
ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘নীলচক্র’ সিনেমায় খল চরিত্রে অভিনয় করছেন মনির আহমেদ। বিনোদন অঙ্গনে শাকিল নামেই তাঁর পরিচিতি বেশি। সিনেমা, নিজের ক্যারিয়ার ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন নাজমুল হক
খল চরিত্রে অভিনয় করলেন। চরিত্রটির জন্য আপনার প্রস্তুতির প্রক্রিয়া কী ছিল?
মনির আহমেদ: ৩৫ বছর ধরে থিয়েটার করছি। এখানে সবচেয়ে কাজে দেয় আমার থিয়েটারের স্কুলিং। আমি মনে করি, ক্যারেক্টার হচ্ছে থার্ড পারসোনালিটি। লেখক যেটা লেখেন, এটা ফার্স্ট পারসোনালিটি, অভিনেতা হিসেবে আমি সেকেন্ড পারসোনালিটি আর আমি যেটা পারফর্ম করি, এটা থার্ড পারসোনালিটি। আমাকে যখন চিত্রনাট্য দেওয়া হয়, তখন থেকেই চরিত্রটি নিয়ে ভাবনা শুরু হয়। আমি একাধিক কাজ করি না। একটা চরিত্রে পুরোপুরি বসবাস করার চেষ্টা করি। এই ঈদে ‘নীলচক্র’ সিনেমায় আমার চরিত্রের কথায় বলি, এর জন্য দুই মাস আমি অন্য কোনো কাজ করিনি। আমার চুল বড় করতে হয়েছে, চুলে রং করতে হয়েছে—এর জন্য অন্য কাজ ছেড়ে দিতে হয়েছে। এটাই তো প্রস্তুতির অংশ।
ব্যক্তিজীবনে নিজের বিপরীত চরিত্রে অভিনয় কতটা কঠিন?
মনির আহমেদ: এটা কঠিন নয়। অভ্যস্ত হয়ে গেছি তো। একটা চরিত্র যখন আসে, তখন আমার একটা পর্যবেক্ষণ থাকে। চারপাশের কোনো একজনের মধ্যে যখন এমন চরিত্র খোঁজে পাই, তখন দেখি, এই লোক কীভাবে চলে, কীভাবে কথা বলে; অর্থাৎ চরিত্রের মূল ভিত খুঁজে বের করার চেষ্টা করি। সঙ্গে এই লোকের দুর্বলতা কী, সে অন্তর্মুখী নাকি বহির্মুখী, এসব জিনিস পর্যবেক্ষণ করে নির্মাতার ইচ্ছা ও পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য এনে চরিত্র ধারণ করি।
‘নীলচক্র’ সিনেমায় আপনার অভিনীত চরিত্রটি নিয়ে কেমন প্রতিক্রিয়া পেলেন?
মনির আহমেদ: আমার চরিত্রের নাম ছিল জ্যাক। চরিত্রটি নিয়ে অনেক সাড়া পাচ্ছি। ফেসবুকের বিভিন্ন পেজ ও গ্রুপে রিভিউ দেখছি, কাছের মানুষেরা ফোন করেছেন। অভিনেতা হিসেবে এটা বড় প্রাপ্তি। আর আমার সাম্প্রতিক কাজগুলো যদি দেখেন, এই ঈদে ‘নীলচক্র ছাড়া ‘তাণ্ডব’, গত ঈদে ‘জংলি’ আর এর আগে ‘সুড়ঙ্গ’ ও ‘ফ্রাইডে’তে ছিলাম। সব কটিতে আমার ভিন্ন ভিন্ন চরিত্র ছিল। পর্দায় যে সব কটিতে আমার সমান উপস্থিতি ছিল, তা কিন্তু নয়। এরপরও দর্শকের থেকে যে প্রশংসা পেয়েছি, তা আমার ভবিষ্যতের কাজগুলোতে দায়িত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে।
চরিত্রটি নিয়ে আপনি কতটা সন্তুষ্ট?
মনির আহমেদ: সিনেমা তো আমার কাছে একটা স্টাডি, তাই যে সিনেমা আমার ভালো লাগে, সেটি অন্তত তিনবার দেখি। প্রথমবার সিনেমা দেখি শিশুসুলভ মন নিয়ে, যে আমি কিছুই জানি না, বিনোদন নেব, এই মনোভাব নিয়ে দেখি। প্রথম দেখায় ভালো লেগে গেলে দ্বিতীয়বার দেখি, এবার আমার দৃষ্টি থাকে অভিনয়ের প্রতি। প্রত্যেকে তাঁর চরিত্রায়ণ কীভাবে করেন, চরিত্রটিকে কীভাবে মানিয়ে নিতে পারলেন। কী কী দুর্বলতা, মজবুত দিকগুলো কী—এসব। আর তৃতীয়বার ক্যামেরা কাজসহ কারিগরি বিষয়গুলো বোঝার চেষ্টা করি। জ্যাক চরিত্রে আমি আমার সর্বোচ্চ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তবে একজন অভিনেতার কাছে সন্তুষ্টি অনেক কঠিন। যতবারই দেখব, ততবারই মনে হবে, আরেকটু ভালো করতে পারতাম কি!
ঈদের সিনেমা দিয়ে মানুষ হলমুখী হচ্ছেন...
মনির আহমেদ: বিষয়টাতে একসঙ্গে আনন্দ, আবার দুঃখও পাচ্ছি। ২০১২ সালে আমার উধাও সিনেমা মুক্তি পেয়েছিল, এটার কেন্দ্রীয় চরিত্রে আমি ছিলাম। কিন্তু ওই সময়ে মানুষ হল বিমুখ হয়ে যান। একজন অভিনেতা হিসেবে যখন আমার সঠিক সময়, তখন এই ধাক্কা আমাকে ভুগিয়েছে। তবে অভিনেতার শেষ বলতে কিছু নেই, এখন দর্শক হলমুখী হচ্ছেন, এটা অনেক আনন্দের। পরিবার নিয়ে সিনেমা দেখার ঐতিহ্য ফিরে এসেছে, এটা অনেক অনুপ্রাণিত করছে। চাই এটা অব্যাহত থাকুক। আমি আশাবাদী, এর মধ্য দিয়ে আরও লগ্নিকারীরা ইন্ডাস্ট্রিতে আসবেন। আমি সব সময় তাঁদের কথা ভাবি, তাঁরা যদি নতুন কাজ না করেন, তাহলে আমি তো কাজ পাব না। প্রযোজক বাঁচলেই আমরা অভিনেতারা বাঁচব।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
মনির আহমেদ: ছোট পর্দার একক নাটক থেকে ধারাবাহিকের শুটিং করছি। সামনে তিনটি সিনেমার সঙ্গে কথা চলছে। তবে গোপনীয়তা থাকায় বলতে পারছি না। কিছু ওয়েব সিরিজ, ওয়েব ফিল্মের কথাবার্তা চলছে।