ঈদুল আজহায় মুক্তি পাওয়া ছয় সিনেমার চারটিতে অতিথি চরিত্রে হাজির হন চঞ্চল চৌধুরী, আফরান নিশো, সুনেরাহ বিনতে কামাল, সিয়াম আহমেদ ও বালাম।
ঈদুল আজহায় মুক্তি পাওয়া ছয় সিনেমার চারটিতে অতিথি চরিত্রে হাজির হন চঞ্চল চৌধুরী, আফরান নিশো, সুনেরাহ বিনতে কামাল, সিয়াম আহমেদ ও বালাম।

তারকাদের স্বল্প উপস্থিতি, দর্শকমনে কতটা সাড়া ফেলল

অতিথি চরিত্র দেশের সিনেমায় আগেও ছিল। তবে এবারের ঈদে প্রবণতা যেন একটু বেশিই দেখা গেল। ঈদে মুক্তি পাওয়া ছয় সিনেমার চারটিতে অতিথি চরিত্রে হাজির হন তারকারা। কারও উপস্থিতি দর্শককে চমকে দিয়েছে, কেউ হয়েছেন আলোচিত, কেউ আবার দর্শকের দৃষ্টিই এড়িয়ে গেছেন। অল্প সময়ে পর্দায় এই তারকারা কীভাবে প্রভাব ফেললেন—এ নিয়েই প্রতিবেদন।
চঞ্চল চৌধুরী

ঈদে মুক্তি পাওয়া তানিম নূরের ছবি ‘উৎসব’–এ গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী। সেই ছবিতে চঞ্চলকে নিয়ে চলছে আলোচনা। আবার ইনসাফ ছবিতে যে তিনি আছেন, আগে থেকে দর্শকের জানাও ছিল না। অভিনয়শিল্পীর তালিকায়ও ছিল না তাঁর নাম। তাই পর্দায় তাঁকে দেখে অবাক হয়েছেন দর্শক। জানা যাচ্ছে, তিনি একটি রহস্যময় চরিত্রে অভিনয় করেছেন। চমকের বড় কারণ ছিল তাঁর লুক—একেবারে ন্যাড়া মাথা, হাতে রক্তমাখা দা, অথচ শান্তভাবে বাজাচ্ছেন ভায়োলিন! চঞ্চলের এই লুক ও উপস্থিতি যেন পুরো সিনেমার আবহটাই পাল্টে দিয়েছে বলে মনে করছেন ভক্তরা। তাঁদের ভাষায়, ‘চঞ্চলের এই সারপ্রাইজ ক্যামিও সিনেমাটিকে এক অন্য মাত্রা দিয়েছে।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে চঞ্চলের এই দৃশ্যের একটি স্থিরচিত্র। রহস্যময় চরিত্রে চঞ্চল চৌধুরীর প্রতি দর্শকের আগ্রহ নতুন নয়। আগেও কারাগার ওয়েব সিরিজে রহস্যময় চরিত্রে অভিনয় করে সাড়া ফেলেছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় ইনসাফ-এ নতুন এই ভূমিকায় আবারও তিনি প্রমাণ করলেন—তিনি চমক দিতে জানেন!

আফরান নিশো

ঈদে মুক্তি পাওয়া ছবিগুলোর মধ্যে ‘তাণ্ডব’–এ আফরান নিশোর অতিথি চরিত্রটি নিয়েও অনেক আলোচনা হয়েছিল। রায়হান রাফীর ছবিটিতে নিশো অতিথি চরিত্রে থাকছেন কি থাকছেন না, তা নিয়ে রহস্য জিইয়ে রেখেছিলেন সিনেমা–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল, ‘সুড়ঙ্গ’ সিনেমার মাসুদ হয়েই আছেন নিশো। দুই বছর পর ‘তাণ্ডব’–এর মধ্য দিয়ে দর্শক ‘সুড়ঙ্গ’ সিনেমার মাসুদকে দেখেও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।

সিয়াম আহমেদ। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

‘তাণ্ডব’ ছবিতে নিশোর অতিথি চরিত্র নিয়ে আগে থেকে অনেক আলোচনা হলেও সিয়ামের চরিত্র নিয়ে সেই অর্থে কোনো আলোচনা হয়নি। তাই পর্দায় সিয়াম যখন হাজির হন, প্রেক্ষাগৃহের অনেক দর্শক উল্লাস প্রকাশ করেন। ধনাঢ্য পরিবারের বখাটে যুবকের চরিত্রে সিয়ামের অভিনয় বাহবা পেয়েছে। কারণ, স্বল্প সময়েই চরিত্রটিকে তিনি এতটাই বাস্তবসম্মত করে তুলেছেন যে দর্শক তাকে ঘৃণা করতে বাধ্য।

সুনেরাহ বিনতে কামাল। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

ঈদুল ফিতরে মুক্তি পাওয়া ‘দাগি’ সিনেমায় অতিথি চরিত্রে অভিনয় করেন সুনেরাহ বিনতে কামাল। সংলাপবিহীন সেই চরিত্রে অভিব্যক্তি দিয়ে নিজের দিকে আলো কেড়ে নেন এই তারকা। ঈদুল আজহায়ও ‘উৎসব’ সিনেমায় সুনেরাহকে অতিথি চরিত্রে পাওয়া গেছে। এই ছবিতেও তাঁর উপস্থিতি খুবই অল্প সময়ের, কিন্তু সেই সময়টুকু যেন দর্শককে নিজের দিকে টেনে নিয়েছেন। জাহিদ হাসানের মেয়ের চরিত্রে তাঁর অল্প সময়ের অভিনয় সবাইকে মুগ্ধ করে। সুনেরাহ বলেন, ‘সিনেমায় আমার চরিত্রের ব্যাপ্তি ছোট কিন্তু সেটা দর্শক এতটা গ্রহণ করবেন, ভাবিনি। সবাই প্রশংসা করছেন। আমি তো প্রধান চরিত্র করে এসেছি। সেখানে একবারের জন্য মনে হয়নি, এই সিনেমার চরিত্রটি করব না। বরং বলব, আমার কাছে একটি দারুণ সুযোগ ছিল।’

প্রধান চরিত্রের বাইরে অতিথি চরিত্রে অভিনয় ক্যারিয়ারে কোনো প্রভাব পড়তে পারে কি? এমন প্রশ্নে সুনেরাহ বলেন, ‘শুধু পোস্টারে বড় ছবি থাকলেই কিন্তু হয় না। গল্পে তাঁর গুরুত্ব কতটা, দর্শককে কতটা মুভ করাচ্ছেন, এগুলো গুরুত্বপূর্ণ। চরিত্রের ব্যাপ্তি ছোট-বড়, এটা আমি দেখতে চাই না। পার্শ্বচরিত্রের অনেক ইমপ্যাক্ট থাকে। দুটি সিনেমাতেই অল্পতে বেশি প্রশংসা পাচ্ছি। ভিন্নভাবে আইডেন্টিটি ক্রিয়েট করতে চাই। আমি শিখতে এসেছি, শিখতে চাই।’

বালাম

মুক্তি পাওয়া ‘নীলচক্র’ ছবির প্রধান অভিনেতা আরিফিন শুভ। ছবিটির ফার্স্টলুক পোস্টারে শুভর চরিত্র সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার সময় জানা যায়, এই ছবিতে অভিনয় করেছেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী বালাম। মুক্তির আগে বালাম জানিয়েছিলেন, নীলচক্র বড় পর্দায় তাঁর জন্য একেবারে নতুন অভিজ্ঞতা। সংগীতজীবনে বালামকে ছোট পর্দায় টুকটাক দু-একটি নাটকে দেখা গেছে। কখনো আবার স্ত্রীসহ টেলিভিশন নাটকে হাজির হয়েছিলেন তিনি। তবে চলচ্চিত্রে এবারই প্রথম। তবে মুক্তির পর বালামকে আর কথা বলতে শোনা যায়নি। যোগাযোগ করা হলেও এ বিষয়ে কথা বলেননি।  

ঈদে মুক্তি পাওয়া সিনেমায় মূল চরিত্রের বাইরে অতিথি চরিত্র নিয়েও আলোচনা করছে মানুষ। কারও মতে, তারকার গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তার কারণে কারও কারও উপস্থিতি দর্শককে চমকে দিয়েছে বা সিনেমার প্রতি আকর্ষণ তৈরি করেছে। আবার কেউ বলছেন, এটা বিপণনের কৌশল। কারও মতে, গল্পের প্রয়োজনে এসেছে। দর্শক প্রতিক্রিয়া, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ইউটিউবের মন্তব্যেও এসব উঠে এসেছে। ভবিষ্যৎ এই  প্রবণতা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও মত দিয়েছেন কেউ।