একের পর এক প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ, মন খারাপ করার খবর। এবার মিলেছে নতুন প্রেক্ষাগৃহ তৈরির খবরও। ঢাকার মিরপুরে চালু হয়েছে স্টার সিনেপ্লেক্সের নতুন শাখা। এ শাখায় একসঙ্গে তিনটি প্রেক্ষাগৃহ চালু করেছে কর্তৃপক্ষ। সিনেপ্লেক্সের উদ্যোগে নতুন এই তিন প্রেক্ষাগৃহ চালুর খবরে দারুণ খুশি হয়েছেন চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক ও নায়িকা-নায়িকারা।

মিরপুর ২ নম্বর সেকশনের সনি স্কয়ারে চালু হয়েছে স্টার সিনেপ্লেক্সের নতুন এ শাখা। এখানে তিনটি প্রেক্ষাগৃহের প্রতিটি প্রদর্শনীতে যথাক্রমে ৪০৮, ২২৫ ও ১৩৬ জন একসঙ্গে বসে ছবিটি দেখতে পারবেন বলে জানালেন স্টার সিনেপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি জানালেন, সপ্তাহে সাত দিনই নতুন এই মাল্টিপ্লেক্স খোলা থাকবে। এখানে প্রতিদিনই পাঁচটি শো চলবে।
বৃহস্পতিবার এই সিনেপ্লেক্সে বন্ড সিরিজের ‘নো টাইম টু ডাই’ ছবিটি পরিবার নিয়ে দেখতে এসেছিলেন ব্যবসায়ী তৌফিক হাসান। তিনি বললেন, ‘এখানেই ছিল সনি সিনেমা হল। এই হলের সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি। নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে যখন কলেজে পড়তাম, তখন বন্ধুরা মিলে কতবার যে এই হলে সিনেমা দেখতে এসেছি! বিশ্ববিদ্যালয়জীবনেও দেখেছি। এরপর চাকরিজীবন শুরু হয়, সিনেমার মানও পড়তে থাকে। যত দূর মনে পড়ে, ১৫ বছর পর এই হলে সিনেমা দেখতে এলাম। পুরো সিনেমা হলের পরিবেশ দেখেও মুগ্ধ হলাম। ঢাকা শহরে যানজটের যে অবস্থা, তাতে প্রতিটি এলাকায় যদি এমন সিনেমা হল যদি থাকে, তাহলে আবারও সিনেমা দেখার সংস্কৃতি তৈরি হবে। একই সঙ্গে আমাদের দেশীয় প্রযোজক-পরিচালকদের ভালো মানের চলচ্চিত্রও তৈরি করতে হবে। দর্শকেরা যেন শুধু দেশের বাইরের সিনেমার জন্য নন, বাংলাদেশের সিনেমা দেখতেই ভিড় করেন।’
এদিকে নতুন প্রেক্ষাগৃহ চালুর বিষয়টি চলচ্চিত্রের সবার জন্য ভীষণ রকমের আনন্দের বলে জানালেন চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান। তিনি বললেন, ‘আমরা যেটা চাইছি, দেশের বিভিন্ন জায়গা নতুন সব সিনেপ্লেক্স তৈরি হোক। এই সময়ে মিরপুরে এত সুন্দর তিনটি সিনেমা হল চালু এই এলাকার সবার জন্য সুখবর। আমাদের এখন বেশি করে ভালো ভালো সিনেমা তৈরি করতে হবে। এভাবেই সিনেপ্লেক্স তৈরি হলে, ভালো সিনেমা চালাতে পারলে, আমাদের সিনেমা ঘুরে দাঁড়াবেই। পরিবেশ সুন্দর হলে দেখা যাবে, একটা সময় রাত ৯টা থেকে ১২টার শোও চালু হবে। সুন্দর পরিবেশের সিনেমা হলের কারণে বিত্তবানেরা সিনেমা দেখতে হলমুখী হবেই।’
প্রযোজক সমিতির সাবেক সভাপতি খোরশেদ আলম বললেন, ‘একটা সময় আমাদের হাজারের ওপরে সিনেমা হল ছিল। এখন তা কমে ১০০–এর নিচে নেমে এসেছে। এমন সময় সনি কমপ্লেক্সে সিনেপ্লেক্স চালু অবশ্যই চলচ্চিত্রের মানুষদের জন্য সুন্দর খবর।’ মিরপুরের সিনেপ্লেক্স চালুর দিন গিয়েছিলেন পরিচালক অনিমেষ আইচ। তিনি বললেন, ‘এই সময়ে এমন তিনটি সিনেপ্লেক্স চালুর ব্যাপারটি ভীষণ ইতিবাচক। হলবিমুখ দর্শককে হলমুখী করতে হলে ভালো ভালো সিনেমা এসব সিনেমা হলে মুক্তি দিতে হবে। রাতবিরাতে বের হয়ে সিনেমা যেন দেখতে পারে, সেই পরিবেশও নিশ্চিত করতে হবে। পুরো মিরপুর নয়, সিনেমাপ্রেমী ঢাকাবাসীর জন্য এটা ভালো খবর।’
চিত্রনায়ক সাইমন সাদিক বললেন, ‘আমাদের মনমানসিকতায় বদল আনতে হবে, আমাদের ভালো কিছু করার চেষ্টা করতে হবে। নতুন সিনেপ্লেক্স চালুর ব্যাপারটি চলচ্চিত্রের মানুষদের মধ্যে ভালো কিছু করার মতোই। ঢাকার প্রতিটি এলাকায় এভাবে নতুন সব সিনেপ্লেক্স চালু হলেই সিনেমার জৌলুশ আবার ফিরে আসবেই।’
অভিনেত্রী ভাবনাও এসেছিলেন সেদিন। বললেন, ‘সিনেমা দেখার জন্য তো সুন্দর একটা পরিবেশ দরকার। আপনি কোন পরিবেশে সিনেমা দেখছেন, সেটাও কিন্তু একটা ব্যাপার। তাই এমন সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারলে, মানুষ সিনেমা হলে আসবেই। আমাদেরও ভালো সিনেমা নিশ্চিত করতে হবে।’
১৭ বছর পূর্তি উপলক্ষে স্টার সিনেপ্লেক্সের মিরপুর শাখা চালু করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মাহবুব রহমান বলেন, ‘দর্শকেরাই আমাদের প্রধান শক্তি। পথচলার শুরু থেকেই তাই দর্শকের প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা করে যাচ্ছি। দিনে দিনে এর পরিধি আরও বাড়বে। শুধু বিদেশি ছবির ওপর নির্ভরতা নয়, আমরা চাই আমাদের দেশেও ভালো মানের সিনেমা নির্মিত হোক। বাংলাদেশের সিনেমা দেখার জন্যই সব সময় সিনেমা হলে ভিড় লেগে থাকুক।’
নতুন সিনেপ্লেক্স চালু অনুষ্ঠানে তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান ছাড়াও সেদিন স্থানীয় সাংসদ, ব্যবসায়ী, চলচ্চিত্র ও নাট্যাঙ্গনের প্রযোজক, পরিচালকসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।