সিনেমার অভিনয়শিল্পীদের সঙ্গে তন্নিষ্ঠ্যা। ইনস্টাগ্রাম থেকে
সিনেমার অভিনয়শিল্পীদের সঙ্গে তন্নিষ্ঠ্যা। ইনস্টাগ্রাম থেকে

ক্যানসারের চিকিৎসার মধ্যেই সিনেমার কাজ, কঠিন লড়াইয়ের কথা বললেন বাঙালি অভিনেত্রী

২০১৯ সালে ‘রোম রোম ম্যায়’-এর মাধ্যমে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা তন্নিষ্ঠা চ্যাটার্জি, যা বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে এশিয়া স্টার অ্যাওয়ার্ড জিতেছিল। বাঙালি এই অভিনেত্রী ও নির্মাতা এবার হাজির তাঁর নতুন সিনেমা ‘ফুল প্লেট’ নিয়ে। তবে এবার সিনেমা তৈরি করার সময় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। তন্নিষ্ঠা স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন, ক্যানসারের চিকিৎসার মধ্যেই চলছে সিনেমার কাজ। ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার পর সিনেমার ভবিষ্যৎই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল কিন্তু তন্নিষ্ঠা দৃঢ় মনোবল নিয়ে ঠিকই শেষ পর্যন্ত সিনেমাটির কাজ শেষ করেছেন।

তন্নিষ্ঠা চ্যাটার্জি। অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম থেকে

‘হ্যাঁ, পোস্ট প্রোডাকশনের সময়ই আমার ক্যানসার ধরা পড়ে। ইতিমধ্যেই কঠিন পরিস্থিতি দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছিল’, ভ্যারাইটিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন তন্নিষ্ঠা। তিনি আরও যোগ করেন, ‘এটি কোনো ছোট বিষয় ছিল না। মূল প্রশ্ন ছিল—আমি বাঁচব কি না।’

চলচ্চিত্রের কেন্দ্রে আছে আমরিন, এক মুসলিম নারী, যিনি তাঁর পরিবারে প্রধান উপার্জনকারী হয়ে ওঠেন। কীর্তি কুলহারি, শারাব হাশমি, ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, মনিকা দোগড়া ও সচিন চৌধুরী অভিনীত সিনেমাটির মাধ্যমে বৈষম্য, পারিবারিক কর্তব্য বনাম ব্যক্তিগত পছন্দের টানাপোড়েনকে উপস্থাপন করেছেন নির্মাতা।

তন্নিষ্ঠা চট্টোপাধ্যায়। অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম থেকে

নিউ দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা থেকে স্নাতক তন্নিষ্ঠা চ্যাটার্জি ১৫ বছরের অভিনয় জীবনে বহু চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন, যার মধ্যে আছে ‘ব্রিক লেন’ (২০০৭), ‘মনসুন শুটআউট’ (২০১৩), ‘লায়ন’ (২০১৬) ইত্যাদি সিনেমা।

তাঁর নতুন পরিচালনায় বাস্তব জীবন থেকে প্রেরণা নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি প্রথমে এক গৃহকর্মীকে পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করি, ভিন্ন ভিন্ন বাড়ির খাবারের অভ্যাস নিয়ে তাঁর অভিযোগে হিউমার খুঁজতে। তবে গভীরভাবে দেখার পর আমি আরও শক্তিশালী একটি গল্প খুঁজে পাই।’

কীর্তি কুলহারি, যিনি আগে ‘জল’-এ তন্নিষ্ঠার সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন, চিত্রনাট্য শেষ হওয়ার আগেই প্রজেক্টে যুক্ত হন।

স্বাভাবিকভাবে স্বাধীন চলচ্চিত্রে অর্থ সংগ্রহ চ্যালেঞ্জ ছিল, কিন্তু পরিচালককে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে, যা প্রোডাকশনকে আরও জটিল করে তোলে। সিঙ্গেল মাদার হিসেবে তিনি ৯ বছর বয়সী সন্তান এবং ৭০ বছর বয়সী মাকে দেখভাল করছিলেন, তাই সিনেমাটি শেষ করা তাঁর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।
‘আমি জানি না কোথা থেকে সেই শক্তি পেলাম সবকিছু সামলানোর জন্য, শুধু নিজেকে বললাম, প্রতিটি দিনকে তাঁর স্বাভাবিকভাবেই মেনে নাও’, বলেন তন্নিষ্ঠা।
তন্নিষ্ঠার চিকিৎসার জন্য পোস্ট প্রোডাকশন কয়েক মাস থেমে যায়। ‘চলচ্চিত্র শেষ করা ছিল আমার সুস্থতার অংশ। মিউজিক সেশনে বসা, এডিট করা—সবই সুস্থতার প্রক্রিয়ার অংশ। তাই আমরা দ্রুতই কাজ শুরু করেছিলাম’, বলেন তন্নিষ্ঠা। তাঁর সিনেমা ‘ফুল প্লেট’ এবারের বুসান উৎসবে মেরি ক্লেয়ার ভিশনারি অ্যাওয়ার্ড জিতেছে।