ইরিন জামান, শিমলা, জেবা ও পপি
ইরিন জামান, শিমলা, জেবা ও পপি

বিয়ে করে সংসারী পপি, ইরিন নিউজার্সিতে, সিমলা ও জেবা কোথায়

অভিনয়ে কেউ ৩৫ বছর, আবার কেউ–বা পার করেছেন ২৫ বছর। নব্বই দশকে ঢালিউডে আলো ছড়ানো এমন নায়িকা প্রায় ডজনখানেক। তাঁদের কাউকে এখন আর সেই অর্থে অভিনয়ে দেখা যায় না। দু-একজন আবার বিনোদন অঙ্গনে কাজের ধরন বদলে ফেলেছেন। নায়িকার চরিত্রে অভিনয় না করলেও উপস্থাপনা ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিচারকাজে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন। একনজরে দেখে নেওয়া যাক নব্বই দশকে আলো ছড়ানো নায়িকাদের এখন কে কী করছেন, কোথায় আছেন?

পপি : ছয় ভাইবোনের মধ্যে পপি সবার বড়। তাঁর বাবা আমির হোসেন পেশায় একজন ঠিকাদার। মা মরিয়ম বেগম গৃহিণী। তাঁর জন্ম খুলনা শহরের সোনাডাঙ্গায়। তিনি যখন খুলনার একটি স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়তেন, তখন লাক্স আনন্দ বিচিত্রা ফটোসুন্দরী প্রতিযোগিতা চলছিল। পত্রিকায় এই খবর দেখে তাঁর মা পপির ছবি পাঠান। এরপর মায়ের ইচ্ছায় পপি ওই প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। কিশোরী পপি সবাইকে অবাক করে লাক্স আনন্দ বিচিত্রা ফটোসুন্দরী চ্যাম্পিয়ন হন। এরপর তাঁকে নিয়ে শুরু হয় আলোচনা। এর মধ্যে শেষ হয় স্কুলজীবন। এরপর মাকে সঙ্গে করে পপি চলে আসেন ঢাকায়। ভর্তি হন লালমাটিয়া মহিলা কলেজে।

পপি

পপির মা মেয়েকে চলচ্চিত্রে নায়িকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। এর মধ্যে পরিচয় হয় পরিচালক সোহানুর রহমান সোহানের সঙ্গে। তাঁর হাত ধরেই পপির সিনেমাযাত্রা শুরু। প্রথম সিনেমা ‘আমার ঘর আমার বেহেশত’। নায়ক শাকিল খান। তবে এই ছবিতে প্রথম অভিনয় করলেও পপিকে মানুষ চেনে ‘কুলি’ সিনেমা দিয়ে। তাঁর নায়ক ছিলেন ওমর সানী, পরিচালক মনতাজুর রহমান আকবর।

ব্যবসাসফল ‘কুলি’ সিনেমার জনপ্রিয়তার পর পপিকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। অল্প বয়সেই পপি বিরাট তারকাখ্যাতি পেয়ে যান। হাতে আসতে থাকে একের পর এক সিনেমা। দিনরাত অভিনয় নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হতো। তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অসংখ্য জনপ্রিয় ছবিতে অভিনয় করে তিনি দর্শকের মন জয় করেন।

পপি ২০২০ সালে সর্বশেষ ‘ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ নামের একটি সিনেমার শুটিং করেন। এরপর একেবারে আড়ালে চলে যান। পাঁচ বছর আড়াল জীবনযাপনের পর এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশ্যে আসেন তিনি। আড়াল ভাঙার পর জানা যায়, পপি বিয়ে করে পুরোদস্তুর সংসারী। তিনি এক পুত্রসন্তানের মা।

চিত্রনায়িকা জেবা

জেবা : তুমি চাঁদের জোছনা নও, ফুলের উপমা নও/ নও কোন পাহাড়ি ঝরনা, তুমি হৃদয়ের আয়না...এই গান সব শ্রেণির দর্শকের মন কেড়েছিল। ১৯৯৭ সালে মুক্তি পাওয়া ‘হৃদয়ের আয়না’ ছবির গানটির কথা অনেকেরই মনে আছে। প্রেমের গল্পের এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন ওই সময়ের জনপ্রিয় নায়ক রিয়াজ।

ছবিটিতে রিয়াজের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন নবাগতা জেবা, আসল নাম জেবা হলেও চলচ্চিত্রে আয়না নামেই পরিচিত ছিলেন তিনি। ‘হৃদয়ের আয়না’ ছবিতে অভিনয়ের পর আয়না নামেই পরিচিতি পান।

‘আয়না’ চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসা পেয়েছিলেন তিনি। ওই এক ছবি করার পরই হারিয়ে যান এই নায়িকা। আর কোনো ছবিতে দেখা যায়নি তাঁকে। নুরুল ইসলাম পারভেজ পরিচালিত এই ছবিটির পরিচালক মোখলেছুর রহমান। জানা গেছে, ধানমন্ডিতে স্বামী সন্তান নিয়ে থাকে এই চিত্রনায়িকা।

ইরিন জামান

ইরিন : সোহানুর রহমান সোহানের হাত ধরে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবির মাধ্যমে সিনেমায় অভিষেক ঘটে চিত্রনায়িকা মৌসুমীর। একই পরিচালকের সিনেমা অনন্ত ভালোবাসা দিয়ে ঢালিউডে অভিষেক ঘটে তাঁরই ছোট বোন চিত্রনায়িকা ইরিন জামানের। এই সিনেমা দিয়ে ঢালিউডে অভিষেক ঘটে শাকিব খানেরও।

১৯৯৯ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবি দিয়ে আলোচনায় আসেন ইরিন। এরপর বেশ কয়েকটি ছবিতে তাঁকে দেখা গেলেও নজর কাড়তে পারেননি পরিচালক, প্রযোজক বা দর্শকদের।

অভিনয়ের পাশাপাশি গায়িকা হিসেবে তাঁকে মাঝেমধ্যে পাওয়া গেছে। ২০১৪ সালের এপ্রিলে ‘মধুরাত’ ও ‘তোমায় দেখবো ছুঁয়ে’ নামের দুটি অ্যালবাম মুক্তি পায় তাঁর। এরপর থেকে খবরে নেই এই নায়িকা-গায়িকার। স্বামী-সন্তান নিয়ে থিতু হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিতে।

সিমলা

সিমলা : ঢালিউডে অভিষেক সিনেমায় ‘ফুলি’ এবং ‘সিমলা’ নামের দুটি চরিত্রে অভিনয় করে জিতে নিয়েছিলেন ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’। ১৯৯৯ সালে শহিদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত সেই ছবিতে সিমলার অভিনয় দেখে, অনেক চলচ্চিত্র বোদ্ধাই তাঁকে নিয়ে নানা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন।

কিন্তু পরবর্তী সময়ে আর আলো ছড়াতে পারেননি এই নায়িকা। বরং ছড়িয়েছেন সমালোচনা। ২০১৫ সালে ‘নিষিদ্ধ প্রেমের গল্প’ নামের একটি ছবিতে ১৫ বছরের এক বালকের নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করে সমালোচিত হন তিনি।

‘ম্যাডাম ফুলি’ ছবির পর আর কোনো ছবিতেই সাফল্যের দেখা পাননি তিনি। তবে ‘ম্যাডাম ফুলি টু’ দিয়ে তিনি চলচ্চিত্রে ফিরে আসবেন বলে শোনা গেলেও, আর ফিরে আসেননি। এদিকে কয়েক বছর আগে আবারও নতুন করে সমালোচনার শিকার হন এই নায়িকা।