মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা
মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা

‘কোনো অভিযোগ নেই, শুধু একটু দীর্ঘনিশ্বাস’, মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে চিত্রনায়ক সোহেল রানা

চলচ্চিত্র অভিনেতা, পরিচালক ও প্রযোজক মাসুদ পারভেজ ওরফে সোহেল রানা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ‘ওরা ১১ জন’ চলচ্চিত্রের প্রযোজক তিনি। ছবিটিতে মুক্তিযোদ্ধাদের দিয়ে অভিনয় করিয়েছিলেন নির্মাতা-প্রযোজক। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে একাত্তরের ডিসেম্বরে রণাঙ্গন থেকে অস্ত্র হাতে ঘরে ফিরেছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। সেই অস্ত্র নিয়েই ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন খসরু, মুরাদ, হেলাল, বেবি, নান্টু, ওলীন, মঞ্জু, আতা, ফিরোজ, আবু, আলতাফরা। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের প্রতিকূল পরিবেশে তখন সিনেমা নির্মাণ করা সহজ ছিল না। কিন্তু সেই অসাধ্য সাধন করেছিলেন দুই বন্ধু—প্রযোজক মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা ও পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম। কিন্তু আজ এক ফেসবুক পোস্টে সোহেল রানা লিখেছেন, নিজের মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় আর মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে অনুতপ্ত তিনি।

এখন আর অভিনয় করেন না সোহেল রানা। তবে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ফেসবুকে মতামত প্রকাশ করে থাকেন। এসবে সমসাময়িক বিষয় যেমন থাকে, তেমনি থাকে স্মৃতিকথাও। আজ রোববার নিজের ফেসবুক আইডিতে একাধিক পোস্ট করেছেন তিনি। ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রথম ছবি “ওরা ১১ জন”, প্রযোজক মাসুদ পারভেজ। ধিক তোমাকে, ধিক! তোমার মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট এবং মুক্তিযোদ্ধা আইডেন্টিটি কার্ডকে।’

মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা।

একই দিনে আরেকটি পোস্টে সোহেল রানা লিখেছেন, ‘দুজনের কাঁধে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি কষ্ট করে টাকা জমা দেওয়ার জন্য। বসার জায়গা নেই। ২৫ জনের বসার জায়গা হলে, ১০০ জন রোগী দাঁড়িয়ে আছে। সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে বা স্বাধীনতাযুদ্ধের একজন যোদ্ধা হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্রের কোনো রকম দাম-সম্মান কিছুই নেই। কেবিনভাড়া যা ছিল, এক বছরে তা দ্বিগুণ হয়ে গেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের সার্টিফিকেট বা মুক্তিযোদ্ধা আইডেন্টিটি কার্ড কোন কাজে আসে, বুঝি না। কোনো অভিযোগ নেই, শুধু একটু দীর্ঘনিশ্বাস!’

সোহেল রানার ফেসবুক পোস্ট থেকে ধারণা করা হচ্ছে যে চিকিৎসাসেবা নিতে গিয়ে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা তিনি পাননি। অপমানিত বোধ করেছেন। সেটা নিয়েই এই অভিনেতার ক্ষোভ ও অসহায়ত্ব প্রকাশ পেয়েছে তাঁর ফেসবুক পোস্টে। তবে এবারই প্রথম নয়, এর আগেও একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কোনো সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ার জন্য ক্ষোভ জানিয়েছিলেন তিনি।

মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা।

ফেসবুক পোস্টের সূত্র ধরে সোহেল রানার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

১৯৭২ সালে পারভেজ ফিল্মস নামে চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থা গড়েন সোহেল রানা। ৩০টি চলচ্চিত্র তিনি প্রযোজনা করেছেন এর ব্যানারে। পরে নায়ক খ্যাতির আড়ালে ঢাকা পড়ে যায় তাঁর প্রযোজক পরিচয়টি। সোহেল রানা নাম ধারণ করে কাজী আনোয়ার হোসেনের বিখ্যাত চরিত্র ‘মাসুদ রানা’র একটি গল্প অবলম্বনে ১৯৭৪ সালে ‘মাসুদ রানা’ চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন এবং একই সিনেমার মাধ্যমে তিনি মাসুদ পারভেজ নামে পরিচালক হিসেবেও যাত্রা শুরু করেন।

‘ওরা ১১ জন’ ছবির প্রযোজক মাসুদ পারভেজ, অভিনেতা হিসেবে যিনি সোহেল রানা নামে পরিচিত

‘এপার ওপার’, ‘দস্যু বনহুর’, ‘জীবন নৌকা’—এভাবে একের পর এক তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন সোহেল রানা। ‘লালু ভুলু’ (১৯৮৩), ‘অজান্তে’ (১৯৯৬), ‘সাহসী মানুষ চাই’ (২০০৩)—এই তিন চলচ্চিত্রে অনবদ্য অভিনয়ের সুবাদে তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন তিনি। ২০১৯ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার আসরে আজীবন সম্মাননা লাভ করেন এই মুক্তিযোদ্ধা-অভিনেতা।
১৯৯০ সালে চিকিৎসক জিনাত পারভেজকে বিয়ে করেন তিনি। তাঁদের একমাত্র ছেলে মাশরুর পারভেজ জীবরান।