
শরাফ আহমেদ জীবনের ‘চক্কর ৩০২’ দিয়ে অভিষেক। প্রথম সিনেমাতেই নজর কেড়েছেন দুই তরুণ শাশ্বত দত্ত ও ফারজানা বুশরা
সিনেমার শুরুটা হয় লিমাকে (ফারজানা বুশরা) দিয়েই। বন্ধুদের সঙ্গে মজা করছেন একটা গ্ল্যামারাস মেয়ে। তবে দ্রুতই খুনের দায়ে অভিযুক্ত হন লিমা। তখন দেখা যায় তাঁর ভিন্ন রূপ। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর যখন জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হন, তখন তিনি ভেঙে পড়েন। দুই দৃশ্যে লুক বদলের সঙ্গে সঙ্গে শরীরী ভাষা, কথা বলার ঢং—সবই আলাদা। তবে দুটি দৃশ্যেই বেশ ভালোভাবে উতরে গেছেন বুশরা। এ প্রসঙ্গ দিয়েই শুরু হলো আলাপ। প্রথম সিনেমাতেই এমন বহুমাত্রিক আর ধূসর একটি চরিত্রে রাজি হলেন? ‘ঠিক এটাই আমাকে আকর্ষণ করেছিল। লিমা বাইরে থেকে সাধারণ, ভেতরে তার গভীরতা অসীম। শুরুটা তো সবাই চেনা-পরিচিত চরিত্র দিয়ে করে, কিন্তু আমি ভেবেছি, ভিন্ন কিছু দিয়ে পথচলা শুরু করাই বরং বেশি চ্যালেঞ্জিং হবে। তাই এমন চরিত্রের সুযোগ পেয়ে একমুহূর্তও ভাবিনি, লুফে নিয়েছি,’ বললেন বুশরা।
নিয়মিত মডেলিং করেন, কিছুদিন আগে জাহিদ প্রীতমের ‘ফ্রেঞ্জি’ সিরিজও করেছেন। তবে অভিনেত্রী জানালেন, সিনেমার ব্যাপারটাই আলাদা। পর্দার লিমা হয়ে উঠতে অনেক অনুশীলন করতে হয়েছে। চরিত্রের গভীরতা ধরতে পরিচালক নানাভাবে সাহায্য করেছেন। পাশাপাশি তিনিও নিজের মতো করে একই ধরনের কিছু চরিত্র পর্যবেক্ষণ করেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সবচেয়ে কঠিন ছিল সেই ধূসর জায়গায় পৌঁছানো। বুশরার খুব প্রিয় ব্যান্ড রেডিওহেড। জানালেন, লিমা হয়ে উঠতে ব্যান্ডটির গান সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে।
‘চক্কর ৩০২’-এর লিমা চরিত্রটির উপস্থিতি খুব বেশি সময়ের নয়, তবে যতক্ষণ ছিলেন, নিজের ছাপ রাখার চেষ্টা করেছেন বুশরা। মুক্তির পর তাই সহকর্মী থেকে শুরু করে বন্ধুদের নানা ধরনের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন। বুশরাকেও যা চমকে দিয়েছে, ‘কখনো ভাবিনি, এত স্বল্প সময়ের উপস্থিতিতেই দর্শকদের নজর কাড়তে পারব। সিনেমা হলে দর্শকেরা যখন এসে আলাদা করে কথা বলেছিলেন, সেটা আমার জন্য ছিল এক অসম্ভব আনন্দের মুহূর্ত। আমি এটা সত্যি খুব বড় একটি আশীর্বাদ বলে মনে করি। হঠাৎ একদিন একটি বিজ্ঞাপনের স্ক্রিন টেস্ট দিতে গিয়ে ছবিটির ব্যাপারে প্রথম জানতে পারি। এরপর অডিশন দিই। জানতাম, অনেকেই অডিশন দিচ্ছেন, তাই খুব একটা আশা করিনি। ভেবেছিলাম, নতুন হিসেবে হয়তো সুযোগ পাব না।’
সিনেমার কয়েকটি দৃশ্য, বিশেষ করে জিজ্ঞাসাবাদের সময় মোশাররফ করিমের মুখোমুখি হতে হয়েছে। মোশাররফের সঙ্গে কাজ করা তাঁর কাছে মনে হয়েছে ‘একজীবনের অভিজ্ঞতা’। বিষয়টি ব্যাখ্যা করলেন, ‘ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর আগে পর্যন্ত আমি কাঁপছিলাম—তাঁর মাপের একজন অভিনেতার সামনে নিজেকে ঠিকভাবে মেলে ধরতে পারব তো? কিন্তু মোশাররফ ভাই সারা দিন আমাদের সঙ্গে গল্প করেছেন, হাসিয়েছেন; বুঝিয়ে দিয়েছেন, কীভাবে চরিত্রের ভেতরে ঢুকে যেতে হয়। শেষমেশ সেটে মনে হয়নি আমি অভিনয় করছি। মনে হচ্ছিল, সত্যি সত্যি অফিসার মঈনুল (মোশাররফ করিম) জেরা করছেন।’
‘চক্কর ৩০২’ মার্ডার মিস্ট্রি ঘরানার সিনেমা। এ ধরনের কাজ বুশরার নিজেরও খুব পছন্দ। ‘গন গার্ল’, ‘দ্য সাইলেন্স অব দ্য ল্যাম্বস’, ‘ওল্ডবয়’, ‘মাইন্ডহান্টার’ তাঁর সবচেয়ে পছন্দের সিনেমা-সিরিজের তালিকায় আছে।
আলাপে আলাপে বুশরা জানালেন, এখন বেশ কয়েকটি নাটকের কাজে ব্যস্ত। তবে এগুলো ঈদে প্রচারিত হবে কি না, নিশ্চিত নন।
মোশাররফ-ভক্ত শাশ্বত
‘চক্কর ৩০২’-এ গোয়েন্দা কর্মকর্তা মঈনুলের (মোশাররফ করিম) সহকারী ছিলেন সজীব (শাশ্বত দত্ত)। মার্ডার মিস্ট্রি সিনেমায় গোয়েন্দা থাকেন, বেশির ভাগ সময়ই থাকেন তাঁর এক বা একাধিক সহকারী। গোয়েন্দা আর তাঁর সহকারীর রসায়ন না জমলে সিনেমাও জমে না। আর গোয়েন্দা চরিত্রে যদি থাকেন মোশাররফ করিম, তখন সহকারী চরিত্রের অভিনেতার চ্যালেঞ্জ আরও বেড়ে যায়। তবে প্রথম সিনেমায় এ চ্যালেঞ্জ ভালোভাবেই উতরে গেছেন শাশ্বত। ওয়েব ফিল্ম ‘পুনর্মিলনে’র সেই রোমান্টিক ছেলেটি এবার গোয়েন্দা, চরিত্রের ধরন পুরোপুরি আলাদা। কিন্তু শাশ্বত দেখিয়েছেন, রোমান্টিক চরিত্রের মতো গোয়েন্দা পুলিশের চরিত্রেও তিনি সাবলীল। তরুণ এই অভিনেতা জানালেন, তাঁর কাজ নিয়ে যে দর্শকেরা প্রশংসা করছেন, এর বড় কৃতিত্ব নির্মাতা শরাফ আহমেদ আর মোশাররফ করিমের। ‘তাঁর (মোশাররফ) বড় ভক্ত আমি, ফেসবুকে কভার ফটোতেও তাঁর ছবি দেওয়া থাকত। ভয়টা ভাঙিয়ে দিয়েছেন তিনি, এরপরই আমাদের মধ্যে রসায়ন তৈরি হয়। বারবার রিহার্সাল করিয়েছেন, কাজটা সহজ হয়েছে। উনি এমন একজন, যিনি সহকর্মীর কথা ভাবেন, আত্মকেন্দ্রিক অভিনেতা নন। আর পরিচালক নিজের কাজটা সম্পর্কে নিশ্চিত ছিলেন, আমার
চরিত্রটি নিয়ে বিশদে বলেছেন। সব মিলিয়ে হয়ে গেছে,’ বললেন শাশ্বত।
আলাপে আলাপে অভিনেতা বললেন শুটিংয়ের একটি ঘটনা, ‘শুটিংয়ের পঞ্চম দিনে হঠাৎ মোশাররফ ভাই আমাকে বললেন, “শাশ্বত, আমার অভিনয় কি হচ্ছে?”বললাম, ভাই, আপনার অভিনয়ের সময় আমি হাঁ হয়ে তাকিয়ে থাকি, এসব কী বলেন! আসলে উনি খুব বিনয়ী একজন মানুষ ও শিল্পী।’ প্রথম সিনেমা মুক্তির পর পরিবার, বন্ধু থেকে শুরু করে সহকর্মীদের প্রশংসা পেয়েছেন। এ ছাড়া তিনি মোশাররফ করিমকেও জিজ্ঞেস করেছিলেন, কেমন করেছেন। উত্তরে অভিনেতা বলেছেন, ‘তুই চরিত্রটির প্রতি সৎ ছিলি।’
তবে শাশ্বতকে সবচেয়ে আপ্লুত করেছে দর্শকের সরাসরি প্রতিক্রিয়া, ‘আমরা যখন হলে হলে গিয়েছি, তখন দর্শকেরা আমাদের দেখেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। অনেকটা মঞ্চের মতো, সরাসরি প্রতিক্রিয়া পাওয়া; এটা দারুণ ব্যাপার।’
বুশরার মতো শাশ্বতরও মার্ডার মিস্ট্রি সিনেমা ভালো লাগে। তাঁর পছন্দের তালিকায় রয়েছে দুটি দক্ষিণি সিনেমা ‘অফিসার অন ডিউটি’ ও ‘রাতসাসান’। এ ছাড়া সব সময়ের প্রিয়র তালিকার ওপরের দিকে আছে বং জুন-হোর ‘মেমোরিজ অব মার্ডার’।
শাশ্বত জানালেন, ঈদের বেশ কিছু কাজ করেছেন, তবে কোনটি কবে কোথায় প্রচারিত হবে, নিশ্চিত নন। ‘চক্কর ৩০২’ সিনেমার আগে ২০১৬ সালে রতন পালের ‘ইসমাইলের মা’ সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন তিনি। তবে সিনেমাটি কবে মুক্তি পাবে, শাশ্বত নিজেও বলতে পারলেন না।