ আর সহানুভূতির পাঠ শিখিয়েছিল, যা পরে তাঁর অভিনয়ে ফুটে ওঠে।
নানা পরিচয়ে বোমান
কিন্তু অভিনয়ের আগে বোমান ইরানি ছিলেন একাধিক পরিচয়ে। তিনি হোটেলে ওয়েটার, মায়ের দোকানে সহকারী এবং এমনকি একজন স্পোর্টস ও বক্সিং ফটোগ্রাফারও ছিলেন। তাঁর ক্যামেরার চোখ মানুষের আবেগের গল্পগুলোকে তুলে ধরত। ক্যামেরা দিয়ে তিনি অনেক বক্সিং ম্যাচ ধারণ করেছেন এবং শেষ পর্যন্ত ভারতীয় বক্সিং অ্যাসোসিয়েশনের অফিশিয়াল ফটোগ্রাফার হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।
তাজ হোটেলের ওয়েটার
হাইস্কুলের পর জীবিকা নির্বাহের জন্য বোমান মুম্বাইয়ের ‘তাজ মহল প্যালেস’ হোটেলে ওয়েটার ও ইন-রুম সার্ভিস অ্যাটেনডেন্ট হিসেবে কাজ করতেন। টানা দুই বছর কাজ করেছিলেন। ট্রে হাতে নিয়ে হোটেলের ঘরে ঘরে ঘুরে খাবার ও পানীয় পরিবেশনের অভিজ্ঞতা এখনো তাঁর স্মৃতিতে টাটকা। হোটেলে কাজ করার সময় টিপসের টাকা জমিয়ে তিনি একটি ক্যামেরা কেনেন। স্কুলস্তরের ফুটবল ও ক্রিকেট ম্যাচের ছবি তুলে মাত্র সেই ছবি ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি করতেন। সেভাবেও উপার্জন করেছেন বোমান। ৩২ বছর বয়সে তিনি ‘বিশ্ব বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপ’-এর ছবি তুলেছিলেন। বিশ্বকাপের ‘অফিশিয়াল ফটোগ্রাফার’ হিসেবেও কাজ করেছিলেন।
অভিনয়ে শুরু
থিয়েটারের মাধ্যমে বোমানের শিল্পীজীবনের যাত্রা শুরু হয়। থিয়েটারের প্রশিক্ষণ তাঁকে অভিনেতা হিসেবে এক ধাপ এগিয়ে দেয়। নাট্যাভিনেতা হিসেবে তাঁর পরিচয় বহু দিনের। কিন্তু মূলধারার ছবিতে তাঁর অভিষেক হয় অনেক পরে। তখন তাঁর বয়স ৪১। ২০০০ সালে শাহরুখ খান অভিনীত ‘জোশ’ ছবির মাধ্যমে বড় পর্দায় তাঁর অভিনয়যাত্রার শুরু।
শুরুর পরেই বোমান ইরানি রাতারাতি সাফল্য লাভ করেননি, বরং প্রতিটি ভূমিকা তিনি নিজের ছাপ রেখে গেছেন। ‘মুন্না ভাই এমবিবিএস’-এর ডক্টর অস্থানা চরিত্রে অভিনয় তাঁকে পরিচিতি এনে দেয়। পরে ‘থ্রি ইডিয়টস’, ‘ডন’, ‘হাউসফুল’সহ বহু সিনেমায় তিনি শক্তিশালী, মজার আর মানবিক চরিত্রে জীবন দেন। এক শর বেশি সিনেমায় কাজ করেছেন বোমান। ‘বীর-জারা’, ‘লক্ষ্য’, ‘খোসলা কা ঘোসলা’, ‘পিকে’, ‘সঞ্জু’, ‘উঁচাই’ থেকে ‘ডানকি’–তেও রেখেছেন নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর।
বিস্তৃত দিগন্ত
বোমান ইরানি নিজের সৃজনশীল দিগন্ত আরও বিস্তৃত করেছেন প্রযোজনা ও পরিচালনার মাধ্যমে। চলতি বছর ‘দ্য মেহতা বয়েজ’ দিয়ে পরিচালনায় অভিষেক। অভিনয়ের বাইরে তিনি গল্প তৈরি ও শিল্পীদের গড়ে তোলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন নতুন সিনেমা নির্মাণের।
ইন্ডিয়া টুডে, বলিউড বাবল অবলম্বনে