Thank you for trying Sticky AMP!!

চিত্রনায়িকা অঞ্জনা

এখন এফডিসিতে ঢুকলে কান্না আসে: চিত্রনায়িকা অঞ্জনা

‘দস্যু বনহুর’ দিয়ে শুরু। ১৯৭৬ সালের এই সিনেমার পর টানা কাজ করেন। অঞ্জনা রহমান থেকে শুধু অঞ্জনা নামেই পরিচিতি পান ঢাকাই ছবির এই নায়িকা। ১৯৯২ সালের পর থেকে সিনেমায় অনিয়মিত হয়ে যান তিনি। ২০০৮ সালে মুক্তি পায় অঞ্জনার সর্বশেষ ছবি ‘ভুল’। এ পর্যন্ত তিন শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। ‘পরিণীতা’ ও ‘গাঙচিল’-এ অভিনয়ের জন্য দুবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছেন। আজ ২৭ জুন সোমবার এই অভিনেত্রীর জন্মদিন। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ার ছাড়াও জন্মদিনে নানা প্রসঙ্গে কথা বলেছেন অঞ্জনা

প্রশ্ন

জন্মদিনে বিশেষ কোনো আয়োজন হয়েছে?

বন্যার কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অনেক মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তাঁদের মনে আনন্দ নেই। আমি সেটা অনুভব করছি। এ কারণে জন্মদিনের প্রথম প্রহরে ছেলে ও স্বামী মিলে শুধু একটি কেক কেটেছি। এটুকুই। জন্মদিনে বাসায় আয়োজনের জন্য আলাদা বাজেট রেখেছিলাম, তা–ও চলচ্চিত্রের কিছু অসচ্ছল শিল্পী ভাইবোনদের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছি।

প্রশ্ন

জন্মদিনে প্রিয়জনদের কাছ থেকে মানুষ নানা ধরনের উপহার পেয়ে থাকেন। আপনি পাননি?

পেয়েছি। কিন্তু যেহেতু জন্মদিনের আয়োজনই করিনি, তাই এ বিষয় নিয়ে আর মাতামাতি করিনি। এবার স্বামী একটি স্বর্ণের হার উপহার দিয়েছেন। এটাই আমার জন্মদিনের সেরা উপহার।

প্রশ্ন

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে আপনি সক্রিয়। কিন্তু অভিনয়ে সক্রিয় নন কেন?

চিত্রনায়িকা অঞ্জনা

১৯৯২ সালের পর থেকে নিয়মিত অভিনয় করা হয় না। কারণ, এখন যেসব সিনেমা তৈরি হয়, তা মূলত নায়ক-নায়িকাকেন্দ্রিক। আমাদের অভিনয়ের জায়গাটা কম। সুতরাং চাইলেও তো করা যায় না। অভিনয় করেই অঞ্জনা হয়েছি। সেই সম্মানের জায়গাটা তো থাকতে হবে।

প্রশ্ন

সে জন্য আক্ষেপ হয়?

তা তো হয়ই। আপনি পাশের দেশ ভারতের দিকেই তাকিয়ে দেখুন—অমিতাভ, রেখা, মাধুরীদের নিয়ে এখনো গল্প লেখা হয়, সিনেমা তৈরি হয়। আমরা কোথায় আছি? গুণী শিল্পীদের নিয়ে এখানে গল্প লেখা হয় না। সব ধরনের সিনেমাই বানাতে হবে। বয়োজ্যেষ্ঠ গুণী শিল্পীদের সিনেমায় বাঁচিয়ে রাখতে হলে তাঁদের নিয়ে আলাদাভাবে ভাবতে হবে। চরিত্রভিত্তিক সিনেমাও থাকবে, গল্পভিত্তিক সিনেমাও থাকবে। আবার তরুণদের নিয়ে রোমান্টিক প্রেমের সিনেমাও করতে হবে। সব ধরনের সিনেমা তৈরি হলে ইন্ডাস্ট্রির পরিসর বাড়বে, সিনেমার বাজারও বাড়বে।

প্রশ্ন

তাহলে আর সিনেমায় ফিরবেন না?

অবশ্যই ফিরব। তবে নিজের প্রযোজনা দিয়ে। অঞ্জনা ফিল্ম প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে আবার সিনেমা তৈরি করব। এর আগে ‘প্রাণ সজনি’, ‘বন্ধু যখন শত্রু’, ‘চালু সরদার’সহ অনেকগুলো সিনেমা এখান থেকে বানিয়েছি। আশা করছি, ২০২২–এর শেষ বা ২০২৩ সালের শুরুতে প্রযোজনার পাশাপাশি অভিনয়েও ফিরব।

রাজ্জাকের সঙ্গে
প্রশ্ন

কিন্তু চলচ্চিত্রের এই অবস্থায় কতটা সফল হবেন বলে মনে করেন?

এটা ঠিক যে চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থা ভালো যাচ্ছে না। সিনেমা হলের সংখ্যা ১ হাজার ৪০০ থেকে ৭০-এর ঘরে নেমে এসেছে। অনেক দিন হলো আমাদের চলচ্চিত্রের মধ্যে কিছুটা শৃঙ্খলার অভাব তৈরি হয়েছে। যে কারণে সিনেমা পিছিয়ে গেছে। তবে সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করলে জায়গাটা ঠিক হবে। এখন সে কাজটি করতে হবে। সরকারও চেষ্টা করছে সিনেমাকে ভালো জায়গায় আনতে। তা ছাড়া এখন যেসব ছেলেমেয়ে কাজ করছেন, তাঁরাও বেশ মেধাবী। শুধু তাঁদের মধ্যে আন্তরিকতা দরকার।

প্রশ্ন

এফডিসিকে ঘিরে শিল্পী, কলাকুশলীদের মধ্যে দলাদলির বিষয়টি এখন স্পষ্ট। আপনি চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির কমিটির একজন। আপনার কি মনে হয় না এই দলাদলি সিনেমাকে আরও পিছিয়ে দিচ্ছে?

অবশ্যই পিছিয়ে দিচ্ছে। দলাদলি থাকা উচিত নয়। আমি তো আগেই বলেছি, আমরা সবাই একসঙ্গে, এক হয়ে কাজ করব। কিসের দলাদলি? ছবিই হচ্ছে না, হলে ছবিই চলে না ঠিকমতো, দলাদলি করে কী লাভ? আমরা চাই এফডিসিতে প্রচুর কাজ হবে। এফডিসিতে পাঁচ-সাতটা করে শুটিং সেট পড়বে আগের মতো। জমজমাট থাকবে। আগের মতো বছরে এক শ, দেড় শ সিনেমা হবে।

প্রশ্ন

আগের কথা ভেবে খারাপ লাগে না?

অবশ্যই খারাপ লাগে। এখন এফডিসিতে ঢুকলে কান্না আসে, আমি কাঁদি। ভেতরে ঢুকলে বুকের মধ্যে হাহাকার করে।

বাংলা চলচ্চিত্রের রাজ রাজ্জাকের সঙ্গে প্রায় ৩৫টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন অঞ্জনা রহমান
প্রশ্ন

কিন্তু এসব দলাদলি, কাদা–ছোড়াছুড়ি বন্ধের ব্যাপারে আপনারা জ্যেষ্ঠ শিল্পীরা উদ্যোগ নিচ্ছে না কেন?

এর সমাধান আমাদেরই করতে হবে। বাইরে থেকে এসে কেউ সমাধান করতে পারবেন না। সিনিয়ররা একসঙ্গে বসে সবার মধ্যে দূরত্ব কমাতে হবে। আগেও এমন ভেদাভেদ ছিল কিন্তু এত খারাপ অবস্থা হয়নি কখনো। আমরা দলাদলি যাই করি, দিন শেষে সিনেমা নিয়ে ভাবতে হবে। সিনেমা না থাকলে আমাদের তো জায়গাই থাকল না। শিল্পী, প্রযোজক, পরিবেশক, পরিচালক, হলমালিক—সবাইকে একসঙ্গে বসতে হবে। আমরা সবাই একটা পরিবার। পরিবার হয়েই থাকতে চাই।