Thank you for trying Sticky AMP!!

প্রবীর মিত্র ও এ টি এম শামসুজ্জামান

এ টি এম শামসুজ্জামানের বিদায়ের খবর এখনো জানেন না বন্ধু প্রবীর মিত্র

৫০ বছরের বেশি সময় তাঁদের বন্ধুত্ব। ছোটবেলা থেকে একসঙ্গে বেড়ে উঠেছিলেন দুই গুণী অভিনয়শিল্পী প্রবীর মিত্র ও সদ্য প্রয়াত এ টি এম শামসুজ্জামান। পুরান ঢাকার সূত্রাপুর এলাকার স্কুলে পড়াশোনা করেছেন তাঁরা। স্কুল ও মহল্লায় একসঙ্গে নাট্যচর্চা করেছেন। সুখ–দুঃখে একসঙ্গে ঢালিউডে কাটিয়েছেন বছরের পর বছর। একসময় নিয়মিত এফডিসিতে আড্ডা দিতেন তাঁরা। শনিবার এই বন্ধুদ্বয়ের একজন চলে গেলেন না ফেরার দেশে। বন্ধুকে হারানোর কথা এখনো জানানো হয়নি প্রবীর মিত্রকে।

প্রবীর মিত্র। ছবি: সংগৃহীত

এমনিতে নিজেও বয়সের ভারে ন্যুব্জ। কারও মৃত্যুসংবাদ শুনলেই ভেঙে পড়েন প্রবীর মিত্র। এসব তথ্য দিয়ে অভিনেতার পুত্রবধূ সোনিয়া ইয়াসমিন আজ বুধবার প্রথম আলোকে জানান, তাঁর শ্বশুর সম্প্রতি নিজের ভাইকে হারিয়েছেন। সেই থেকেই তাঁর মনটা কিছুটা খারাপ। তিনি শোক সইতে পারেন না। এই ঘটনার মধ্যেই জানতে পারেন এ টি এম শামসুজ্জামান মারা গেছেন। তাঁরা পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এই মুহূর্তে বন্ধুর মৃত্যুর কথা এই অভিনেতাকে জানাবেন না। তিনি কষ্ট পাবেন।

সোনিয়া ইয়াসমিন বলেন, ‘আমরা এখনই বাবাকে এ টি এম শামসুজ্জামান চাচার মৃত্যুর ব্যাপারে কিছুই জানাতে চাচ্ছি না। জানলে তিনি অস্থির হয়ে যাবেন, ভেঙে পড়বেন। কিছুই খেতে চাইবেন না। এ জন্য এ টি এম চাচা মারা যাওয়ার দিন থেকে বাবার রুমে পত্রিকা দেওয়া হয় না। তাঁর ফোন বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বাবার রুমের টিভিও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরিবার থেকে চাইছি কোনোভাবেই যেন বাবা এ টি এম চাচার মৃত্যুর খবর না জানুক। নতুন কোনো কষ্টের খবর তাঁকে দেওয়া নিষেধ।’

এ টি এম শামসুজ্জামান

প্রবীণ দুই গুণী অভিনেতা বয়সে ছিলেন এক বছরের ছোট–বড়। প্রবীর মিত্র ছিলেন বড়। তাঁর বয়স ৮০ বছর। দুজনের মধ্যে উচ্চমাধ্যমিকে পড়ার সময় ভালো বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। পরে তাঁরা মহল্লাতেই খেলাধুলা ও নাট্যচর্চা করে সময় কাটাতেন। বিভিন্ন উৎসবে একসঙ্গে মহল্লার আয়োজনে অভিনয় করতেন। বেশির ভাগ চিত্রনাট্য লেখার দায়িত্বে থাকতেন এ টি এম শামসুজ্জামান। বিভিন্ন সময় পুরান ঢাকায় বিভিন্ন স্থানে একসঙ্গে ঘুরতে বের হতেন। তাঁদের বন্ধুত্ব দিন দিন বেড়ে চলে। দুজনই চাইতেন চলচ্চিত্রে অভিনয় করবেন।

এ টি এম শামসুজ্জামানের চলচ্চিত্রজীবনের শুরু ১৯৬১ সালে পরিচালক উদয়ন চৌধুরীর ‘বিষকন্যা’ চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে। এই অভিনেতা প্রথম কাহিনি ও চিত্রনাট্য লিখেছেন ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রের জন্য। পরিচালক এইচ আকবরের এই চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন প্রবীর মিত্র। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে প্রবীর মিত্র ‘নায়ক’ হিসেবে কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। এরপর ‘চরিত্রাভিনেতা’ হিসেবে কাজ করেও তিনি পেয়েছেন দর্শকপ্রিয়তা। এ টি এম শামসুজ্জামান ১৯৭৬ সালে চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেনের ‘নয়নমণি’ চলচ্চিত্রে খলনায়কের চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে আলোচনায় আসেন। দুজনেই ছিলেন গুণী অভিনেতা। তাঁরা উভয়েই অভিনয়ের জন্য পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।

প্রবীর মিত্র।

প্রবীর মিত্র এবং এ টি এম শামসুজ্জামানের অনেকদিন দেখা না হলেও দুই পরিবারের মধ্যে কিছুটা যোগাযোগ হতো। প্রবীর মিত্রের খুব বেশি বন্ধু ছিল না। তাঁর একমাত্র জীবিত কাছের বন্ধু ছিলেন এ টি এম শামসুজ্জামান। সোনিয়া ইয়াসমিন জানান, গত মাসের শেষের দিকে প্রবীর মিত্রের পেটের কিছুটা সমস্যা দেখা দেয়। পরে সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এ টি এম শামসুজ্জামান। ছবি: সংগৃহীত

এখন তাঁর শারীরিক অবস্থা কিছুটা ভালো। ২০১৭ সালের মে মাস থেকে বাসায় বিশ্রামে আছেন। শুটিংয়ের ব্যস্ততা ও কোলাহল থেকে দূরে। তারপর থেকেই তিনি অনেকটা নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করছেন। এর মধ্যেই তিনি গত জুলাই মাসে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সেরে উঠেছেন।