
গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে প্রথম আলো, দ্য ডেইলি স্টার ও ছায়ানট কার্যালয় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও সংগঠিত আক্রমণের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদ জানান নির্মাতা ও শিল্পীরা।
আক্রমণকারীরা প্রথম আলো কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুরের পর তাতে অগ্নিসংযোগ করে। দীর্ঘ সময় ধরে চলা অগ্নিকাণ্ডের কারণে ভবন পুড়ে যায় এবং তাতে সংরক্ষিত সম্পদ ও মূল্যবান নথিপত্র ভস্মীভূত হয়।
অভিনেতা খায়রুল বাসার লিখেছেন, সহিংসতা, ভাঙচুর, আঘাত কোনোভাবেই ন্যায্য না, কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। এদিন প্রথম আলোর পাঠক সংগঠন বন্ধুসভার কক্ষও পুড়ে গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার সাবেক সভাপতি খায়রুল বাসার। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমাদের বন্ধুসভা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যে বন্ধুসভার বন্ধুরা চর্চা করে পরিমল মানুষ হওয়ার চর্চা, চর্চা করে কীভাবে মানুষের পাশে থাকা যায়, কীভাবে বন্ধুর পাশে বন্ধু হয়ে থাকা যায় এবং আমরা তা চেষ্টা করেছি। আমরা চেয়েছি প্রতিদিন একটা ভালো কাজ, যা এগিয়ে দিতে পারে আমাকে-আপনাকে-আমাদের এক সুন্দর আগামীর দিকে। নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো বা স্বেচ্ছাসেবী হাজার হাজার বন্ধুরা এই বন্ধুসভার হয়ে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাজ করে গেছে শুধু একটা উর্বর সুন্দর বিকশিত বাংলাদেশের আশায়।’
খায়রুল বাসার লিখেছেন, ‘জনতা অধিকারের আওয়াজ তুলবে, আঘাত এলে তা প্রতিরোধ করবে; স্বপ্রণোদিত হয়ে সহিংসতা জনতার কাজ না। যারা সহিংসতা করছে, তারা কেবল জনতা শব্দের অধিকারী হলে খুব ভুল হচ্ছে, বস্তুত জনতা থেকে ক্রমেই দূরে যাচ্ছে তারা। সহিংসতা, ভাঙচুর, আঘাত কোনোভাবেই ন্যায্য না এবং কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য না। আমরা এই কালচারের অবসান চাই বর্তমান ও আগামীর জন্য। আঘাত করতে মেধা লাগে না। লেখাকে লেখা দিয়ে কলমকে কলম দিয়ে জবাব দিতে হয়। সন্ত্রাস না, আমাদের যেতে হবে যুক্তিতর্ক শেষে ন্যায্যতা ও সুন্দরের দিকে। জেনে রাখা ভালো, ছায়ানট ভেঙে গান থামবে না; নজরুল, রবীন্দ্র, লালন বাদে বাংলা না।’
গতকাল ‘প্রতিষ্ঠানের ওপর হামলা নিয়ে প্রথম আলোর বক্তব্য’ শীর্ষক প্রতিবেদনে প্রথম আলো লিখেছে, ‘এ কথা বিশ্বাস করার সংগত কারণ আছে যে শরিফ ওসমান হাদির দুঃখজনক হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে পুঁজি করে একটি স্বার্থান্বেষী মহল পরিকল্পিতভাবে এসব আক্রমণের ঘটনা ঘটিয়েছে।’
প্রথম আলো, ডেইলি স্টার ও ছায়ানট আক্রমণের ঘটনায় অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মান লিখেছেন, ‘ওসমান হাদির মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। তাঁকে যারা হত্যা করেছে, তার বিচার অবশ্যই হওয়া উচিত, তবে তা কখনোই সহিংসতার মাধ্যমে হওয়া উচিত না।’
তিনি লিখেছেন, ‘গতকাল (পরশু) রাতে প্রতিবাদের নামে যারা প্রথম আলো, ডেইলি স্টার এবং ছায়ানটে ভাঙচুর, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগ করল, তারা কারা এবং কাদের স্বার্থ হাসিল করল? এই হুজুগে পড়া বাঙালিরা কখনো বুঝলও না যে তারা নিজেদের সম্পদ নিজেরাই ধ্বংস করছে। দেশের এমন একটা শোকের দিনে দেশের সবচেয়ে বড় দুটি সংবাদমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করতে পারেনি এবং পরবর্তী কার্যক্রম অনিশ্চিত হয়ে গেছে। এটা আমাদের দেশ এবং আমাদের জন্য চরম ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই হলো না।’
সাদিয়া আয়মান লিখেছেন, প্রতিবাদের ভাষা কখনোই সহিংসতা নয়। এমন প্রতিবাদ ওসমান হাদি বেঁচে থাকলে কখনোই সমর্থন করতেন না। যারা এই সহিংস আচরণ করেছে, তারা কখনোই একজন হাদি কিংবা দেশের ভালো চাওয়ার পক্ষের লোক হতে পারে না।
প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার–এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নির্মাতা তানহা জাফরীন লিখেছেন, ‘অসহিষ্ণুতা এখন চরমে। প্রতিহিংসার রাজনীতি আমাদের কোথায় নিয়ে গেছে, তা ভাবতেই গা শিউরে ওঠে। দেশের গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতার জন্য এটি এক ভয়াবহ দিন।’
একই রাতে দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ও সন্ত্রাসী আক্রমণ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়। সাংবাদিক ও অভিনেত্রী নাজিবা বাশার ডেইলি স্টার কার্যালয়ে আটকা পড়েছিলেন। নাজিবার বাবা ও অভিনয়শিল্পী ফখরুল বাশার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘সকাল ছয়টায় আর্মিরা এসে নাজিবাকে বাসায় দিয়ে গেছে।’
ছায়ানটে তাঁরা কী করেছেন, দেখুন
সংগীতশিল্পী অর্ণব, অভিনয়শিল্পী কাজী নওশাবা আহমেদ, সংগীতশিল্পী সায়ন্তনী ত্বিষা, নৃত্যশিল্পী অর্থী আহমেদসহ আরও অনেকে ছায়ানটের ভাঙচুরের ছবি ফেসবুকে শেয়ার করেছেন।
অর্ণব ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমাদের ভোট দিতে হবে। না হলে আমরা সংগীতশিল্পীরা বিপদে পড়ব। ছায়ানটে তাঁরা কী করেছে, দেখুন। ভোট দেওয়ার মাধ্যমে আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারি। অন্যদেরও একই কাজ করতে উৎসাহিত করতে পারি।’
কাজী নওশাবা আহমেদ লিখেছেন, ‘বন্ধু, তোমার পাশের সাথিকে চিনে নিয়ো।’
ভাঙচুরের ছবি পোস্ট করে সায়ন্তনী ত্বিষা লিখেছেন, ‘আজকের ছায়ানট।’ নৃত্যশিল্পী অর্থী আহমেদ লিখেছেন, ‘এই যুদ্ধ আমাদের কাছে নতুন না। গান চলবেই। আমরা পুড়তে জানি, মরতে জানি না।’