Thank you for trying Sticky AMP!!

নকল গল্পে শাকিব নষ্ট

‘ক্যাপ্টেন খান’ ছবির পোস্টার

‘সিনেমাটা আগে মনে হয় দেখসি!’, পাশের আসন থেকে এক তরুণীকে বলতে শোনা যায়। 

কৌতূহলী ভঙ্গিতে জানতে চাই, ‘কিন্তু এটা তো নতুন ছবি।’
তরুণী জানান, ‘আনজান’ নামের একটি তামিল ছবির নকল এটা। সবগুলো দৃশ্যের হুবহু মিল পাচ্ছি।
গতকাল রোববার রাত আটটায় শ্যামলী সিনেমা হলে দেখতে যাই ঈদের ছবি ‘ক্যাপ্টেন খান’। ওয়াজেদ আলী সুমন পরিচালিত এ ছবির শুরুতে কলাকুশলীর পরিচিতি দেখে জানতে পারি, ছবির গল্প ও চিত্রনাট্য পরিচালকের নিজের। একজন পরিচালক পর্দায় এমন অন্যায় দাবি কীভাবে করতে পারেন, ভেবে বিস্মিত হতে হয়! তামিল ভাষার যে ছবিটি থেকে ‘ক্যাপ্টেন খান’ নির্মিত হয়েছে, সেই ছবির গল্প ও চিত্রনাট্য ভারতীয় পরিচালক নাম্মালভার লিঙ্গুস্বামীর।

কাহিনিতে নতুন কিছু নেই
ক্যাপ্টেন খানকে খুঁজতে শহরে আসেন তাঁর ভাই আসিফ খান। নানা জায়গায় খোঁজাখুঁজি করতে গিয়ে ঘটে অনেক ঘটনা। দর্শক জানতে পারেন, ক্যাপ্টেন খান এক দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী। তাঁর বাহিনীর এক সদস্যের বয়ানে পর্দায় এসে হাজির হন ক্যাপ্টেন খান, দর্শক দেখেন তাঁর অতীতের কীর্তিকলাপ ও খুন হয়ে যাওয়া। পরে দেখা যায় আসিফ খানের বেশ ধরে ক্যাপ্টেনই ফিরে এসেছিলেন বন্ধুর খুনের বদলা নিতে। অবৈধ ব্যবসাকে কেন্দ্র করে দুটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর অন্তঃকোন্দল নিয়েই ছবির মূল গল্প। তাঁদের লক্ষ্য একে অন্যের সঙ্গে টেক্কা দিয়ে টিকে থাকা। এ আর নতুন কী? ৩০ বছর আগেও এই কাহিনির ছবি নির্মিত হয়েছে। গল্পের ধরনও একই। নকল যদি করতেই হয়, ভালো গল্পের একটি সিনেমা থেকে নকল করলেই পারতেন পরিচালক।

নকল গল্পে শাকিব নষ্ট
‘শাকিব, ডায়ালগটি আপনাকে আবার বলতে হবে।’ শাকিব খানকে কথাটি বলতে পরিচালকের সংকোচ হয়েছিল? ছবির কিছু কিছু জায়গায় শাকিব খানের সংলাপগুলো শুনে তেমনই মনে হয়েছে। মনে হয়েছে, শাকিব ক্যাপ্টেন খান নয়, অভিনয় করছেন।
তবে ‘ক্যাপ্টেন খান’ ছবিটি ছিল শাকিবময়। যেন এটি তাঁরই প্রদর্শনী। শাকিবকে বুদ্ধিদীপ্ত, মারকুটে, রোমান্টিক, নৃত্যপটু হিসেবে দেখানোই যেন পরিচালকের উদ্দেশ্য ছিল। শুধু সংকট যেন একটি মৌলিক গল্পের। দিনের পর দিন নকল গল্প ও ব্যবহারের অযোগ্যতায় একজন নায়ককে নষ্ট করে ফেলছে ঢালিউড। তারা বোঝে না, শতাধিক ছবির অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আরেকটি নায়ক এই ইন্ডাস্ট্রি কোথায় পাবে? কলকাতার পরিচালকদের ক্যামেরায় শাকিবের অভিনয় ঢাকার দর্শক দেখেছেন। বড় পর্দায় ছোট পরিবর্তনটাও চোখ এড়ায় না।

বুবলী ব্যর্থ!
‘ক্যাপ্টেন খান’ নায়কনির্ভর ছবি। তাই নায়িকার উপস্থিতি বা উপস্থাপন এখানে গৌণ মনে হয়েছে। মূল তামিল ছবিটি দেখা থাকলে ‘ক্যাপ্টেন খান’ ছবির নায়িকা বুবলীর অভিনয় ভীষণ দুর্বল মনে হবে। আর দেখা না থাকলে মনে হবে, নায়িকা একজন থাকতে হয় বলেই রাখা। রুচিশীল দর্শক বলবেন ভিন্ন কথা। বলবেন, ক্যাপ্টেন খান ছবিতে নায়িকা হিসেবে বুবলী ব্যর্থ। তাঁর সংলাপের জড়তা, অভিব্যক্তির দুর্বলতা ও নাচের অদক্ষতা বড্ড চোখে লেগেছে। নায়িকা হতে হলে বুবলীকে খাটতে হবে।

‘আনজান’ ছবির দৃশ্য



অদ্বিতীয় মিশা সওদাগর
চিরাচরিত খল চরিত্রের অভিনেতা মিশা সওদাগরের কোনো পরিবর্তন নেই। সব ছবির মতো এই ছবিতেও তাঁকে পাওয়া গেছে একই রকম নৃশংস, ভয়াবহ এবং নির্মমরূপে। ‘ক্যাপ্টেন খান’ ছবির ভিলেন হিসেবে তিনি ছিলেন অনন্য।

যা কিছু আশাব্যঞ্জক
‘ক্যাপ্টেন খান’ ছবির নির্মাণ দারুণ। ক্যামেরার চোখে অসাধারণ সব লোকেশন দেখানো হয়েছে চমৎকার সব ভঙ্গিতে। কালার কারেকশন, পোশাকের ব্যবহার, কাহিনির গতি চলচ্চিত্রের উপযোগী। গোলাগুলি ও নাচের সেটগুলোও ছিল চমৎকার। নিজস্বতা ছিল বলে ছবিটিকে সমৃদ্ধ করেছে আমাদের বাংলা গান। শুধু নিজস্ব একটি গল্প থাকলে ছবিটিকে নিয়ে গর্ব করা যেত।

চলচ্চিত্রের দর্শক হিসেবে বলতে চাই
২০১৪ সালে তামিল ভাষার গ্যাংস্টার থ্রিলার ‘আনজান’ ছবিটি মুক্তি পায়। ‘ক্যাপ্টেন খান’ ছবিতে যার প্রতিটি দৃশ্য ও সংলাপ নকল করা হয়েছে, এমনকি খলনায়ক ইব্রাহিম ভাইয়ের নামটিও। ২০১৬ সালের এপ্রিলে ছবিটি আপলোড করা হয় ইউটিউবে। বাংলাদেশে ইউটিউব থেকে সিনেমা দেখার প্রচলন রয়েছে। এ ছাড়া অনলাইন থেকে ডাউনলোড করে অনেকে তামিল ছবি দেখেন। বলা বাহুল্য, ‘আনজান’ ছবিটি অনেকেরই দেখা। ২০১৮ সালে এসে গল্পটিতে কোনো নতুনত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। কেননা ‘আন্ডারওয়ার্ল্ড’ বলে একটি জায়গার গল্প সিনেমায় আজ নয়, বহু আগে থেকে দেখানো হতো। তাহলে এই নকল চিত্রনাট্যে ছবি নির্মাণ করে ঈদের মতো উৎসবে চালানোর অর্থ কী? পরিচালকের তো জানার কথা, কোনো কিছু থেকে নকল করলে ভুলগুলো প্রকটভাবে চোখে পড়ে!