
সমাজের প্রতি অভিনয়শিল্পীদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। সেই দায় কোনো শিল্পীরই এড়ানোর সুযোগ নেই বলে মনে করেন অভিনয়শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ মামুন অপু। তাঁর মতে, অভিনয়শিল্পী সংঘের সদস্যদের কেউ কাউকে ছোট করে কথা বলতে চাইলে বা সমাজের নিয়মকে লঙ্ঘন করে এমন কিছু করে ভাইরাল হতে চাইলে সেই দায় ব্যক্তিগতভাবে সেই শিল্পীকেই নিতে হবে। এমনকি তাঁদের শিল্পীসুলভ পরিচয়ের বাইরে গিয়ে ভাইরাল হওয়ার কথা বলেন ছোট পর্দার অভিনয়শিল্পীদের নেতা।
এই নিয়ে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাশেদ মামুন লিখেছেন, ‘কেউ না বললেও অভিনয়শিল্পীদের একটা দায়বদ্ধতা সব সময়ই চেপে বসে। নিজের প্রতি আলাদা আলাদা দায়বদ্ধতা একটা সময় পুরো শিল্পী সমাজের দায়বদ্ধতার একক রূপ নেয়। এই দায়বদ্ধতার জায়গা এড়িয়ে চলতে চাইলে নিজ দায়িত্বে সেটা করুন। চাইলে কেউ এই শিল্পীসত্তার পরিচয় থেকে ঘোষণা দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারেন। এমন পরিকল্পনা থাকলে, প্লিজ ঘোষণা দিয়ে বেরিয়ে যান। আপনার নতুন পরিচয়ে আপনি ভালো থাকেন আর আমাদেরও ভালো থাকার চেষ্টা করতে দিন।’
কোনো অভিনয়শিল্পী দায়বদ্ধতার বাইরে কোনো কথা বললেই সেটা আলোচনায় জায়গা করে নেয়। এতে গোটা শিল্পী সমাজকেই নানা কথার মুখোমুখি হতে হয়। রাশেদ মামুন শিল্পীদের উদ্দেশে লিখেছেন, ‘কেন বোঝেন না, আমরা হচ্ছি সহজ টার্গেট। আমাদের গায়ে টোকা দিলেই খুব সহজে ভাইরাল হওয়া যায়। আপনার মধ্যেও যদি এই বর্বর নিকৃষ্ট মানের ভাইরাল–প্রীতি ভর করে...এর প্রতি সেকেন্ডের মাশুল দিতে হয় আমাদের গোটা অভিনয়শিল্পী সমাজের। এই দায় কেন আমরা সবাই নেব?’
মামুন প্রশ্ন তুলেছেন অভিনয়শিল্পী হয়ে পেশার উন্নয়নে শিল্পীরা কতটা অবদান রাখতে পারছেন। ‘আমাদের সাকসেসফুল ক্যারিয়ারের চেয়েও খুবই অল্প সময়ে আমরা যদি শুধুই অভিনয়শিল্পীদের স্বার্থ সংরক্ষণের দাবি আদায়ের পেছনে সরব হতাম, হুংকার দিতাম, তাহলে হয়তো আজকের এই হাহাকার পরিস্থিতির মধ্যে আমাদের পড়তে হতো না। অথচ যে পেশা আমাদের এনে দিল আজকের এই খ্যাতি, যে পেশা দিল এত এত সমৃদ্ধি, দিন শেষে এই পেশার সার্বিক উন্নতির জন্য নিজের জায়গা থেকে আমরা কে কী করতে পেরেছি?’
সম্প্রতি দেশের বাইরে থেকে বেশ কিছু অভিনয়শিল্পী নানা রকম বক্তব্য দিচ্ছেন। যা সব শিল্পীকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলছে। এই নিয়ে অভিনয়শিল্পীরাও সোচ্চার হয়েছেন। রাশেদ মামুনের মতে, ‘এখনো ৯৯.৬% শিল্পী এই দেশে বাস করছি, জীবিকার জন্য সংগ্রাম করে চলেছি। এ ছাড়া আমাদের যাওয়ার আসলে কোনো সুযোগ নেই। যাওয়ার জায়গাও নাই। যত যা–ই হোক আমাদের সিংহভাগ শিল্পীর এই দেশেই মাটি কামড়ে, জীবন, পরিবার, বাস্তবতা, নিরাপত্তার পাশাপাশি শিল্পী হিসেবে প্রমাণের দায় নিয়েই লড়তে হবে।’
নৈতিকভাবে সহকর্মীদের পাশে রয়েছেন এই শিল্পী সমিতির নেতা। নানা প্রতিকূল পরিবেশেও অন্যায়ের প্রতিবাদ করেই সমবেতভাবে তাঁরা সংগঠন ও পেশাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে চান। সহকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘একজন শিল্পী তৈরি হন নানা প্রতিকূল পরিবেশে। এর পেছনে বহু শ্রম ও সাধনা রয়েছে। কত ঘাত–প্রতিঘাতে একজন শিল্পী হয়ে ওঠেন, সেটা সবারই জানা। তাঁদের সবার প্রতি ভালোবাসা। বন্ধু–সহকর্মীদের প্রতি যেকোনো অন্যায্য অবিচারের প্রতিবাদে শেষ পর্যন্ত লড়তে সদা প্রস্তুত, যতক্ষণ না আপনি পরিবারের এথিকস বা নৈতিকতার সীমারেখা অতিক্রম না করেন।’
এখন সময় একসঙ্গে চলার উল্লেখ করে রাশেদ মামুন লিখেছেন, ‘রাষ্ট্রের অমূল্য সম্পদ হিসেবে রাষ্ট্রকে আমাদের ভাবাতে হবে, ভাবাতে বাধ্য করেন, যেন আমাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো অতি সত্বর আমলে নেওয়া হয়। সবার আগে আমাদের অভিনয়শিল্পীদের পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দিতেই হবে এবং সেটা এক্ষুনি।’